
সংগৃহীত
শিশুদের প্রশংসা করলে তারা নষ্ট হয়ে যায় এমন ধারণা বহু অভিভাবকের মধ্যে প্রচলিত। কিন্তু বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা এ ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। তাদের মতে, শিশুর ইতিবাচক আচরণ যদি গুরুত্ব দিয়ে প্রশংসা করা হয়, তাহলে তারা তা আরও বেশি করতে উৎসাহিত হয়। শুধু সাধারণ প্রশংসা নয়, সুনির্দিষ্ট প্রশংসাই শিশুদের আত্মবিশ্বাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, অভিভাবকরা অনেক সময় ভালো কাজের পরও সন্তানের প্রশংসা করতে ভয় পান। তারা ভাবেন, এতে শিশুর ‘অহংকার’, ‘অভিমান’ বা আত্মকেন্দ্রিকতা তৈরি হবে। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা ভুল ধারণা।
কেন প্রশংসা জরুরি?
- শিশুর মানসিক বিকাশে "ইতিবাচক পুনর্ব্যবহার (Positive Reinforcement)" একটি স্বীকৃত কৌশল। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী বি.এফ. স্কিনারের গবেষণাও প্রমাণ করে, প্রশংসা বা উৎসাহ শিশুর আচরণ গঠনে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে।
- বিশেষজ্ঞরা তুলনা করেন, শিশু গাছের মতো - শুধু শুকিয়ে গেলে পানি দিলে বাঁচে না, ফুল ফোটার সময়ও ভালোবাসা ও যত্ন প্রয়োজন। সেভাবেই ভালো কাজের প্রশংসাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অভিভাবকরা কেন ভয় পান?
- অনেক অভিভাবক মনে করেন, বেশি প্রশংসা করলে শিশু আত্মতুষ্টি বা অহংকারী হয়ে যাবে। তবে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, “আপনি যদি বলেন, ‘তুমি বোনকে সাহায্য করলে, এটা খুব ভালো কাজ’, এতে কি শিশুর অহংকার বাড়ে নাকি সহানুভূতি শেখে?”
- তারা পরামর্শ দেন, সাধারণ বা অতিরঞ্জিত প্রশংসার চেয়ে সুনির্দিষ্ট, কাজভিত্তিক মন্তব্য*বেশি কার্যকর। যেমন:
- "তুমি নিজে থেকেই বই গুছিয়ে রেখেছ, এটা খুব দারুণ হয়েছে।”
- “তুমি সবচেয়ে ভালো ছেলে/মেয়ে।”
প্রশংসার মাধ্যমে শিশু কি শিখে?
- ১. নিজের কাজের গুরুত্ব বোঝে
- ২. ভালো আচরণ করার উৎসাহ পায়
- ৩. অন্যদের সম্মান করতে শেখে
- ৪. নিজের ওপর আস্থা তৈরি হয়
কীভাবে প্রশংসা করবেন?
- কাজের প্রশংসা করুন, স্বভাব বা ব্যক্তিত্বের নয়।
- চেষ্টা ও মনোযোগের মূল্য দিন, শুধু সাফল্যের নয়।
- পুরস্কারের বদলে মৌখিক প্রশংসায় গুরুত্ব দিন।
- প্রশংসা যেন সত্যিকারের হয়, মেকি না।
সন্তানের আচরণ গঠনে প্রশংসা একটি মৌলিক উপাদান। ভয় বা দ্বিধায় পড়ে এই সুযোগ নষ্ট করা উচিত নয়। বরং ভালো আচরণকে উৎসাহ দিলে, তা শুধু পরিবারে নয়, সমাজেও ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
হ্যাপী