ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিজের নিয়মেই পথ চলছি

এনআই বুলবুল

প্রকাশিত: ০১:০১, ১ ডিসেম্বর ২০২২

নিজের নিয়মেই পথ চলছি

টুম্পা

র‌্যাম্প মডেল ও কোরিওগ্রাফার বুলবুল টুম্পা। ১৯৯৮ সাল থেকে নিয়মিত কাজ করছেন তিনি। এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের দুই যুগ পার করেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন বিউটি প্রতিযোগিতার ট্রেনার বা মেন্টর হিসেবেও তিনি কাজ করেন। এছাড়া নিজের স্কুল ‘রানওয়ে বাই বুলবুল টুম্পা’তেও ব্যস্ত থাকেন বলে জানান। বর্তমান ব্যস্ততা ও র‌্যাম্প মডেলের নানা বিষয় নিয়ে আনন্দকণ্ঠের
সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- এনআই বুলবুল

ক্যারিয়ারে দুই যুগ ধরে কাজ করছেন। এ সময়ের জার্নিটা কেমন?
সে তো অনেক সংগ্রামের কাহিনী। কিন্তু এটাও সত্য, যে কোনো পেশাতে ভালো-মন্দ থাকে। সব বাধা-সমস্যা অতিক্রম করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। তবে আমি বরবারই পজিটিভ ভাবতে পছন্দ করি। আমি মনে করি যারা পজিটিভভাবে সবকিছুকে নিতে পারে তাদের জন্য অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়। নেগেটিভটি মানুষকে সব সময় দুর্বল করে, দমিয়ে রাখে। আমার কাছের মানুষেরা জানে আমি থেমে যাবার মতো নই। শুরু থেকেই আমি নিজের নিয়মেই পথ চলছি।
র‌্যাম্প মডেলের সঙ্গে যুক্ত হলেন কিভাবে?
আমার চাচ্চুর এক ফ্রেন্ড আমাকে দেখে মডেলিংয়ের জন্য পছন্দ করেন। সে সময় আমার বাবা-মা মারা যান। পরিবারের সবকিছু বড় ভাই দেখতেন। কিন্তু আমার বড় ভাই প্রথমদিকে চাননি আমি মডেলিংয়ে আসি। এরপর ১৯৯৮ সালে আমি মডেলিং শুরু করি। তখন আমার ভাই আমাকে একটি কথা বলেছেন, আমি যেন এমন কিছু না করি, যাতে পরিবারের অসম্মান হয়। এখনো ভাইয়ের সেই কথাটি মনে রেখেই সব কাজ করি।
র‌্যাম্প মডেলের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যায়। এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
অনেকেই সমালোচনা করে। কিন্তু কেন করে আমার জানা নেই। তবে আমার শুরুর দিকে আমি বেশ কয়েকজন ভালো মানুষকে পেয়েছি। এরপরও আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। আমি কালো, অনেকে বলত এত শুকনো মেয়েকে দিয়ে কি হবে? এ রকম অনেক কথা শুনেই আজ এখানে এসেছি। আমি ছোটবেলা থেকেই শান্ত স্বভাবের। কাজের বাইরে খুব বেশি কথা বলি না। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি। হয়তো এ কারণেই সবার ভালোবাসা পেয়ে আসছি।
র‌্যাম্পের পাশাপাশি কোরিওগ্রাফি শুরু করলেন কবে থেকে?
২০০৫ থেকে কোরিওগ্রাফি শুরু করেছি। প্রথমদিকে আমি কোরিওগ্রাফারদের সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজ করতাম। তানিয়া আপু, তোফা আপু, লুনা, সুমনসহ অনেকের অ্যাসিস্ট করতাম। তাদের হেল্পিং হ্যান্ড অনুপস্থিত থাকলে আমাকে বলত টুম্পা একটু দেখিয়ে দে কিংবা হেল্প কর। সেখান থেকেই বোধ হয় নিজের ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। অ্যাসিস্ট করতে করতেই আমি শিখে গিয়েছিলাম কিভাবে স্টেজটাকে ইউজ করতে হয়। কিভাবে কোরিওগ্রাফিতে নতুনত্ব আনতে হয়, কোনো সময় কি মিউজিক দেওয়া উচিত, কোনো কাপড়ের সঙ্গে কি লাইটিংটা হওয়া উচিত। আমি বাস্তব শিক্ষা থেকে শিক্ষিত একজন কোরিওগ্রাফার।
আপনাকে সবাই ‘মা’ বলে ডাকার গল্পটা শুনতে চাই?
২০০৫ সালের দিকে সুমন নামরে একজন মডেল প্রথম আমাকে মা বলে ডাকে। তার মা ডাকার শুরুটা বেশ অন্যরনকম ছিল। একদিন সে আমার পাশে বসা ছিল। হঠাৎ সে আমাকে বলে টুম্পা আপু আমি কি তোমাকে মা বলে ডাকতে পারি? আমি প্রথমে একটু অবাক হয়েছি। সেও অনেকটা আমার বয়সী। পরে তাকে বললাম বড় বোনকে তো মা ডাকা যায়। এভাবে আমার নামের সঙ্গে মা যোগ হয়। তবে আমিও আমার স্টুডেন্টদের সন্তানের মতোই দেখি। তাদের কোথায়ও পাঠালে সব ঠিক আছে কিনা জেনে-শুনেই পাঠাই।


র‌্যাম্প মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য কি ধরনের গুণাবলি থাকা উচিত?
প্রথমত প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। ভালো আচরণের অধিকারী হতে হবে, বাচনভঙ্গী সুন্দর হতে হবে, সুগঠিত শরীর হতে হবে। র‌্যাম্পের ক্ষেত্রে আরেকটা জরুরি বিষয় হলো হাইট। যারা নতুন আসতে চায় তাদের ক্ষেত্রে বলব তারা যেন অবশ্যই পড়াশোনা করে জেনে বুঝে আসে। নিজের কর্মক্ষেত্রটাকে আগে থেকে জেনে বুঝে তবেই আসা উচিত। তাহলে কাজের প্রতি ভালোবাসাটা থাকবে।
বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?
আমার নিজের স্কুলের ব্যস্ততার বাইরে এরমধ্যে ৩৭তম ‘আইএএফ ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন’ অনুষ্ঠানটিতে কাজ করেছি। শো স্টপার হিসেবে হেঁটেছি রেডলাইফ এশিয়ান অ্যাওয়ার্ডে। সেখান থেকে বিবি রাসেল আপুর হাত থেকে একটি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি।
এটি আমার জন্য অনেক আনন্দের বলতে পারি। এছাড়া দুই বাংলার  একটি ইভেন্টে কাজ করার কথা আছে। পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে একটি আয়োজনের সঙ্গেও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

×