
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে রাখতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়। এই হামলার ফলে তেহরানের সঙ্গে সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তির পথ আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা। এ সময় ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে ষষ্ঠ দফা আলোচনা আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, যা রোববার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
“আমরা ইরানে হামলায় জড়িত নই”, মার্কো রুবিও
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও স্পষ্টভাবে জানান, ইসরায়েলের এই হামলা এককভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবে অংশ নেয়নি।
রুবিও বলেন, “আমরা ইরানে হামলায় জড়িত নই এবং আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো অঞ্চলটিতে থাকা মার্কিন সেনাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল আমাদের জানিয়েছে যে, তাদের আত্মরক্ষার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ তারা নিয়েছে।”
হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানান ট্রাম্প
হামলার ঠিক আগমুহূর্তে ট্রাম্প কূটনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “ইরানে হামলা সম্ভব হতে পারে।” তবে তেহরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করেছে।এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বৃহস্পতিবার জানায়, ইরান প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
“ইরান যেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বা জনবলকে লক্ষ্য না করে”, রুবিও
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কিছু কর্মীকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার একদিন পর রুবিও ইরানকে সতর্ক করে বলেন, “ইরান যেন কোনো অবস্থাতেই মার্কিন স্বার্থ বা কর্মীদের লক্ষ্য না করে। বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি।”
তবে রুবিওর বিবৃতিতে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি যে, ইসরায়েল পাল্টা হামলার মুখে পড়লে যুক্তরাষ্ট্র তাকে সহায়তা করবে কি না। অতীতে এটি ছিল ওয়াশিংটনের একটি প্রচলিত বক্তব্য।
ইরান ইস্যুতে নেতানিয়াহুর সঙ্গে মতবিরোধে ট্রাম্প
ইরান এবং গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ক্রমেই মতবিরোধে জড়াচ্ছেন ট্রাম্প। তিনি একদিকে তেহরানের সঙ্গে সমঝোতা চাচ্ছেন, অন্যদিকে গাজায় মানবিক সহায়তা ত্বরান্বিত করতে চাইছেন।সোমবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প জানান, তাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল ইরান। এরপর বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েলের হামলা “চলেই আসছে” বলে তিনি ধারণা করছেন।
তিনি আরও বলেন, “আমি সংঘাত এড়াতে চাই। তবে ইরানকে আরও কঠোরভাবে আলোচনায় আসতে হবে, তাদের এমন কিছু দিতে হবে যা তারা এখন পর্যন্ত দিতে রাজি নয়।”
ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান আঘাত হানলে মার্কিন বাহিনী ঝুঁকিতে পড়বে।যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র। এই বাস্তবতায় ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নিলে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত মার্কিন সেনা ও কূটনীতিকরা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
এ নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়ে যখন বুধবার ট্রাম্প জানান, “এই অঞ্চল এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে” এবং ইরানকে কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেওয়া হবে না এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এই উত্তেজনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ও তেহরান জানায়, তারা রোববার ওমানে আবারও আলোচনায় বসবে। এতে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির।তবে ইসরায়েলি হামলার পর পরিস্থিতি যে দ্রুত পাল্টে গেছে, তাতে আলোচনাটি আদৌ হবে কি না তা এখন অনিশ্চিত। উইটকফের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার কোনো উত্তর দেননি।
ইসরায়েলের একক হামলা ও যুক্তরাষ্ট্রের আত্মনিরপেক্ষ অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। পারমাণবিক সমঝোতার সম্ভাব্য আলোচনার আগেই সংঘাতের আঁচ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এখন ওয়াশিংটন-তেহরান-তেলআবিব ত্রিমুখী সম্পর্কের ভবিষ্যতের দিকে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কৌশল ও প্রতিক্রিয়াই ঠিক করে দেবে এই সংকট উত্তরণের পথ কতটা শান্তিপূর্ণ হবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/tr4uumd5
আফরোজা