ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

নির্বাচন পেছানোর গভীর ষড়যন্ত্র হবে: জাহেদ উর রহমান

প্রকাশিত: ১০:১৭, ২২ জুন ২০২৫

নির্বাচন পেছানোর গভীর ষড়যন্ত্র হবে: জাহেদ উর রহমান

ছ‌বি: সংগৃহীত

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন পেছানোর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে। সম্প্রতি এক আলোচনায় তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিল মাসে যখন একটি সম্ভাব্য নির্বাচনের সময় জানালেন, তার কিছুদিন পরই ফেব্রুয়ারির কথা বলাটা একেবারে অপ্রত্যাশিত।

তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচনের সময় নির্ধারিত হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। যদিও যৌথ বিবৃতিতে এটি খোলাসা করে বলা হয়নি, তবে বিএনপি যেভাবে সেই আলোচনার ফলাফলকে স্বাগত জানিয়েছে, তা থেকে বোঝা যায়— তারা নির্বাচনের তারিখ নিশ্চিত বলেই ধরে নিয়েছে।

ডা. জাহেদ প্রশ্ন তোলেন, কেন শুধু বিএনপির সঙ্গেই প্রধান উপদেষ্টা আলোচনা করলেন? অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও, এতে প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, জামায়াতও সুবিধা নিচ্ছে। যেমন তারা প্রথম দিন বৈঠকে অনুপস্থিত থেকেও পরদিন অংশ নিয়েছে এবং অন্য দলগুলোকে ছোট করে কথা বলেছে— ‘আপনি কতজন মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করেন?’ অথচ জামায়াত নিজে কতজনকে প্রতিনিধিত্ব করে, সেটাও তো প্রশ্নসাপেক্ষ।

তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, "বাংলাদেশের নির্বাচনের সিদ্ধান্ত বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই হবে। এখানে কোনো ধোঁয়াশা রাখার সুযোগ নেই।" তিনি আরও বলেন, অতীতে যেমন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গেই বিদেশি দূতরা আলোচনা করতেন, তেমনি এখনো মূল শক্তি এ দুই দলই।

জামায়াত প্রসঙ্গে ডা. জাহেদ বলেন, জামায়াত তাদের রাজনৈতিক অবস্থান ঠিক করতে পারছে না। একেক সময় একেক রকম কথা বলছে। তারা এখন বিএনপির আর প্রয়োজন নয়, এটা বুঝে গেছে এবং সেজন্যই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় রয়েছে। বিএনপি অতীতে জামায়াতের সঙ্গে জোট করে কিছু সুবিধা পেয়েছে ঠিকই, তবে বর্তমানে জামায়াতের কারণে বিএনপিকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে পড়তে হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ইত্যাদির অভিযোগের কারণে জামায়াত এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, "আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, বিএনপি ভবিষ্যতে জামায়াতকে সঙ্গে রাখবে না।"

এনসিপি ও জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনসিপির ওপর সরকারের ঘনিষ্ঠতার গন্ধ রয়েছে। তাই তারা নিজেদের ‘কিংস পার্টি’ ইমেজ থেকে মুক্ত করতে সরকারবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে। জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। এতে নির্বাচনের ক্ষেত্র আরও সংকুচিত হবে এবং বিএনপি বিপদে পড়তে পারে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াত প্রকাশ্যে এই কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, “নির্বাচনের সময় ঘোষণার পর যদি তারা মাঠে নেমে আসে এবং বলে, ‘আমরা এই কমিশন মানি না’, তাহলে তা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হবে।”

তিনি আরও জানান, জাতীয় পার্টির ওপর হামলা ও এনসিপির নেতাদের সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, সবকিছুই একটি বড় ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। নির্বাচন ঠেকাতে বা পিছিয়ে দিতে পরিকল্পনা চলছে বলে তিনি মনে করেন।

ডা. জাহেদ বলেন, “আমি মনে করি, নির্বাচন হবে এবং বিএনপি সরকার গঠন করবে। কিন্তু সেটি খুব মসৃণ হবে না। এরপর বিএনপিকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। এখন যারা বলছে—  বিএনপি এলেই খারাপ শাসন আসবে, তারা আসলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। আমাদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।”

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/R0NwQZdE8b0?si=pNCBu4WN7lLtLGYn

এম.কে.

×