ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন? হার্ভার্ড চিকিৎসক জানালেন যে ৫টি খাবারেই মিলবে উপশম!

প্রকাশিত: ১১:১০, ২৭ মে ২০২৫; আপডেট: ১১:১১, ২৭ মে ২০২৫

উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন? হার্ভার্ড চিকিৎসক জানালেন যে ৫টি খাবারেই মিলবে উপশম!

বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন। ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে পরিচিত এই অবস্থা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি বিকলসহ বহু প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা শুধু প্রয়োজনই নয়, তা জীবন বাঁচানোর মতো জরুরি পদক্ষেপও বটে।

সুস্থ ডায়েট, নিয়মিত শরীরচর্চা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ সেবনের পাশাপাশি এমন কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত খেলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ড থেকে প্রশিক্ষিত ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ড. সৌরভ সেঠি সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রাম প্ল্যাটফর্মে এমনই পাঁচটি ফল ও খাবারের কথা জানিয়েছেন, যেগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক।

কলা
কলা পটাশিয়ামের একটি চমৎকার উৎস। এই খনিজ উপাদান কিডনিকে অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে, যা উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম মূল কারণ। ড. সেঠির মতে, কলা রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। স্মুদি, দইয়ের সঙ্গে কিংবা নাস্তার অংশ হিসেবে প্রতিদিনের ডায়েটে কলা যোগ করাই হতে পারে একটি সহজ সমাধান।

ডার্ক চকলেট
হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি! মাঝেমধ্যে খাওয়া ডার্ক চকলেট শুধু জিভের স্বাদ মেটায় না, বরং উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও কার্যকর। এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম ও ফ্ল্যাভানলস শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনে সাহায্য করে, যা রক্তনালিকে শিথিল করে। ২০১০ সালের একটি মেটা-অ্যানালাইসিস গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্ল্যাভানল সমৃদ্ধ কোকো পণ্য (যেমন ডার্ক চকলেট) প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তচাপ কিছুটা কমাতে পারে। তবে অবশ্যই এমন ডার্ক চকলেট বেছে নিতে হবে যার কোকো কনটেন্ট অন্তত ৭০ শতাংশ এবং খেতে হবে সীমিত পরিমাণে।

বিটরুট
বিট বা বিটরুট উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অসাধারণ একটি খাবার। এতে থাকা প্রাকৃতিক নাইট্রেট শরীরে গিয়ে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়, যা রক্তনালী প্রসারিত করে এবং রক্তপ্রবাহ উন্নত করে। বিটরুট কাঁচা খাওয়া যেতে পারে সালাদে, স্মুদিতে কিংবা জুস হিসেবে। আবার বেক করা বিট কিংবা বিটরুট পাউডারও হতে পারে ভালো বিকল্প।

বেদানা
বেদানায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, বিশেষত পলিফেনলস, যা শরীরে অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম (ACE) এর মাত্রা কমিয়ে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ২০১৭ সালের একটি পর্যালোচনামূলক গবেষণায় বলা হয়েছে, বেদানার রস শর্ট ও লং টার্ম উভয় ক্ষেত্রেই রক্তচাপ হ্রাসে কার্যকর। এই উপকারিতার পেছনে রয়েছে বেদানার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-অ্যাথেরোস্ক্লেরোটিক গুণাবলি, যা সামগ্রিকভাবে হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

আদা
রান্নায় বহুল ব্যবহৃত আদা একদিকে যেমন স্বাদ বাড়ায়, তেমনি উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও সহায়ক। এটি প্রাকৃতিক ‘ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার’ হিসেবে কাজ করে, ফলে রক্তনালী শিথিল হয় ও রক্তচাপ হ্রাস পায়। আদা চায়ের সঙ্গে, রান্নায় কিংবা স্মুদিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত আদা খেলে কারও কারও পেটে অস্বস্তি হতে পারে, তাই পরিমাণে মেপে খাওয়াই ভালো।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু পরামর্শ
শুধু খাবারেই সীমাবদ্ধ না থেকে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন—এটি সহজ হলেও অত্যন্ত কার্যকর। শরীরচর্চার মাধ্যমে ফিটনেস ধরে রাখলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। একই সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসে মনোযোগী হতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, লিন প্রোটিন ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছের পাশাপাশি সুপারফুডকে খাদ্যতালিকায় জায়গা দিন। এড়িয়ে চলুন অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার।

উচ্চ রক্তচাপ মোকাবেলায় এই খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতি আপনাকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ বা পরিবর্তন করা যাবে না।


উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি আপনার হাতেই। কিছু সহজ অথচ কার্যকর খাদ্যাভ্যাস ও সচেতন জীবনচর্চা হৃদ্‌যন্ত্রকে রাখবে সুস্থ, নিরাপদ। তাই আজ থেকেই খাবারের তালিকায় যুক্ত করুন এসব উপকারী উপাদান এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন জীবন থাকবে অনেক বেশি সুরক্ষিত।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/yc7fz4vr

আফরোজা

×