
ছবি: প্রতীকী
যেসব স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস ও সুগার-ফ্রি পানীয় তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়, সেগুলোতে ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় মিষ্টিকারক (sweetener) ইরিথ্রিটল মানুষের হঠাৎ স্ট্রোক ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছে এক গবেষণা।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো ইউনিভার্সিটি, বোল্ডারের গবেষকরা মানুষের মস্তিষ্কের রক্তনালীর কোষের (endothelial cells) উপর ইরিথ্রিটলের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। তারা জানান, যেসব মাত্রায় ইরিথ্রিটল ব্যবহার করা হয় ডায়েট সোডা বা সুগার-ফ্রি পানীয়তে, সেই মাত্রায় এই রাসায়নিক মস্তিষ্ক কোষে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।
গবেষণার প্রধান গবেষক গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী অবার্ন বেরি বলেন, “ইরিথ্রিটলকে স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে সুগার-ফ্রি প্রোডাক্টে ব্যবহারের প্রচলন থাকলেও, এটি রক্তনালীর স্বাস্থ্যের উপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা আরও গভীরভাবে বুঝতে হবে।”
নতুন এই গবেষণাটি এমন এক সময়ে প্রকাশ পেল যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের হার অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। সিডিসি (CDC) জানিয়েছে, ২০১১ সালের পর থেকে ৪৫ বছরের নিচের মানুষের মধ্যে স্ট্রোকের হার বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
কোন কোন পণ্যে থাকে এই মিষ্টিকারক?
ইরিথ্রিটল ব্যবহার করা হয় বহুল প্রচলিত ‘সুগার-ফ্রি’ পণ্যগুলোর মধ্যে—যেমন Vitaminwater Zero, Monster Energy Zero, Arizona Iced Tea, এবং Quest প্রোটিন বার। এটি Truvia নামক একটি মিষ্টিকারকেও পাওয়া যায়, যা অনেকেই চায়ে-কফিতে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেন।
ইরিথ্রিটল সাধারণ চিনির তুলনায় ৭০% মিষ্টি হলেও এতে ক্যালোরি থাকে মাত্র ৬%। এটি শরীরে সহজে হজম হয় না এবং সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। তবে কিছু অংশ শরীরে জমে থাকতে পারে, যা সময়ের সাথে শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণায় কী দেখা গেছে?
গবেষণায় দেখা গেছে, ইরিথ্রিটলের সংস্পর্শে আসার পর মস্তিষ্কের রক্তনালীর কোষগুলো ৭৫% বেশি ক্ষতিকর যৌগ তৈরি করে, যা ওই কোষ এবং আশেপাশের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। একইসঙ্গে কোষগুলো এমন প্রোটিনের উৎপাদন প্রায় ২০% কমিয়ে দেয়, যা রক্তনালীর প্রসারণে সাহায্য করে এবং জমাট বাঁধা রক্তের ঝুঁকি কমায়।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, এই মিষ্টিকারক t-PA নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, যেটি রক্ত জমাট বাঁধা ঠেকাতে ও স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
গবেষকেরা তাদের প্রতিবেদনে লিখেছেন, “ইরিথ্রিটল ইসকেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যা ঘটে যখন মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালী ব্লক হয়ে যায় এবং অক্সিজেন প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।”
তবে গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে
গবেষণাটি মানবদেহের বাইরে, ল্যাবরেটরিতে করা হয়েছে। ফলে মানবদেহে একই মাত্রায় প্রভাব পড়বে কি না, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। এতে কোষগুলোকে একবারে ৩০ গ্রাম ইরিথ্রিটলের সংস্পর্শে আনা হয়েছিল, যা একটি ডায়েট ড্রিঙ্কে থাকা পরিমাণের চেয়ে কিছুটা বেশি।
তবে সাধারণত Monster Zero-তে ইরিথ্রিটল থাকে ২ গ্রামের মতো, এবং Vitaminwater Zero-তেও ৫ গ্রামের কম। Quest প্রোটিন বারে ইরিথ্রিটলের পরিমাণ গড়ে ৫ গ্রাম।
আগের গবেষণাগুলোর সঙ্গেও মিল
২০২৩ সালে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক পরিচালিত এক গবেষণায় ৪ হাজার মানুষের উপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, যারা নিয়মিত ইরিথ্রিটল গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি।
সেই গবেষণাতেও দেখা যায়, ইরিথ্রিটল রক্তে জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া (platelet activation) সক্রিয় করে এবং জমাট বাঁধা রক্তকণিকা তৈরি করে—যা স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়।
তরুণদের জন্য বার্তা
বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্ট্রেস, অবসাদ, মাদকের ব্যবহার, এবং অসচল জীবনযাপন—এসব কারণেই স্ট্রোক ও হৃদ্রোগ বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে মোটা হওয়া, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসও বড় ভূমিকা রাখছে। এর মধ্যে ইরিথ্রিটলের মতো বিকল্প চিনির ঝুঁকি যদি বাড়ায়, তাহলে খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে—এমনটাই মত বিজ্ঞানীদের।
সূত্র: ডেইলি মেইল।
রাকিব