ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরায়েলের সর্ববৃহৎ অস্ত্র ক্রেতা এই দেশটি ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে কেন নীরব?

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২১ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:৫০, ২১ জুন ২০২৫

ইসরায়েলের সর্ববৃহৎ অস্ত্র ক্রেতা এই দেশটি ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে কেন নীরব?

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতে ভারত ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকা নিচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। তবে দিল্লির এ নীরবতা অঞ্চলটির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তারা।

১৩ জুন ইসরায়েল একাধিক ইরানি পারমাণবিক স্থাপনা ও সেনা নেতাদের বাসভবনে হামলা চালায়, দাবি করে যে এটি পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ রুখতেই করা হয়েছে। এর জবাবে ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ইসরায়েলে হামলা চালায়, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার চক্র শুরু হয়।

এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ইরানে অন্তত ৬৩৯ জন নিহত ও ১,৩২৯ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত এবং আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।

চীন, জাপান, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো অন্যান্য এশীয় দেশ যেখানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা করেছে, ভারত সেখানে কোনো অবস্থান নেয়নি। এমনকি ১০ সদস্যবিশিষ্ট সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (SCO) পক্ষ থেকে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে দেওয়া বিবৃতিতেও একমাত্র ভারত সই করেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “উভয় পক্ষ যেন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে এমন পদক্ষেপ না নেয় এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপ ও কূটনীতির মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজে।” মন্ত্রণালয় আরও জানায়, “ভারত উভয় দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে এবং সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”

তবে সৌদি আরব, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত তালমিজ আহমদ বলেন, ভারতের বিবৃতি ছিল "প্রোটোকলের জন্য দেওয়া একটি নিম্নমাত্রার প্রতিক্রিয়া", যা কোনো কার্যকর কূটনৈতিক বার্তা বহন করে না। তিনি বলেন, “ভারত এখন আর মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আগ্রহী নয়।”

ইতিহাসগতভাবে পশ্চিম এশিয়ার (মধ্যপ্রাচ্য) সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ছিল দ্বিপাক্ষিক ও লেনদেনভিত্তিক, কখনোই সমষ্টিগত কূটনীতির অংশ ছিল না। আহমদ বলেন, “যেখানে ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করেছে এবং পুরো অঞ্চলকে বিপদে ফেলেছে, সেখানে ভারতের এমন নীরবতা উদ্বেগজনক। প্রতিবেশী অঞ্চলেই আগুন জ্বলছে, আর ভারত নির্বিকার।”

উল্লেখ্য, ভারত ইসরায়েলের সর্ববৃহৎ অস্ত্র ক্রেতা এবং ইসরায়েল ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী। গত এক দশকে ভারত ইসরায়েল থেকে প্রায় ২.৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনেছে।

ইরানের চাবাহার বন্দরে ৩৭০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ভারত, যা আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়াতে সাহায্য করছে। এছাড়াও ইরানে প্রায় ১০ হাজার ভারতীয়, বিশেষ করে শিক্ষার্থী, অবস্থান করছে — যাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে দিল্লি।

বিদেশনীতি বিশ্লেষক এন. সাই বালাজি বলেন, “ভারতের ৯০ লাখ নাগরিক পশ্চিম এশিয়ায় বসবাস ও কাজ করে, যারা রেমিট্যান্স আকারে বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠায়। এছাড়া ভারতের জ্বালানির বড় একটি অংশ আসে এই অঞ্চল থেকে। তাই এই অঞ্চলে কোনো সংঘাত ভারতের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ভারত ইসরায়েলের আগ্রাসনের সমালোচনা না করে পক্ষপাতমূলক অবস্থান নিচ্ছে এবং ঐতিহাসিক নিরপেক্ষতা থেকে সরে এসে নিজের পররাষ্ট্রনীতি ইসরায়েলপন্থী করে তুলছে।”

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ির উপদেষ্টা সুধীন্দ্র কুলকার্নি বলেন, “ভারত সবসময় বিশ্বে শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাই মোদি সরকারের এই নীরবতা গভীরভাবে দুঃখজনক। ইসরায়েলের প্রকাশ্য আগ্রাসনের বিপরীতে ভারতের এই নির্লিপ্ত অবস্থান জাতিসংঘের চার্টারের ৫১ অনুচ্ছেদের বিরুদ্ধাচরণ করে। ইসরায়েলই আগ্রাসী, ইরান তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করছে।”

 

সূত্র: আরাব নিউজ 

আবির

×