
ছবি: সংগৃহীত
বিল-ঝিল আর নদীর মুক্ত আকাশ যেখানে পাখিদের আপন ঠিকানা, সেখানে ব্যতিক্রমী দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে ফারুক হোসেনের বাড়ি। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ঝিলপাড়ের সরকারি আবাসনে থাকা এই যুবকের বাড়ি যেন এখন হয়ে উঠেছে কালিম পাখির স্থায়ী নিবাস। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে যায় ঝিলে, আবার সন্ধ্যায় ‘আয় আয়’ ডাকে ফিরে যায় তার উঠোনে।
বাড়ির লাগোয়া ঝিলে বরাবরই পানকৌড়ি, কোঁড়া, কালিম, বালি হাঁস, বকসহ নানা পাখির আনাগোনা ছিল। ছোটবেলা থেকেই ফারুকের মনে সেইসব পাখির প্রতি জন্ম নেয় ভালোবাসা। দুই বছর আগে সেই টান থেকেই বাজার থেকে একটি ছোট্ট কালিম পাখির বাচ্চা কিনে আনেন তিনি। ঝিল থেকে ধরা খলসে ও পুঁটি মাছ খাইয়ে আদর-যত্নে বড় করে তোলেন পাখিটিকে।
বড় হয়ে সে পাখি ঝিলেও নামতে শুরু করে। কিন্তু দিন শেষে ফারুকের ডাকে ফিরে আসে। কিছুদিন পর ডিম দেয় পাখিটি, সেখান থেকে ফুটে বের হয় কয়েকটি ছোট কালো বাচ্চা। এখন তার কাছে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২টি কালিম পাখি। দিনে তারা বাড়ির সামনে-পেছনের ঝিলে ঘুরে বেড়ালেও রাতে থেকে যায় ফারুকের তৈরি কৃত্রিম ঘরে।
পাখিগুলোর নিরাপত্তার জন্য শিয়ালের উৎপাত থেকে বাঁচাতে ফারুক নিজেই বানিয়েছেন সুরক্ষিত ঘর। দিনে উন্মুক্ত ঝিল আর উঠোনে ঘুরে বেড়ালেও রাতে সে ঘরেই থাকে সবাই। খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয় ফিড, ছোট মাছ, ঝিনুক ও কচুরিপানা। তবে প্রাকৃতিকভাবে ওরা বেশি আগ্রহী ঝিলের খাবারেই। খলসে, পুঁটি, পোকামাকড় ও জলজ লতা-পাতা খেতে খেতে সময় কাটে তাদের।
সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয়, ফারুক কাজ থেকে বাড়ি ফিরে যখন ‘আয় আয়’ বলে ডাক দেন, তখন একে একে সব পাখি ফিরে আসে উঠোনে। অপরিচিত কাউকে দেখলে পুরুষ কালিমটি রেগে তেড়ে আসে। এমনকি বাড়ির রক্ষী হয়ে উড়ে এসে আঁচড় বসানোরও চেষ্টা করে। ভালোবাসা আর যত্নের টানে পাখিদের এমন আত্মিক বাঁধন শুধু ফারুকের বাড়িকেই নয়, বদলে দিয়েছে একটি ছোট্ট ঝিলপাড়ের পরিবেশকে।
ফারুক হোসেন বলেন, ‘ওরা এখন আমার সন্তানের মতো হয়ে গেছে। প্রতিদিন খাবার জোগাড় করি, যত্ন করি, যেন কোনো কষ্ট না পায়। সকালে ঝিলে উড়ে যায়, বিকেলে আমার ডাকে ফিরে আসে। তখন মনে হয়, আমিই ওদের আপনজন। রাতে ঘরে না থাকলে চিন্তা লাগে। ওরা যেন আমার পরিবারেরই অংশ। কখনো মনে হয় না, ওরা আমাকে ছেড়ে যাবে। আর যদি যায়ও আমি চাই ওরা ঝিলেই থাকুক, প্রকৃতির মাঝেই ওদের জায়গা।’
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে বলেন, ‘পাখিরা প্রকৃতিগতভাবে স্বাধীন থাকতে চায়। তবে যখন তারা কোথাও নিরাপত্তা, পর্যাপ্ত খাদ্য ও স্নেহের নিশ্চয়তা পায়, তখন সেই স্থানটির সঙ্গে তাদের মানসিক বন্ধন তৈরি হয়। ফারুকের বাড়িটি হয়তো তাদের কাছে এমনই এক নিরাপদ আশ্রয়, যেখানে তারা ভয়হীনভাবে থাকতে পারছে। আর এজন্যই তারা আর অন্য কোথাও যাচ্ছে না।’
সুদীপ্ত শামীম/রাকিব