
হার্ট অ্যাটাক! শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বুকে ব্যথায় কাতর কোনো পুরুষের ছবি। অথচ বাস্তবতা হলো, হৃদরোগ শুধু পুরুষদের একার সমস্যা নয়—নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এখন হৃদরোগ। আমেরিকার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি দুইজন নারীর মধ্যে একজন হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, যার মধ্যে অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের সঠিক লক্ষণ না জানার কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ পুরুষদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। অনেক সময় এই উপসর্গ এতটাই সূক্ষ্ম ও সাধারণ মনে হয় যে, রোগী নিজেই তা গুরুত্ব দেন না, এমনকি চিকিৎসকরাও ভুল করে বসেন।
নারীদের হার্ট অ্যাটাকের ৭টি উপসর্গ যা অবহেলা করা উচিত নয়:
১. ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে অস্বস্তি:
বুকে ব্যথা ছাড়াও নারীরা ঘাড়, চোয়াল বা উপরের পিঠে চাপ বা ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এটি অনেক সময় দাঁতের ব্যথা বা মাসল টান হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা হয়।
২. হঠাৎ শ্বাসকষ্ট:
যে কোনো রকম শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াও যদি হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা বুক ভারী লাগে, তবে তা হার্ট অ্যাটাকের সতর্ক সংকেত হতে পারে। অনেক সময় একে অ্যাজমা বা টেনশন ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়।
৩. বমি ভাব বা বমি করা:
নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সময় হজমের সমস্যা, বমি বা বমি ভাব দেখা দিতে পারে। অনেক সময় একে সাধারণ গ্যাস্ট্রিক বা ভাইরাস জ্বর ধরে ফেলা হয়।
৪. অস্বাভাবিক ক্লান্তি:
বিশেষ কোনো কাজ না করেও হঠাৎ প্রচণ্ড ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা এক গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। দিনভর ঘুম ঘুম ভাব থাকলে তা হৃদরোগের ইঙ্গিত হতে পারে।
৫. মাথা ঘোরা বা চোখে অন্ধকার দেখা:
হঠাৎ মাথা ঘোরানো, দুর্বল লাগা, এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি আসতে পারে। অনেক সময় নারীরা একে পানির স্বল্পতা বা নার্ভের সমস্যা ভেবে গুরুত্ব দেন না।
৬. হজমে সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিক:
ইনডাইজেশন, বুকজ্বালা বা গ্যাস্ট্রিকের মতো উপসর্গও হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস হতে পারে। যেহেতু এগুলো অনেক সময় খাওয়া-দাওয়ার পর দেখা দেয়, তাই একে হালকাভাবে নেওয়া হয়।
৭. ঠাণ্ডা ঘাম:
ঘেমে যাওয়া মানেই পরিশ্রম এই ধারণা ভুল। কোনো কাজ না করেও হঠাৎ ঠাণ্ডা ঘামে ভিজে যাওয়া হার্ট অ্যাটাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
চিকিৎসকদের পরামর্শ:
এই উপসর্গগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নারীদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি হলেও সচেতনতার অভাবে সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে অনেক মূল্যবান প্রাণ ঝরে যায়।
নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে নিজের শরীরকে বুঝতে হবে। একটু সতর্কতা আপনার জীবন বাঁচাতে পারে। মনে রাখুন, হার্ট অ্যাটাক পুরুষদের একার সমস্যা নয় আপনারও হতে পারে।
মিমিয়া