ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

প্লাস্টিকের চেয়েও ৫০ গুণ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক, ঝুঁকি বেশি কাচের বোতলেই

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ২২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:২৮, ২২ জুন ২০২৫

প্লাস্টিকের চেয়েও ৫০ গুণ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক, ঝুঁকি বেশি কাচের বোতলেই

ছবি: সংগৃহীত

সদ্য প্রকাশিত এক গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে—কাচের বোতলে প্লাস্টিকের বোতলের চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে। দীর্ঘদিন ধরে ধারণা ছিল, কাচের বোতল অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। কিন্তু ফ্রান্সের খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা ANSES পরিচালিত এ গবেষণা সেই ধারণার পুরোপুরি বিপরীত ফলাফল দেখিয়েছে।

‘জার্নাল অব ফুড কম্পোজিশন অ্যান্ড অ্যানালাইসিস’-এ প্রকাশিত গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, কোমল পানীয়, লেমনেড, আইস টি ও বিয়ারজাতীয় পানীয়ের কাচের বোতলে প্রতি লিটারে গড়ে ১০০টি পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে—যা প্লাস্টিক বা ধাতব বোতলের তুলনায় প্রায় ৫০ গুণ বেশি।

গবেষণা পরিচালনাকারী পিএইচডি শিক্ষার্থী ইসেলিন শাইব বলেন, ‘আমরা এর সম্পূর্ণ বিপরীত ফল আশা করেছিলাম। শুরুতে মনে করেছিলাম, কাচের বোতল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ হবে। কিন্তু ফলাফল আমাদের চমকে দেয়।’

গবেষণায় দেখা গেছে, কাচের বোতলের পানীয়তে যে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে, সেগুলোর রঙ, গঠন ও রাসায়নিক গঠনের সঙ্গে বোতলের মুখবন্ধকারী ক্যাপের বাইরের রঙ মিলে গেছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, বোতলের মুখ বন্ধের সময় ব্যবহৃত রঙ বা পেইন্ট থেকেই এসব কণা পানীয়তে মিশছে।

গবেষকরা জানান, ‘বিশেষ করে কাচের বোতলের ক্যাপের (মুখ) বাইরের অংশে ব্যবহৃত রঙ থেকে কণা গুলো পানীয়তে ছড়াচ্ছে।’

সকল ধরনের বোতলের মধ্যে বিয়ারের বোতলে সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে—গড়ে প্রতি লিটারে ৬০টি কণা। এরপর রয়েছে লেমনেড, যেখানে কণার হার প্রায় ৪০ শতাংশ। তবে ফ্ল্যাট ও স্পার্কলিং পানিতে তুলনামূলকভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের মাত্রা কম—কাচের বোতলে প্রতি লিটারে ৪.৫টি এবং প্লাস্টিকের বোতলে ১.৬টি কণা।

সমাধান কী?

ANSES জানিয়েছে, একটি সম্ভাব্য সমাধান তারা পরীক্ষা করেছে। বোতলের ক্যাপগুলোকে পানির সাথে এথানল দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া হলে প্রতি বোতলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ পর্যন্ত কমে আসে।

মাইক্রোপ্লাস্টিক: একটি বৈশ্বিক হুমকি

১৯৫০ সালে যেখানে প্লাস্টিক উৎপাদন ছিল ১৫ লাখ টন, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০ মিলিয়ন টনেরও বেশি। এর অধিকাংশই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, যা সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার অভাবে স্থলভূমি ও সমুদ্র দূষিত করছে।

পাঁচ মিলিমিটারের ছোট এই মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা ইতোমধ্যে মেরিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে শুরু করে মাউন্ট এভারেস্ট পর্যন্ত, এমনকি মানব মস্তিষ্ক, গর্ভনালীর প্লাসেন্টা ও গভীর সমুদ্রের মাছের পেটেও পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কণার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হতে পারে, যা এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি। কাচের বোতল নিরাপদ—এই ধারণা এখন আর আগের মতো সহজে গ্রহণযোগ্য নয়।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×