ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মেঘান মার্কেলের "ডমেস্টিক গডেস" হওয়ার গল্প !

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৫:৩৮, ২৪ মে ২০২৫

মেঘান মার্কেলের 

আগামী মঙ্গলবার নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাচ্ছে ডাচেস অব সাসেক্স মেঘান মার্কেলের নতুন লাইফস্টাইল শো With Love, Meghan। দেরিতে মুক্তি পেলেও (লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলের কারণে) এটি ইতোমধ্যেই তৈরি করেছে আলোড়ন। ঝকঝকে ক্যালিফোর্নিয়ান প্রাসাদতুল্য বাড়িতে বন্ধুদের সঙ্গে রান্না করা, ফুল তোলা, আর নিজস্ব ঢঙে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা—সবকিছু মিলিয়ে মেঘান যেন পরিণত হয়েছেন "মিলেনিয়ালদের মার্থা স্টুয়ার্ট"-এ।

কিন্তু মেঘান বলেই, ট্রেলার মুক্তির পরপরই শুরু হয়েছে চিরচেনা সমালোচনার ঝড়। কেউ বলছেন তিনি বিত্ত বৈভব দেখিয়ে 'টোন-ডেফ'; কেউ বলছেন তিনি হয়ে যাচ্ছেন 'ট্র্যাড ওয়াইফ' – অর্থাৎ ঘরকন্নায় নিমগ্ন, পুরুষ-নির্ভর, পুরনো ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী স্ত্রী – যা 'খারাপ নারীবাদ'। আবার কেউ বলছেন, তিনি আসলে শুধুই পণ্য বিক্রির নতুন কৌশল নিয়ে হাজির হয়েছেন।

তবু, তার যত সমালোচক, অনুরাগীও কিন্তু কম নয়। ফলে অনেকেই ধারণা করছেন, শোটি নেটফ্লিক্সে হিট করবে—হোক না তা 'ভক্তরা' দেখে বা 'ঘৃণাবশত' কেউ 'হেইট-ওয়াচ' করুক।

মেঘান যখন বলেন, "Everyone’s invited to create wonder in every moment", তখন বোঝা যায়, তিনি কেবল রান্না বা ঘর সাজানো শেখাতে আসেননি—তিনি বিক্রি করতে চান একটি স্বপ্ন, একটি জীবনধারা।

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ট্র্যাড ওয়াইফ’ ধারণাটি যেন আবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। টেক্সাসের ইনফ্লুয়েন্সার নারা স্মিথ – যিনি বলগাউন পরে বাচ্চাদের জন্য ঘরে বানানো বুদবুদি চুইংগাম তৈরি করেন – তারই এক চূড়ান্ত রূপ। তিনি একজন ইনস্টাগ্রাম/টিকটক ‘ডমেস্টিক গডেস’, যার ১ কোটিরও বেশি অনুসারী।

কিন্তু এই অতি-আকর্ষণীয় জীবনযাপন কতটা বাস্তবসম্মত? এই প্রশ্ন আজকের নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অস্ট্রেলিয়ান গবেষক ড. ইডিথ হিল বলেন, “অনেক ‘ট্র্যাড ওয়াইফ’ কনটেন্টে দেখা যায়, নারীকে গৃহিণী রূপে আবদ্ধ রাখার পুরনো স্টেরিওটাইপ আর ধর্মীয় অনুশাসন উঠে আসে – যা অবচেতনভাবে নারী-অবদমনকেই প্রশ্রয় দেয়।”

একইসঙ্গে, ড. হিল মনে করিয়ে দেন: এখন আর নারীর কোনও একক ‘আদর্শ ইমেজ’ নেই অনলাইনে। প্রত্যেক সাব-কমিউনিটির নিজস্ব মডেল তৈরি হয়েছে—এবং তা নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকাটাও স্বাভাবিক।

নারীবাদকে দোষারোপ না করে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, মূল সমস্যা লুকিয়ে আছে পুঁজিবাদে। যেখানে পুরুষ-নারী উভয়কেই সারাদিন খাটতে হয় বাঁচার জন্য, আর নারীরা সন্ধ্যায় আবার ‘দ্বিতীয় শিফট’ করে বাড়ির কাজ করেন। তখন হয়তো ৫০’র দশকের ‘ট্র্যাডিশনাল’ ভূমিকা কিছুটা আরামদায়ক মনে হতে পারে।

কিন্তু সেই আরাম শুধু তখনই আসে, যখন বাড়িতে থাকে একজন উচ্চ-আয়ের 'ব্রেডউইনার'—পুরুষ। ফলে, ট্র্যাড ওয়াইফ জীবনশৈলী আসলে আবারও নারীকেই করে তোলে সহায়ক ভূমিকায়

তবে এধরনের গৃহকর্ম-কেন্দ্রিক নারী আদর্শ একেবারে নতুন কিছু নয়। আশির দশকে যিনি 'ঘর সাজানো' এবং 'বিয়ের পরিকল্পনা' দিয়ে গড়েছিলেন বহু কোটি ডলারের সাম্রাজ্য, তিনি মার্থা স্টুয়ার্ট।

তার বই Entertaining আবারও প্রকাশিত হচ্ছে—এটাও প্রমাণ করে, 'ডমেস্টিক গডেস'-এর ঘরে ফেরা সময়ের দাবি।

এরপর এসেছেন ইনা গার্টেন – The Barefoot Contessa – যিনি বলেছিলেন, "Store-bought is fine"। মানে, সব সময় নিখুঁত হতে হবে না। সহজতা আর পরিশীলনের মিশেলে তিনি যেন ছিলেন একটু বাস্তববাদী ডমেস্টিক গডেস।

মেঘান মার্কেল কি তবে মার্থা বা গার্টেনের মতোই কেবল নতুন এক ঘরোয়া সেলিব্রিটি হতে চাইছেন? নাকি, তিনি আসলে প্রশ্ন তুলছেন—একজন নারী কীভাবে নিজের পরিসর নিজেই তৈরি করতে পারে, বিত্ত, ঐতিহ্য এবং আধুনিক নারীবাদ সবকিছুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে?

সমালোচনা থাকবেই, কিন্তু ‘With Love, Meghan’ হতে পারে ২০২৫ সালের আরেকটি সাংস্কৃতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কেউ হয়তো দেখবে আদর্শ খুঁজতে, আবার কেউ শুধুই সমালোচনা করতে। তবে যত মতবিরোধই থাকুক, মেঘান সবাইকে দাওয়াত দিয়েছেন তার এই রঙিন জগতে—"create wonder in every moment" করতে।

লেখা: বিবিসির প্রতিবেদন অবলম্বন

সায়মা

×