ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষ আম উৎপাদনকারী দেশ কোনটি?

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১১ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:২১, ১১ জুন ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষ আম উৎপাদনকারী দেশ কোনটি?

ছবি: সংগৃহীত।

আম—যাকে ফলের রাজা বলা হয়—তার স্বাদ, রঙ ও ঘ্রাণে বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। গ্রীষ্মকালে টাটকা কাটা, স্মুদি বা ডেজার্টে ব্যবহৃত এই গ্রীষ্মপ্রধান ফল শুধু স্বাদের জন্য নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ—যেমন ভিটামিন এ ও সি, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থ। ফলে স্বাস্থ্য সচেতনদের খাদ্যতালিকায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

যদিও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও আমেরিকার নানা দেশে আমের চাষ হয়, তবে একটি দেশ সব দিক থেকে শীর্ষে। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো কোন দেশ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন করে, আরও কোন দেশগুলো উল্লেখযোগ্য উৎপাদক, এবং বিশ্বব্যাপী আমের বাজারের বর্তমান চিত্র।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ও অন্যান্য কৃষি সূত্র অনুযায়ী, বিশ্বে বছরে প্রায় ৫৫–৬০ মিলিয়ন মেট্রিক টন আম, গাব ও মেংস্টিন একত্রে উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ৪৮% এর বেশি উৎপাদন হয় দক্ষিণ এশিয়ায়, যেখানে ভারত একাই ৪০–৪৪% উৎপাদন করে। সংখ্যায় যা দাঁড়ায় বছরে প্রায় ২৫–২৬ মিলিয়ন টন, যা ভারতের অবস্থানকে বিশ্বে আম উৎপাদনে শীর্ষে রেখেছে।

ভারত: আম উৎপাদনে বিশ্বের নেতৃত্বে মূল তথ্য:

বার্ষিক উৎপাদন: প্রায় ২৫–২৬ মিলিয়ন টন (বিশ্বের অর্ধেকের কাছাকাছি), চাষের জমি: প্রায় ১৮ লাখ হেক্টর, গড় উৎপাদন: প্রতি হেক্টরে ৯.৬ টন (বিশ্ব গড়ের চেয়ে সামান্য কম)

কেন ভারত শীর্ষে:

আবহাওয়া ও ভূমি উপযোগী: উত্তর প্রদেশের উর্বর সমভূমি থেকে অন্ধ্র প্রদেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় সমভূমি পর্যন্ত বৈচিত্র্যময় জলবায়ু আম চাষে সহায়ক।

সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: আম শুধু ফল নয়—ধর্মীয় আচার, আচারে, আচার, লাচ্ছি ও আমরসসহ নানা রেসিপিতে এর ব্যবহার প্রচলিত।

বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ: প্রায় ১,৩০০ জাতের আম রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২০টি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হয়। আলফানসো, কেসর, তেঁতুলপুরি, দশেরি ও ল্যাংড়া বিশ্বখ্যাত।

সরকারি সহায়তা: উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গবেষণা, ভর্তুকি, কৃষি প্রশিক্ষণসহ নানা নীতিগত সহায়তা।

তবে এত বিপুল উৎপাদন হলেও ভারতের আম রপ্তানি তুলনামূলকভাবে কম—মোট উৎপাদনের মাত্র ১% এরও কম (~৫ লাখ টন), যার কারণ হলো সংরক্ষণ সমস্যা, দেশীয় চাহিদা এবং পরিবহন জটিলতা।

ইন্দোনেশিয়া: আঞ্চলিক চাহিদা মেটাতে শক্তিশালী অবস্থান।

চীন: আমদানি নয়, মূলত নিজেদের চাহিদা পূরণে উৎপাদন।

পাকিস্তান: চৌসা ও সিন্ধরি জাতের জন্য প্রসিদ্ধ।

মেক্সিকো: আমেরিকা ও কানাডার প্রধান রপ্তানিকারক।

ব্রাজিল: ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে আম রপ্তানি করে।

চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে: স্বাস্থ্যসচেতনতা, স্মুদি ও এক্সোটিক ফলের জনপ্রিয়তা আমের চাহিদা বাড়াচ্ছে।

বাণিজ্য বিস্তার: ভারত, থাইল্যান্ড প্রক্রিয়াজাত আম রপ্তানিতে এগিয়ে; মেক্সিকো ও ব্রাজিল টাটকা আম রপ্তানিতে শক্ত অবস্থানে।

সরবরাহের বৈচিত্র্য: ভারতনির্ভরতা কমাতে দেশগুলো মেক্সিকো, পেরু, ব্রাজিল ও থাইল্যান্ড থেকে আম আমদানি করছে।

মান ও টেকসই চাষ: জৈব ও সংরক্ষণবিহীন আমের চাহিদা বাড়ছে। রপ্তানি উপযোগী শীতল সংরক্ষণ ও উৎপাদন প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে।

ভারত: রপ্তানি বাড়াতে পরবর্তী ধাপ হলো—শীতল শৃঙ্খল উন্নয়ন ও নষ্ট হওয়া কমানো।

মেক্সিকো ও ব্রাজিল: রপ্তানিতে শক্তিশালী, শীতল সংরক্ষণের সুযোগ বাড়ানো দরকার।

ইন্দোনেশিয়া ও চীন: বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী: জলবায়ু পরিবর্তন, পোকামাকড় ও ট্রেড নীতির কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ চাপে পড়ছে।

ভারত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন করে—বছরে প্রায় ২৫ মিলিয়ন টনের বেশি। তবে রপ্তানির ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়া, চীন, পাকিস্তান, মেক্সিকো ও ব্রাজিল বৈশ্বিক বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

স্বাস্থ্য ও এক্সোটিক ফলের জনপ্রিয়তায় বিশ্বজুড়ে আমের চাহিদা বাড়ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে মোট উৎপাদন ৬৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের ঐতিহ্য ও উৎপাদন ক্ষমতা একদিকে, অন্যদিকে অন্যান্য দেশের রপ্তানি কৌশল মিলে বিশ্ববাজারে আমের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবে উজ্জ্বল ও প্রসারমান।

সূত্র: https://h1.nu/146tF

মিরাজ খান

×