
ছবি: সংগৃহীত
যকৃত বা লিভার মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা দেহের বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশন ও মেটাবলিজমে সহায়তা করে। তবে বর্তমান সময়ে অ্যালকোহলবিহীন ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) একটি উদ্বেগজনক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু সাধারণ ফল নিয়মিত খেলে প্রাকৃতিকভাবে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু ফলে থাকা পলিফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান লিভারে চর্বি জমা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। নিচে এমন পাঁচটি সহজলভ্য ফলের কথা জানানো হলো, যা নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত হতে পারে।
১. আপেল
আপেল সমৃদ্ধ পেকটিন ও পলিফেনলে, যা হজমতন্ত্র থেকে বিষাক্ত উপাদান ও কোলেস্টেরল দূর করে যকৃতের উপর চাপ কমায়। এতে থাকা quercetin ও catechin অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, লিভার কোষকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়।
উপরন্তু, আপেল ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায়, যা NAFLD-এর প্রধান কারণগুলোর একটি। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি আপেল খাওয়া ব্যক্তিদের ফ্যাটি লিভার হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২২% কম।
২. ব্লুবেরি
ব্লুবেরি-তে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট anthocyanin, যা লিভার কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। এটি ইনসুলিন রেসপন্স উন্নত করে এবং লিভার ফাইব্রোসিসের ঝুঁকি কমায়।
যাদের ফ্যাটি লিভার হওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য ব্লুবেরি একটি কার্যকর ফল হতে পারে।
৩. লেবু
লেবুতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন C, যা glutathione উৎপাদনে সাহায্য করে—এটি লিভারের প্রধান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। লেবুর রস ও খোসায় থাকা D-Limonene নামক যৌগ লিভারে চর্বি ও কোলেস্টেরল জমা কমাতে সহায়ক।
এছাড়া, লেবু পিত্ত নিঃসরণ বাড়ায়, যা চর্বি হজমে সহায়তা করে এবং ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করে।
৪. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডোতে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় ও ফ্যাট মেটাবলিজম উন্নত করে। এটি লিভারে চর্বি জমা কমিয়ে প্রদাহ প্রতিরোধে কার্যকর।
এছাড়া এতে থাকা glutathione, ভিটামিন C, E, পটাশিয়াম এবং ফলেট লিভার কোষ রক্ষায় সহায়তা করে।
৫. পেঁপে
পেঁপেতে রয়েছে ভিটামিন C, A এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস—যা লিভার ডিটক্স ও প্রদাহ কমাতে কাজ করে। এতে থাকা papain নামক এনজাইম হজমে সহায়তা করে এবং চর্বি হ্রাস করে।
এছাড়া পেঁপে খেলে LDL কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমে, যা ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে ফলমূল বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শুধু ওষুধ নয়, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও নিয়মিত এসব ফল খাওয়া লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শে খাদ্যতালিকায় এই ফলগুলো যুক্ত করা যেতে পারে।
মুমু