
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর শুক্রবার ভোররাতে চালানো সমন্বিত হামলায় নিহত হয়েছেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি, আরও এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং দুজন পরমাণু বিজ্ঞানী। একইসঙ্গে এবার ইরানের শীর্ষ সেনাপ্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। এই হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়েছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মহল।
ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় এই হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল নাতানজে অবস্থিত ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যা তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রেস টিভি এবং রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল এই হামলাটি ‘প্রি-এম্পটিভ স্ট্রাইক’ বা প্রতিরোধমূলক আক্রমণ হিসেবে চালিয়েছে। এতে মোহাম্মদ বাঘেরি এবং হোসেইন সালামি নিহত হন।
এদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন জানান, শুক্রবার সকালের অভিযানে প্রায় ২০০টি যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানের ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে পরমাণু ও সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত স্থাপনা ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবস্থান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সে লক্ষ্যেই আমাদের এই অভিযান। যারা ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছে, তারাও আমাদের লক্ষ্যবস্তু।’
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) নিশ্চিত করেছে যে, ইসরায়েলি হামলায় নাতানজ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা তেজস্ক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করছে।
ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফাজল শেকারচি অভিযোগ করে বলেন, এই হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে এবং ইসরায়েল বেসামরিক এলাকাও লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এ হামলার পর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘এই বর্বর হামলার জন্য ইসরায়েলকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ অপরদিকে ইসরায়েল দাবি করছে, ইরান ড্রোন হামলার মাধ্যমে পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর এটিই ইরানের ওপর সবচেয়ে বড় সামরিক হামলা, যা মধ্যপ্রাচ্যে একটি বিপজ্জনক যুদ্ধের দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে।
রাকিব