ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৫০ পেরোনো পুরুষদের জন্য সতর্কবার্তা:প্রস্টেট ক্যান্সার ঠেকাতে এড়িয়ে চলুন এই ৫ খাবার

প্রকাশিত: ১১:২৮, ২৯ মে ২০২৫; আপডেট: ১১:৩৩, ২৯ মে ২০২৫

৫০ পেরোনো পুরুষদের জন্য সতর্কবার্তা:প্রস্টেট ক্যান্সার ঠেকাতে এড়িয়ে চলুন এই ৫ খাবার

চর্ম ক্যানসারের পর পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সারই সবচেয়ে সাধারণ। বয়স ৫০ পেরোলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এটি এক মারাত্মক ও অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী রোগ, যা পুরুষের প্রজনন অঙ্গ ‘প্রস্টেট গ্রন্থি’-তে শুরু হয়। মূত্রথলির ঠিক নিচে অবস্থিত এই ছোট গ্রন্থিতে ক্যান্সার কোষ জন্ম নিলে শরীরে নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বয়স, বংশগতি ও জীবনধারার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসও এই রোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু নির্দিষ্ট খাবার প্রস্টেট ক্যান্সারের  ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের এসব খাবার থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

রেড মিট ও প্রক্রিয়াজাত মাংস
গরু, খাসি ও শুকরের মাংস ছাড়াও সসেজ, হট ডগ, বেকন ও ডেলি মিট জাতীয় প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রস্টেট ক্যান্সারের  ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণা বলছে, উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা এই ধরনের মাংসে ‘হেটারোসাইক্লিক অ্যামাইন’ (HCA) নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক উৎপন্ন হয়, যা কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যানসার কোষের জন্ম দিতে পারে। খুব বেশি রেড মিট খাওয়া উচিত নয়। খেতে হলে তা মাসে এক বা দুইবারের বেশি নয় এবং ভাজার বদলে গ্রিল বা স্টিম পদ্ধতিতে রান্না করাই ভালো।

চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য
ফুল-ক্রিম দুধ, ঘন দই, মাখন, পনির বা ক্রীমের মতো চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও হরমোন থাকে, যা প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ফুল-ক্রিম দুধ খেলে আগ্রাসী প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই এসবের পরিবর্তে লো-ফ্যাট বা ফ্যাট-ফ্রি দুধ, দই বা দুধের বিকল্প যেমন বাদাম, ওট বা সয়া দুধ বেছে নেওয়া নিরাপদ।

স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট
ডাক্তারদের মতে, যেকোনো প্যাকেটজাত খাবার, যা মাংস, চিজ বা মাখনের মতো উপাদান দিয়ে তৈরি, সেগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ট্রান্স ফ্যাট থাকে বিস্কুট, প্যাস্ট্রি, ফাস্ট ফুড, ফ্রাইড স্ন্যাকস ইত্যাদিতে। এসব ফ্যাট শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এর বদলে জলপাই তেল, বাদাম, অ্যাভোকাডো, বীজ ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ খান। চাইলে ঘরে তৈরি ঘি ব্যবহার করতে পারেন, তবে পরিমাণে সংযম থাকা জরুরি।

চিনি ও চিনি-সমৃদ্ধ খাবার
চিনি স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই উপকারি নয়। বরং অতিরিক্ত চিনি খেলে স্থূলতা বাড়ে, যা প্রস্টেট ক্যান্সারের অন্যতম বড় ঝুঁকি। কোমল পানীয়, মিষ্টি, কেক, মিঠাই কিংবা প্যাকেটজাত জুস রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় ও ওজন বৃদ্ধি করে। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমলে প্রদাহ ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, যা ক্যানসারের কারণ হতে পারে। ফলের বদলে ফলের রস নয়, আসল ফল খান। বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন, যাতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

অতিরিক্ত অ্যালকোহল
অতিরিক্ত মদ্যপানে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায় এবং তা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের  ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণা বলছে, অ্যালকোহল শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে ও প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা প্রস্টেটের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চিকিৎসকদের মতে, নিরাপদ মাত্রার অ্যালকোহল বলে কিছু নেই। তাই মদ্যপান একেবারে বাদ দেওয়াই ভালো। একান্তই খেতে হলে পরিমিত মাত্রায় ও ধীরে ধীরে অভ্যাস ছাড়ার পথে এগোন।

প্রস্টেট ক্যানসার কী?
প্রস্টেট ক্যান্সার পুরুষদের প্রজনন অঙ্গ ‘প্রস্টেট গ্রন্থি’-তে সৃষ্ট একটি সাধারণ ক্যানসার। এই গ্রন্থি বীর্য উৎপাদনের তরল তৈরি করে। যখন প্রস্টেটের কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যায়, তখন ক্যানসার তৈরি হয়। অনেক প্রস্টেট ক্যানসার ধীরে ধীরে বাড়ে এবং দীর্ঘদিন তেমন উপসর্গ দেয় না, তবে কিছু আক্রমণাত্মক ক্যান্সার দ্রুত হাড় বা লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা ছাড়া ধরা পড়ে না। নিয়মিত PSA ব্লাড টেস্ট ও ডিজিটাল রেক্টাল পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতে হলে বায়োপসি করতে হয়।

উপসর্গ যেভাবে ধরা পড়ে
প্রথম পর্যায়ে প্রস্টেট ক্যান্সারের তেমন কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে পরবর্তী পর্যায়ে ঘন ঘন মূত্রত্যাগ, বিশেষ করে রাতে ঘুম ভেঙে মূত্র ত্যাগ, প্রস্রাবের শুরু বা থামাতে সমস্যা, দুর্বল বা ছিঁড়ে ছিঁড়ে প্রস্রাব আসা, মূত্রাশয় ঠিকমতো খালি না হওয়ার অনুভূতি এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এর পাশাপাশি প্রস্রাব বা বীর্যে রক্ত দেখা, মূত্রত্যাগ বা বীর্যপাতের সময় জ্বালাপোড়া, কিংবা পিঠ, কোমর বা পেলভিক অঞ্চলে স্থায়ী ব্যথা থাকলেও তা ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে।

প্রস্টেট ক্যান্সার রোধে সচেতন জীবনধারা, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ জরুরি। যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সচেতন থাকলে আগাম ধরা পড়ে অনেক বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে, তবে জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন এনে প্রস্টেট ক্যান্সারের মতো বিপজ্জনক রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। এখনই নিজের খাদ্য তালিকায় নজর দিন, অসচেতনতা নয়, নিন স্বাস্থ্যকর সিদ্ধান্ত।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/yc6mypns

আফরোজা

×