
দীর্ঘায়ু শুধু জিনগত নয়, বরং স্বাস্থ্যব্যবস্থা, জীবনযাপন ও সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রোসপেক্টস-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বের যেসব দেশে মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি, তার তালিকা প্রকাশ পেয়েছে।
বিশ্বের গড় আয়ু বর্তমানে প্রায় ৭৩ বছর হলেও, কিছু দেশের মানুষ গড়ে ৮৫ বছরের বেশি বাঁচছেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ গড় আয়ুর শীর্ষ ২৫টি দেশের তালিকা ও বিশ্লেষণ।
শীর্ষে মোনাকো: গড় আয়ু ৮৬.৫ বছর
তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইউরোপের ক্ষুদ্র ও ধনী রাষ্ট্র মোনাকো, যেখানে মানুষের গড় আয়ু ৮৬.৫ বছর। মোনাকোর নারীদের গড় আয়ু ৮৮.৬ বছর, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
এরপরের স্থানগুলো দখল করে নিয়েছে সান মারিনো (৮৫.৮ বছর) ও হংকং (৮৫.৬ বছর)।
জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর সহ চারটি এশিয়ান দেশ রয়েছে শীর্ষ ১০-এ।
📊 শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা (২০২৫):
র্যাংক | দেশ | পুরুষদের গড় আয়ু | নারীদের গড় আয়ু | মোট গড় আয়ু |
---|---|---|---|---|
১ | মোনাকো 🇲🇨 | ৮৪.৬ | ৮৮.৬ | ৮৬.৫ বছর |
২ | সান মারিনো 🇸🇲 | ৮৪.৩ | ৮৭.২ | ৮৫.৮ বছর |
৩ | হংকং 🇭🇰 | ৮৩.০ | ৮৮.৩ | ৮৫.৬ বছর |
৪ | জাপান 🇯🇵 | ৮১.৮ | ৮৭.৯ | ৮৪.৮ বছর |
৫ | দক্ষিণ কোরিয়া 🇰🇷 | ৮১.৩ | ৮৭.৩ | ৮৪.৪ বছর |
৬ | আন্দোরা 🇦🇩 | ৮২.৩ | ৮৬.২ | ৮৪.২ বছর |
৭ | সুইজারল্যান্ড 🇨🇭 | ৮২.২ | ৮৬.০ | ৮৪.১ বছর |
৮ | অস্ট্রেলিয়া 🇦🇺 | ৮২.৩ | ৮৫.৫ | ৮৪.১ বছর |
৯ | ইতালি 🇮🇹 | ৮১.৮ | ৮৫.৯ | ৮৩.৯ বছর |
১০ | সিঙ্গাপুর 🇸🇬 | ৮১.৪ | ৮৬.৪ | ৮৩.৯ বছর |
অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণ:
-
ইউরোপ: ২৫টি দেশের মধ্যে ১৬টি ইউরোপের। উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও জীবনমানের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের আয়ু বেশি।
-
এশিয়া: জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং ও সিঙ্গাপুর—এশিয়ার চার দেশ রয়েছে শীর্ষ তালিকায়।
-
অস্ট্রেলিয়া: একমাত্র অ-এশিয়া ও অ-ইউরোপীয় দেশ হিসেবে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া (৮৪.১ বছর)।
নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি আয়ু পান
সবগুলো দেশেই নারীদের গড় আয়ু পুরুষদের তুলনায় বেশি।
গড় ব্যবধান প্রায় ৪ বছর, তবে কিছু দেশে এই ফারাক আরও বেশি:
-
জাপান: ৬.১ বছর
-
দক্ষিণ কোরিয়া: ৬.০ বছর
-
ফ্রান্স: ৫.৬ বছর
বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের দীর্ঘায়ুর কারণ মূলত জৈবিক ও আচরণগত। পুরুষদের তুলনায় নারীরা কম ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে লিপ্ত হন এবং শিশুকালেই ছেলেদের মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি।
দীর্ঘায়ু শুধু উন্নত চিকিৎসা নয়, বরং সচেতন জীবনযাপন, মানসিক স্বস্তি, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও সামাজিক নিরাপত্তার ফল।
এই তথ্যচিত্র আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আয়ু বাড়াতে হলে উন্নয়ন শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং স্বাস্থ্য ও মানবিক উন্নয়নও জরুরি।
আঁখি