ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হার্টে ছিদ্র: চার লাখ টাকা হলে বাঁচবে শিশু সানী

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২১ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ২০:৫০, ২১ নভেম্বর ২০২২

হার্টে ছিদ্র: চার লাখ টাকা হলে বাঁচবে শিশু সানী

মা-বাবার সঙ্গে শিশু সানী। ছবি: জনকণ্ঠ

হাসি ভরা মুখ ৭ বছর বয়সী শিশু আশরাফুল ইসলাম সানীর। সারাদিন ছুটে বেড়ানো, খেলাধুলা করে দিন কাটছিল শিশুটির। সমবয়সী অন্য শিশুরা যখন ক্লান্তিহীনভাবে খেলাধুলায় মত্ত থাকে, তখন মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু সানী।

শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, বুকে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয় তার। ছেলের অসুস্থতা ঘিরে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় দরিদ্র এ পরিবারটি। অসুস্থ ছেলের এমন মুখভরা হাসিতেও এখন মলিন মুখ বাবা-মায়ের।

হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব বাগুনীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অটোরিকশা চালক আব্দুল আলী ও গৃহিণী মঞ্জিলা খাতুনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম সানী।

জানা যায়, অসুস্থ হওয়ার পর শুরু হয় কবিরাজি ঝাড়ফুকের চিকিৎসা। কিন্তু রোগ সারার কোনো লক্ষণ না দেখে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হার্টে ছিদ্র ধরা পড়ে শিশুটির। এর জন্য শিশুটির অপারেশন প্রয়োজন। লাগবে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। চিকিৎসকের এমন কথা শুনে চিন্তায় আছেন বাবা-মা।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেল, প্রায় দুই শতকের জমিতে একটি ঝুপড়ি ঘর। ঘরের বেড়া ভেঙে পড়ছে। টিনের চাল ফুটো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ ঘরের বিছানায় সানীকে আঙ্গুর খাওয়াচ্ছেন বাবা-মা। অনেক সময় শিশু সানীকে কোলে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে ঘুরাঘুরি করছেন তারা। অপরিচিত লোকজন দেখলেই মুখ লুকায় শিশুটি। সন্তানের এমন অবস্থা দেখে মুখে হাসি নেই বাবা-মায়ের। 

শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়কে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমসিম খেতে হয় আব্দুল আলীকে। ধারদেনা ও জমানো টাকা ব্যয় করে শিশুটির চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে দরিদ্র পরিবারটি। বর্তমানে চিকিৎসার অভাবে একমাত্র ছেলে সানীর হৃৎপিন্ডের ফুটোর আকার বেড়ে চলেছে। ছেলের সুচিকিৎসা করাতে না পেরে কেঁদে চলেছেন মা মঞ্জিলা খাতুন। 

শিশুটির পিতা আব্দুল আলী জানান, জন্মের পর সানী স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই সে অসুস্থ হতে থাকে। কবিরাজ ও স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে দেখানো হয়। রোগ না সারায় হবিগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হার্টে ছিদ্র ধরা পড়ে। সিলেট  নিয়ে যাওয়া হয়। 

সেখান থেকে পরামর্শ দেওয়া হয় ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিটিউট অথবা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে অপারেশন করানোর জন্য। এর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। চিকিৎসা না করাতে পারলে হয়তো ছেলেকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সমতা আক্তার বলেন, আব্দুল আলী গ্রাম সম্পর্কে আমার ভাই। ভাইয়ের সন্তানের এমন অবস্থা দেখে কষ্ট পাচ্ছি। তার সুচিকিৎসার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের প্রতি আর্থিক অনুদান প্রদানের আহবান জানাই। 

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের ডা. মিঠুন রায় বলেন, শিশু আশরাফুল ইসলাম সানী হার্টে ছিদ্র রয়েছে। দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈম বলেন, পরিবারটি দরিদ্র। শিশুটির এমন বড় ধরনের রোগে পরিবারটি দিশাহারা হয়ে পড়েছে। দরিদ্র পরিবারটিকে সবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত। 

তিনি বলেন, শিশু সানীর সুচিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে সমাজসেবার মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হবে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকেও আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে আর্থিকভাবে সহায়তা করার।  

চিকিৎসা সহযোগিতার জন্য এই নম্বরে ০১৭৫৬-৮৬১৪৩২ যোগাযোগ করার আহ্বান জানান শিশু সানীর বাবা আব্দুল আলী।

এসআর

×