
ছবি: সংগৃহীত
তরমুজ হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। এটি শরীরকে আর্দ্র রাখার পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করতে পারে।
তরমুজ একটি শতাব্দী-প্রাচীন রসালো ও মিষ্টি ফল, যা গ্রীষ্মের গরমে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য নিখুঁত একটি উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। উজ্জ্বল লাল শাঁস ও ছোট ছোট বীজ সমৃদ্ধ এই ফলটি ভিটামিন এ এবং সি-সহ প্রচুর পুষ্টি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ।
চলুন জেনে নেওয়া যাক তরমুজের কিছু প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা—
১. শরীরকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে
শরীরের সঠিক কার্যকারিতার জন্য আর্দ্র থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রম, পুষ্টি সরবরাহ এবং সচেতনতা — এসব কিছুই যথাযথ পানির উপর নির্ভরশীল।
তরমুজের ৯২% পানি থাকায় এটি শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য অসাধারণ একটি খাবার। এছাড়া তরমুজের ক্যালরি ঘনত্ব খুব কম, অর্থাৎ এর ওজনের তুলনায় এতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এই কারণে তরমুজ খেলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পেট ভরা অনুভূত হয়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
২. পুষ্টি ও উপকারী উদ্ভিজ্জ উপাদানে সমৃদ্ধ
তরমুজে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন এ ও সি। ১৫২ গ্রাম কাঁচা তরমুজে যা থাকে—
-
ক্যালোরি: ৪৬
-
কার্বোহাইড্রেট: ১১.৫ গ্রাম
-
ফাইবার: ০.৬ গ্রাম
-
চিনি: ৯.৪ গ্রাম
-
প্রোটিন: ০.৯ গ্রাম
-
ফ্যাট: ০.২ গ্রাম
-
ভিটামিন এ: দৈনিক প্রয়োজনের ৫%
-
ভিটামিন সি: দৈনিক প্রয়োজনের ১৪%
-
পটাশিয়াম: দৈনিক প্রয়োজনের ৪%
-
ম্যাগনেসিয়াম: দৈনিক প্রয়োজনের ৪%
এছাড়া তরমুজে আছে সিট্রুলিন, একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যা শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। তরমুজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েড, লাইসোপিন এবং কুকুরবিটাসিন ই — শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। এই ফ্রি র্যাডিক্যাল দীর্ঘমেয়াদে শরীরে জমে গেলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সম্ভাব্য উপকারিতা
তরমুজে থাকা লাইসোপিন ও কুকুরবিটাসিন ই-এর মতো উদ্ভিজ্জ উপাদানগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লাইসোপিন গ্রহণ করলে প্রোস্টেট ও কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
লাইসোপিন শরীরে ইনসুলিন-লাইক গ্রোথ ফ্যাক্টর এর মাত্রা কমায়, যা কোষ বিভাজনের হার নিয়ন্ত্রণ করে। ক্যান্সার সাধারণত এই অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের কারণেই হয়।
অন্যদিকে কুকুরবিটাসিন ই টিউমার বৃদ্ধির হার কমাতে এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করতে পারে। তবে এ বিষয়ে আরও মানব-ভিত্তিক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
৪. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে
তরমুজে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
লাইসোপিন রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। তরমুজে থাকা সিট্রুলিন রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে, যা রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে।
ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন এ, বি৬ ও সি — এসব উপাদানও হৃদযন্ত্র ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৫. প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়
তরমুজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লাইসোপিন এবং ভিটামিন সি শরীরের প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত তরমুজ গ্রহণের ফলে দেহে প্রদাহের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
৬. হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি
তরমুজে থাকা বিটা-ক্রিপ্টোজ্যানথিন নামক প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থ হাড় ও জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি অস্টিওপরোসিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
৭. চোখের সুস্থতা বজায় রাখে
তরমুজে থাকা লাইসোপিন চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন নামক চোখের রোগ প্রতিরোধে এটি সহায়ক হতে পারে। লাইসোপিন চোখের কোষকে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
৮. পেশির ব্যথা উপশমে সাহায্য করে
তরমুজে থাকা সিট্রুলিন পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও ব্যথা উপশম করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত সিট্রুলিন গ্রহণ করলে শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর দ্রুত ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠে।
৯. ত্বকের জন্য উপকারী
তরমুজে থাকা ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন সি শরীরে কোলাজেন তৈরি করে, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখে।
তরমুজ শুধু সুস্বাদু নয়, এটি একাধারে শরীরকে আর্দ্র রাখে, পুষ্টি সরবরাহ করে, হৃদরোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ত্বক ও চোখের যত্নেও ভূমিকা রাখে। তাই নিয়মিত তরমুজ খান এবং সুস্থ থাকুন।
তথ্যসূত্র: https://www.healthline.com/nutrition/watermelon-health-benefits#How-to-cut-watermelon
আবীর