
ছবি: সংগৃহীত
বাগদাদে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেখানে কর্মরত অপ্রয়োজনীয় দূতাবাস কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএস জানিয়েছে, ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে প্রস্তুত রয়েছে—এমন গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইরান এর প্রতিক্রিয়ায় ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিগুলোর ওপর হামলা চালাতে পারে।
এদিকে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা সাম্প্রতিক সময়ে স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ রোববার ওমানের মাসকটে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছে অ্যাক্সিওস।
একজন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, “আমরা সবসময় আমাদের দূতাবাসগুলোর কর্মী উপস্থিতি নিয়ে মূল্যায়ন করি। সাম্প্রতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমরা ইরাকে আমাদের মিশনের উপস্থিতি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
কেনেডি সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমেরিকান নাগরিকদের অঞ্চলটি ত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কারণ এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। দেখা যাক কী ঘটে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেব না।”
সোমবার ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। সংস্থাটি সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তেহরান পরমাণু তদন্তে সন্তোষজনক সহযোগিতা করছে না।
ইরান ওই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেছে, এটি পক্ষপাতদুষ্ট এবং ইসরায়েলের দেওয়া জাল নথির ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
এই সংকটপূর্ণ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ কতটা আসল উদ্বেগ, আর কতটা কৌশলগত বার্তা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পারমাণবিক আলোচনা ব্যর্থ হলে এবং যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ নিলে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকা মার্কিন সেনা সদস্যদের পরিবারের স্বেচ্ছা প্রস্থানের অনুমতি দিয়েছেন। এর মধ্যে কুয়েত ও বাহরাইনও রয়েছে।
বুধবার এক কংগ্রেস প্যানেলে পেন্টাগন জানিয়েছে, ইরান এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা পারমাণবিক অস্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।
ইরান অবশ্য বলেছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এবং তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না।
বৃটিশ রয়্যাল নেভির অধীনস্থ ম্যারিটাইম ট্রেড অপারেশনস সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে প্রভাব পড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বাগদাদ থেকে মার্কিন নাগরিক সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নের আশঙ্কায় তেলের দাম ৪ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়।
বর্তমানে ইরাকে প্রায় ২,৫০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর।
আসিফ