ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ছবি বিকৃত করা যায়, কিন্তু কাউকে মুছে ফেলা যায় না: শবনম ফারিয়া

প্রকাশিত: ০১:৪৯, ১২ জুন ২০২৫

ছবি বিকৃত করা যায়, কিন্তু কাউকে মুছে ফেলা যায় না: শবনম ফারিয়া

ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া সম্প্রতি এক আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজের জীবনের না বলা কষ্ট, সংগ্রাম, বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের গল্প তুলে ধরেছেন। পোস্টটিতে তিনি শুধু একজন শিল্পী হিসেবে নয়, একজন ভেঙে পড়া মানুষ কীভাবে নিজেকে গড়ে তোলে—সেই সত্যিকারের যাত্রাপথ স্পষ্ট করে বলেছেন।


ফারিয়া লেখেন, এটা খুব আবেগঘন পোস্ট। হয়তো আগামীকাল এত কিছু শেয়ার করার জন্য আফসোস হবে… কিন্তু আজ রাতটায় আমার হৃদয়টা ভরে আছে।

তিনি বলেন, তাঁর শৈশব ছিল অপূর্ব—প্রগতিশীল অথচ শৃঙ্খলাবদ্ধ বাবা-মা, দুই দারুণ বড় বোন, আর তাঁদের মাধ্যমে পাওয়া এমন দুই দুলাভাই, যারা তাঁকে সবসময় নিজের বোনের মতোই ভালোবেসেছেন।


শবনম জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের স্বপ্ন দেখতেন, যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তবু ভাগ্য যেন নিজে এসে তাকে অভিনয়ের পথে নিয়ে যায়।

অভিনেত্রী হয়ে উঠেছিলাম, এমন কিছু যা আমি সবসময় স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু কখনো শিখিনি। হয়ে গিয়েছিল... হঠাৎ, সুন্দরভাবে। জীবন তখন তীব্রভাবে বদলে যায়। শুরু হয় দীর্ঘ, কঠিন এক আট বছরের পথচলা—ডিপ্রেশন, হৃদয়ভাঙা, একসময় আলোতে থাকা ক্যারিয়ারের পতন, উদ্বেগ... এমন এক যন্ত্রণা, যা আমি ভাবতাম কখনোই টিকে থাকতে পারব না।

তিনি লেখেন, আল্লাহ আমাকে সবভাবে পরীক্ষা নিয়েছেন। তিনি কেঁদেছেন দিনরাত, তাহাজ্জুদের নামাজে সিজদায় পড়ে থেকেছেন একটুখানি মানসিক শান্তির আশায়।


সব হারানোর পরও ফারিয়া আশাহত হননি। নিজের মতো করে, নীরবে, ধৈর্য নিয়ে আবার শুরু করেন নতুন পথচলা। আমি ধীরে ধীরে এক ভিন্ন পথ বেছে নিই। শুরু করি নিজেকে গড়ে তোলা—নিঃশব্দে, কষ্টে, ধৈর্যে।
আজ তিনি জানাচ্ছেন—আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি এক প্রশান্ত হৃদয় নিয়ে।


ফারিয়া লিখেছেন, আল্লাহ অনেক কিছু নিয়ে গেছেন, কিন্তু দিয়েছেন তার থেকেও বেশি—একটি ভালোবাসায় ভরা পরিবার, অসাধারণ বন্ধুবান্ধব, সেই আর্থিক স্বাধীনতা যা আমাকে পৃথিবী দেখতে দেয়, মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেয়, সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে দেয়, এমন জিনিস কিনতে দেয় যা একসময় শুধু স্বপ্ন ছিল, নিজের বাড়ির দাম দিতে দেয়।

মিরিসার সমুদ্রতীরে বসে তিনি কেবল একটিই কথা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। ধন্যবাদ আমার স্রষ্টাকে, আমাকে ছেড়ে না দেওয়ার জন্য।


ফারিয়া জানান, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কেবলমাত্র মুখ খোলার কারণে, ‘জুলাই মুভমেন্ট’-এ সমর্থন জানানোর কারণে, সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণার শিকার হয়েছেন। তারা বলছে আমি ডলার নিয়েছি। মজার ব্যাপার হলো, আগের সরকার আমাকে একবার টাকা অফার করেছিল একটা ভিডিও করার জন্য, আর আমি সেটা ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।

তিনি আরও জানান, কেউ কেউ তার ছবি বিকৃত করে অশালীনভাবে উপস্থাপন করেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর ইমেজ নষ্ট করতে চেয়েছেন।

এখানেই ফারিয়ার দৃপ্ত উচ্চারণ, ছবি বিকৃত করা যায়, কিন্তু কাউকে মুছে ফেলা যায় না। যারা আমাকে সত্যিকারের ভালোবাসেন, তারা আমাকে শর্টস পরা দেখে ঘৃণা করবেন না।

ফারিয়া স্পষ্ট করে জানান, আমার কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাত নেই। আমি কোনো দলের কেউ না। আমি শুধু আমার দেশটাকে ভালোবাসি।

তাঁর একটাই চাওয়া, একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ। ধর্মীয় বিভেদহীন, দুর্নীতিমুক্ত একটা দেশ।
একটা ছোট, সুন্দর দেশ—শান্তি আর সম্ভাবনায় ভরা।

ফরিদ 

×