ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নাট্যচর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ চায় মঞ্চশিল্পীরা

হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি 

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৩১, ৯ নভেম্বর ২০২৪

হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি 

শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ।

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থিয়েটার বা নাট্যচর্চা করতে চায় মঞ্চশিল্পীরা। পাশাপাশি যারা বিক্ষোভ করে হুমকি দিয়ে নিত্যপুরাণ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করেছে এবং শুক্রবার  নাট্যকর্মীদের প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা করেছে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিচারের আনতে হবে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমিসহ অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শনিবার শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এদিকে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে শিল্পকলা একাডেমির গেটের সামনে বিক্ষোভের চেষ্টা করলে  মহিউদ্দীন হৃদয় (৩৮) ও রাসেল (৪২) নামে দুই বিক্ষোভকারীকে আটক করে নিয়ে যায় রমনা থানা পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নাট্যচর্চা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু বিক্ষোভের নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি শিল্প-সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে চাইছে। তাই  নাট্য প্রদর্শনী চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চাই। এছাড়া কোনো নাট্যকর্মীর রাজনৈতিক আদর্শের দায় নিবে না গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। মঞ্চশিল্পীদের মধ্যে কেউ যদি কোনো অন্যায় বা অপরাধ করে সেটার বিচার করবে রাষ্ট্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু নাটকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এবং  কোনো প্ল্যাটফর্ম বা সুনির্দিষ্ট পরিচয় নেই এমন কতিপয় ব্যক্তি গত ২ নভেম্বর হুমকি দিয়ে নিত্যপুরাণ নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করেছে। মূলত তারা দুষ্কৃতিকারী। তারাই আবার নাট্য প্রদর্শনী বন্ধের প্রতিবাদে  শুক্রবার গ্রুপ থিয়েটারের প্রতিবাদ সমাবেশে হামলা করেছে।

বিক্ষোভকারী নামধারীর এসব উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিদের অনাকাক্সিক্ষত কর্মকা-ে নাট্যচর্চায় সংকট নেমে এসেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের  শাস্তির আওতায় আনতে হবে।  পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেই পরিবেশ সৃষ্টি না হলে আগামী ১৫ নভেম্বর রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ করবে ফেডারেশান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ। এসময় অভিনেতা, নির্দেশক, নাট্যকারসহ মঞ্চশিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঝুনা চৌধুরী, মাসুম রেজা, আকতারুজ্জামান,  তপন হাফিজ, ফেডারেশানের অনুষ্ঠান সম্পাদক খন্দকার শাহ আলম প্রমুখ।         
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২  নভেম্বর দেশ নাটক প্রযোজিত ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকটি মাঝ পথে বন্ধ করে  দেওয়া হয়। নিত্যপুরাণের প্রদর্শনী বন্ধের ঘটনা ছিল  দেশের নাটকের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। এর প্রতিবাদে শুক্রবার ফেডারেশান প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশে নাট্যকর্মীদের বিপুল উপস্থিতি ছিল। নিত্যপুরান বন্ধের ঘটনা ছিল দেশের নাটকের ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।  শিল্পকলা একাডেমির মূল গেটে চলমান এই প্রতিবাদ সমাবেশের প্রায়  শেষ পর্যায়ে যখন নাট্যজন মামুনুর রশীদ বক্তব্য রাখছিলেন ঠিক তখন কিছু দুষ্কৃতিকারী দুদকের গেটের দিক থেকে সমাবেশ লক্ষ্য করে ইট ও ডিম ছুড়ে মারে। এতে অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হন। ফলে সমাবেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু নাট্যকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। সমাবেশের পাশে দায়িত্বরত পুলিশ ও সেনাবাহীনির সদস্যরা এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। কিন্তু তারা কোন জোরালো পদক্ষেপ নেননি। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে সমাবেশের কাজ আবার শুরু হয় এবং মামুনুর রশীদ তার বক্তব্য শেষ করেন। কিছুক্ষণ পর হামলাকারীরা আবার কিছুটা বর্ধিত সংখ্যায় ফিরে আসেন এবং নাটক ও নাট্যকর্মীদের বিরুদ্ধে  স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের গতিরোধ করলে তারা সেখানে দাড়িয়েই নাটকবিরোধী নানান উত্তেজক  স্লোগান দিতে থাকেন। নাটক দেখতে আসা অনেক দর্শক এই পরিস্থিতি দেখে শিল্পকলা একাডেমি ছেড়ে যান। ফেডারেশান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দুষ্কৃতিকারীদের তাৎক্ষণিকভাব গ্রেফতারের আহ্বান  জানালেও কোনো কাজ হয়নি। দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই হামলাকে দেশের শিল্প সংস্কৃতির উপর হামলা এবং একে দেশের সাংস্কৃতি চর্চা ব্যাহত করার এক গভীর চক্রান্ত  বলে মনে করে ফেডারেশান।


লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, চরম নিন্দনীয় এই ঘটনার নিরেপক্ষ তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং বাধাহীন নাট্যচর্চার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাই। নইলে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় কোনো শিল্পের চর্চ্চা সম্ভব নয়। একের পর এক নাট্যদল, নাট্যকর্মীরা এসব দুষ্কৃতিকারীর লক্ষ্যবস্তুুতে পরিণত হয়েছে। আশা করি, প্রধান উপদেষ্টোর  প্রেস উইং থেকে  যে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল তার ধারাবাহিকতায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে শিল্পচর্চ্চার পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক।

মনোয়ার/ রিয়াদ

×