
ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহের ত্রিশালের নামাপাড়া বটতলার শান্ত ছায়ায় ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ৫৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিড়ে নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা ও সাম্যের বার্তা নিয়ে দুই দশকে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছে এক অনন্য পরিচয়।
কবি নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত বটতলায় ২০০৫ সালের ১ মার্চ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। গেজেট অনুযায়ী, ২০০৩ সালের ৯ মে প্রতিষ্ঠিত হয় এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একই বছরের ১ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর ২০০৭ সালের ৩ জুন শুরু হয় একাডেমিক কার্যক্রম। এই দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে। প্রথম বছর চালু হয় বাংলা, ইংরেজি, সঙ্গীত ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।
২০ বছরের যাত্রায় ৫৭ একরের এই সবুজ ক্যাম্পাসে গড়ে উঠেছে ৬টি অনুষদের আওতায় ২৫টি বিভাগ। রয়েছে একটি ইনস্টিটিউট, ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ। বর্তমানে ২১০ জনেরও বেশি শিক্ষক, ১৬১ জন কর্মকর্তা ও ১৯১ জন কর্মচারীর সম্মিলিত প্রয়াসে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী আজ এই ক্যাম্পাসে জ্ঞানের সাধনায় রত।
অবকাঠামোগত উন্নয়নেও এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। নির্মিত হয়েছে একাধিক একাডেমিক ভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আবাসন, কেন্দ্রীয় মসজিদ, দৃষ্টিনন্দন মূল ফটক এবং টিএসসি। চলমান রয়েছে আরও দুটি নতুন আবাসিক হল নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে চারটি হল, অগ্নিবীণা, দোলনচাঁপা, বিদ্রোহী ও শিউলিমালায় প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসস্থল হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসে রয়েছে সিসিটিভি ও ওয়াকিটকিসংবলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ক্যাম্পাসজুড়ে নজরুলের কাব্যিক উপস্থিতি যেন ছড়িয়ে আছে প্রতিটি নাম, প্রতিটি উদ্যোগে। ‘চির উন্নত মম শির’ স্মৃতিসৌধ, ‘চক্রবাক’ ও ‘চন্দ্রবিন্দু’ ক্যাফেটেরিয়া, ‘ধূমকেতু’ ও ‘বিদ্রোহী’ নামের বাস, ‘চুরুলিয়া মঞ্চ’ ও ‘গাহি সাম্যের গান মঞ্চ’, সবখানেই কবির আদর্শের ছাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের নামও নজরুলের কবিতা থেকে ‘ব্যথার দান’।
প্রশাসনিক কার্যক্রমেও এসেছে আধুনিকতা। ডিজিটাল ফাইলিং, সেশনজটমুক্ত একাডেমিক ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন এবং স্মার্ট ক্যাম্পাস গড়ার পথে এগিয়ে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। নজরুল স্টাডিজ ইনস্টিটিউট ও সবার জন্য বাধ্যতামূলক নজরুল স্টাডিজ কোর্স নজরুলচর্চায় এনেছে নতুন গতি।
শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সমৃদ্ধ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবছর আয়োজন করা হয় নজরুলজয়ন্তী, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নাট্যোৎসব, চলচ্চিত্র উৎসব, পিঠা উৎসব, কুয়াশা উৎসব, গবেষণা মেলা ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এসব আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে নজরুলের সাম্যবাদী ও বিদ্রোহী চেতনার বীজ বপন করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর (৭ম উপাচার্য) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং ট্রেজারার পদে আছেন অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী।
২০ বছরের পথচলায় জাতীয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠ শিক্ষা, সংস্কৃতি ও গবেষণায় হয়ে উঠেছে এক তীর্থভূমি। নজরুলের ‘চির সুন্দর’ দর্শনে উজ্জ্বল এই ক্যাম্পাস আগামী দিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার অবস্থান আরও সুদৃঢ় করবে, এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
অনিরুদ্ধ সাজ্জাদ/রাকিব