ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভিটামিন ডি কাজে না লাগলে লাভ কী? জেনে নিন কোন খাবারগুলো বাধা সৃষ্টি করে!

প্রকাশিত: ১৪:৩৮, ২৯ মে ২০২৫; আপডেট: ১৪:৩৮, ২৯ মে ২০২৫

ভিটামিন ডি কাজে না লাগলে লাভ কী? জেনে নিন কোন খাবারগুলো বাধা সৃষ্টি করে!

ছবি: সংগৃহীত

 

ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হলেও, মানবদেহের সঠিক কার্যকারিতার জন্য এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে ভিটামিন ডি শরীরকে রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে, হাড় মজবুত রাখে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে। সূর্যের আলো থেকে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় বলেই একে ‘সানশাইন ভিটামিন’ বলা হয়। অনেকেই পরিপূরক হিসেবে ভিটামিন ডি গ্রহণ করেন কিংবা নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন এর ঘাটতি পূরণে।

তবে জানেন কি, কিছু নির্দিষ্ট খাবার শরীরে ভিটামিন ডি শোষণের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে? তাই কোন খাবারগুলো ভিটামিন ডি গ্রহণের সময় এড়িয়ে চলা উচিত তা জানা খুব জরুরি। অবশ্যই এই খাবারগুলো সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে না, তবে কখন ও কীভাবে খাচ্ছেন সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। নিচে এমনই কিছু খাবার তুলে ধরা হলো যা ভিটামিন ডি’র শোষণ ব্যাহত করে:

১. প্রক্রিয়াজাত খাবার
প্রসেস করা খাবার, সফট ড্রিংকস এবং প্যাকেটজাত খাবারে অতিরিক্ত ফসফেট থাকে, যা ক্যালসিয়ামের কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটায়। যেহেতু ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম শরীরে একসঙ্গে কাজ করে, তাই অতিরিক্ত ফসফেট ভিটামিন ডি’র কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এতে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এমনকি যথেষ্ট ভিটামিন ডি গ্রহণের পরও। এছাড়াও এসব খাবারের সংরক্ষণ উপাদান ও কৃত্রিম উপাদান যকৃত ও কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যেগুলো ভিটামিন ডি কে সক্রিয় রূপে রূপান্তর করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্যকর ভিটামিন ডি শোষণের জন্য প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া কমিয়ে আনাই ভালো।

২. অ্যালকোহল
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন ভিটামিন ডি’র শোষণকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে। অ্যালকোহল যকৃতের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, আর যেহেতু যকৃত ভিটামিন ডি কে সক্রিয় রূপে রূপান্তর করে, তাই এটি ভিটামিন ডি প্রসেস করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। নিয়মিত অ্যালকোহল গ্রহণ অন্ত্রের দেয়ালে ক্ষত সৃষ্টি করে, ফলে অন্যান্য পুষ্টির মতো ভিটামিন ডি শোষণেও বাধা সৃষ্টি হয়। তাই যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাদের ভিটামিন ডি’র মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

৩. ক্যাফেইন
ক্যাফেইন সাধারণত চা ও কফিতে পাওয়া যায় এবং এটি ভিটামিন ডি শোষণে বাধা সৃষ্টি করে। যদিও পরিমিত পরিমাণে চা-কফি নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যা পরোক্ষভাবে ভিটামিন ডি’র হাড় শক্ত করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। তাই যদি আপনি প্রতিদিন একাধিকবার কফি বা গাঢ় চা পান করেন, তবে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের সময় এগুলো এড়িয়ে চলুন বা অন্তত সময় রেখে খান।

৪. উচ্চ অক্সালেটযুক্ত খাবার
যেসব খাবারে অক্সালেট বেশি থাকে— যেমন পালংশাক বা বিট শাক— সেগুলো ক্যালসিয়ামের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে যায়, ফলে শরীর ক্যালসিয়াম ঠিকমতো শোষণ করতে পারে না। যেহেতু ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ভিটামিন ডি একসঙ্গে কাজ করে, তাই এতে ভিটামিন ডি’র কার্যকারিতাও কমে যায়। তবে এসব খাবার পুরোপুরি বাদ না দিয়ে, ভিটামিন ডি বা ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে না খাওয়াই ভালো। যেমন, পালং পনির খেলে একদিকে পনির থেকে ক্যালসিয়াম মিলছে, আবার পালং থেকে অক্সালেট— যা একে অপরকে বাধা দিচ্ছে। তাই এই দুই ধরনের খাবার একসাথে না খাওয়াই উত্তম।

৫. চর্বিহীন বা খুব কম চর্বিযুক্ত খাবার
ভিটামিন ডি একটি ফ্যাট-সল্যুবল ভিটামিন অর্থাৎ এটি শরীরে শোষিত হতে চর্বির প্রয়োজন হয়। তাই অতিরিক্ত ফ্যাট-মুক্ত বা কম চর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাসে শরীর প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি শোষণ করতে পারে না। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন— অ্যাভোকাডো, বাদাম, বীজ, ঘি, জলপাই তেল ইত্যাদি থাকলে শরীর সহজেই ভিটামিন ডি শোষণ করতে পারে। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট বা ফুড সোর্স গ্রহণের সময় এমন স্বাস্থ্যকর ফ্যাটযুক্ত খাবার অবশ্যই রাখুন।

সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন—ভিটামিন ডি’র সঠিক শোষণই সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

আবির

×