
ছবিঃ সংগৃহীত
বাহরাইন, কুয়েত, ইরাক—সব জায়গা থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরিয়ে নিচ্ছে নিজেদের কূটনৈতিক ও সামরিক পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—হঠাৎ কী এমন ঘটছে, যার কারণে মার্কিন পতাকা গুটিয়ে নেওয়ার সময় এসে গেছে? তবে কি পশ্চিমারা ভয় পেয়ে পিছু হটছে? একটি রাত, একটি নির্দেশ—আর হঠাৎ করেই বদলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক মানচিত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, “নন-এসেনশিয়াল”—অর্থাৎ অত্যাবশ্যক নয়—এমন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হবে ইরাক, বাহরাইন, কুয়েত এবং ইরবিলের মার্কিন দূতাবাস ও কনসুলেট থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামরিক বাহিনীর কমান্ড সেন্টার সেন্টকম-এর সর্বশেষ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিষয়টা শুধু এখানেই থেমে নেই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, “এটা হতে পারে একটি বিপদজনক জায়গা।” তার এই বক্তব্য কেবল কথার ঝলক নয়, বরং পুরো অঞ্চলজুড়ে ফেলছে অস্থিরতার ছায়া।
এই উত্তেজনার পেছনে কী ইরান? না কি ইসরায়েল দ্বন্দ্ব?
সিএনএন জানিয়েছে, গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্র নতুন কিছু গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে, যেখানে দেখা গেছে—ইসরায়েল সম্ভবত ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসরায়েলের আকাশপথে মিউনিশনের (বিমান ও অস্ত্রের) চলাচলসহ অনেক কিছুর দিকেই নজর রেখেছে মার্কিন গোয়েন্দারা।
যদিও হামলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরেই এ নিয়ে তীব্র মতবিরোধ চলছে।
এদিকে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—যদি পারমাণবিক আলোচনা ভেস্তে যায় এবং যুদ্ধ শুরু হয়, তবে মার্কিন ঘাঁটিগুলো আর নিরাপদ থাকবে না। তার ভাষ্য, ইরানের অস্ত্র এখন যুক্তরাষ্ট্রের সব ঘাঁটিতে পৌঁছানোর ক্ষমতা রাখে।
এই উত্তেজনার আবহে ঘটেছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফোনে কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্প সরাসরি নেতানিয়াহুকে বলেছেন—“ইরানের ওপর হামলার আলোচনা বন্ধ করো।” যদিও পরে তিনি বলেন, আলাপটি “খুব ভালো এবং মসৃণ” হয়েছে।
কিন্তু এমন সময়ে এমন নির্দেশ আসা—এটি কি যুদ্ধ প্রতিরোধের কৌশল, নাকি ট্রাম্প নিশ্চিত হয়েছেন যে ইরান আর কোনো সমঝোতায় আসতে চাচ্ছে না?
এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তিনি দিন দিন আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছেন। ইরান দেরি করছে এবং এটি খুবই দুঃখজনক বলেও তিনি মনে করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্য এখন যেন এক চাপা অগ্নিগর্ভ অবস্থায় রয়েছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতিক সরিয়ে নিচ্ছে—যার অর্থ তারা সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সেনা মুভমেন্টে প্রস্তুতির ছাপ স্পষ্ট।
আর মধ্যপ্রাচ্যের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—যুদ্ধ হলে তা শুধু একটি জায়গায় নয়, পুরো অঞ্চলে আগুন ছড়িয়ে দেবে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র এখন কূটনীতিকে দ্বিতীয় সারিতে ঠেলে দিয়েছে। তারা বিশ্বাস করছে না যে ইরান চুক্তির পথে এগোচ্ছে। তাই যুদ্ধ হলে প্রথমেই নিরাপদ রাখতে হবে আমেরিকান নাগরিকদের।
এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা আসলে এক প্রতীক, যেখানে বোঝানো হচ্ছে—যুদ্ধ কেবল রণাঙ্গনে নয়, কূটনৈতিক অঙ্গনেও বড় ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি হতে পারে।
একদিকে উত্তপ্ত কূটনৈতিক টেবিল, অন্যদিকে বিমান ঘাঁটিতে নীরব প্রস্তুতি—মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন সংকেত দিচ্ছে, শেষের শুরু কি? যেখানে নীরবতা মানেই কখনও কখনও যুদ্ধের পূর্বাভাস।
ইমরান