ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস: হার্ট, কিডনি ও লিভারে বিপজ্জনক প্রভাব

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১:১২, ১১ জুন ২০২৫

নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস: হার্ট, কিডনি ও লিভারে বিপজ্জনক প্রভাব

ছবিঃ সংগৃহীত

ডায়াবেটিস কেবলমাত্র রক্তে মাত্রা বৃদ্ধি নয়, এটি নিঃশব্দে আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ—লিভার, কিডনি এবং হার্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সচেতন না হলে এই রোগ ধীরে ধীরে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

কিডনিতে নীরব চাপ
ডায়াবেটিসে দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে উচ্চমাত্রায় শর্করা থাকলে কিডনির ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলির ওপর চাপ পড়ে। এতে কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় রোগী বুঝতেই পারে না, কিডনির ক্ষতি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি

যদি  গ্লুকোজের মাত্রা দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে তা চোখের রক্তনালীতে প্রভাব ফেলে এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নামক রোগ সৃষ্টি করে। এর ফলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, ঝাপসা দেখা, কিংবা অন্ধত্ব পর্যন্ত ঘটতে পারে।

নার্ভ ড্যামেজ বা নিউরোপ্যাথি

ডায়াবেটিসের কারণে শরীরের স্নায়ু (নার্ভ) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত। এর ফলে হাত ও পায়ের অনুভূতি কমে যেতে পারে, হঠাৎ ঝিনঝিনে ভাব বা অবশ লাগতে পারে। অনেক সময় রোগী নিজের পায়ের ক্ষত বা ইনফেকশন বুঝতেই পারে না।

দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা

ডায়াবেটিস ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে তোলে। যার ফলে রোগী সহজেই ইনফেকশন বা ভাইরাস-জনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং সেগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ক্ষত শুকাতে দীর্ঘ সময় লাগে।

লিভারের ওপর প্রভাব

অনিয়ন্ত্রিত রক্তে শর্করা লিভারে চর্বি জমাতে শুরু করে, যা ফ্যাটি লিভার রোগের সূচনা করে। এই অবস্থায় হেপাটাইটিস বা সিরোসিস হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস এবং লিভার ডিজঅর্ডারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কা

ডায়াবেটিস উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বা তার বেশি হয়ে যায়। অনেক সময় রোগী হার্ট অ্যাটাকের আগে থেকেই ঝুঁকিতে থাকেন, যা অজান্তেই তৈরি হয়।

সচেতনতা ও প্রতিরোধই মূল চাবিকাঠি

প্রারম্ভিক ধাপে ডায়াবেটিস নির্ণয় এবং নিয়মিত ব্লাড সুগার পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ কমানো, এবং পর্যাপ্ত ঘুম রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। কোনো পূর্বাভাস পেলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ডায়াবেটিস হলো এক নীরব ঘাতক, যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয়। তবে সময়মতো সচেতনতা, সঠিক জীবনযাপন ও চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগের ভয়াবহতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। আজ থেকেই সাবধান হওয়া জরুরি—আপনার হৃদয়, কিডনি এবং লিভারের সুস্থতা আপনার সচেতনতাতেই নির্ভর করছে।

পৃথী

×