
ফাইল ছবি।
দেশের ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ৭৫০ জন শিক্ষক টানা ৩৯ মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রকল্পের (স্টেপ) মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সরকার এই শিক্ষকদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রাজস্ব খাতে স্থানান্তর না হওয়ায় ২০২০ সালের জুলাই থেকে তারা বেতন-ভাতা ছাড়াই শিক্ষকতা করছেন।
আরও পড়ুন :অপরাধ করিনি, শঙ্কিত হবো কেন? জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ড. ইউনূস
আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এবার এই দিবসের প্রতিপাদ্য শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই: শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশ্বিক উদ্যোগ। দেশে এবারই প্রথম সরকারিভাবে শিক্ষক দিবস পালন করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। অন্যদিকে সরকার কারিগরি শিক্ষাকে যে গুরুত্ব দিয়েছে তাতে সাড়ে সাতশো শিক্ষকের টানা ৩৯ মাস বেতন না পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এসব শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মহসিন জনকণ্ঠকে বলেন, শিক্ষকরা দীর্ঘদিন বেতন পাচ্ছেননা এর কষ্ট আমি অনুভব করি। এক বছর আগেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব শিক্ষকের বেতন দিতে চিঠি পাঠানো হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু অর্থ বিভাগ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে নতুন করে জনপ্রশাসন থেকে নিয়োগ বিধি সংশোধন করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। বিধিমালা সংশোধনী শেষে মন্ত্রণালয়ে এটি আমরা পাঠাবো। ফলে এটুকু অন্তত আমরা এগিয়েছি বলা যায়।
তিনি আরও বলেন, নিয়োগ বিধিমালায় শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স নির্ধারণ, পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয় রয়েছে। এসব শিক্ষকের জন্য আলাদাভাবে বিধি সংশোধন করতে হবে। যে কারণে আমরা সময় নিচ্ছি। আমরা আশা করছি বকেয়া বেতন পরিশোধ না করা গেলেও যেন তাদেরকে রাজস্বভুক্ত করা যায়।
ভুক্তভোগী এসব শিক্ষকরা জানান, কারিগরি শিক্ষার এ প্রকল্প শেষ হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিকভাবে কাজ করে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে কারণে কোনো বেতন ছাড়াই সাড়ে তিন বছর ধরে ক্লাস নিচ্ছেন তারা। এতদিন ধারদেনা করে চলেছেন। এখন আর কোন আত্মীয়-স্বজনও টাকা ধার দিতে চাইছে না। ফলে এসব শিক্ষক অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন। দীর্ঘদিন এই পেশায় চাকরি করায় পেশা পরিবর্তনের সুযোগ ও নেইন বলে জানান তারা।
পলিটেকনিক টিচার্স ফেডারেশনের (বিপিটিএফ) সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান জানান, সরকার দেশের কারিগরি শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তারাও রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু এত দিনেও রাজস্বখাতে অন্তভুক্ত না হওয়ায় আর্থিক এবং মানসিকভাবে তাঁরা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর প্রকৌশলী মো. সানাউল্লাহ হক বলেন, এই সাড়ে তিন বছরে কতগুলো ঈদ পার করেছি। সন্তানের জন্য কিছুই করতে পারিনি। সরকারের দিকে তাকিয়ে আমরা ও আমাদের পরিবার অপেক্ষা করছি।
দেশের ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মোট শিক্ষক ১ হাজার ৪২৭ জন। তার মধ্যে রাজস্ব খাতে ৬৫০ জন, আর প্রকল্পের ৭৭৭ জন। এর মধ্য থেকে ২৭ জন চাকরি ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। এখন রয়েছেন সাড়ে ৭শর মতো শিক্ষক। এই শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়া বন্ধ করলে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম মুখথুবড়ে পড়বে।
শিক্ষকরা জানান, ২০১২ সালে স্টেপ প্রকল্প চালু হয়। তখন সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে যোগ্য শিক্ষক দেওয়ার জন্য এ প্রকল্পের অধীনে ১ হাজার ১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। জাতীয় বেতন স্কেলের দশম গ্রেডে (তখন স্কেল ছিল ৮ হাজার টাকার, ২০১৫ সালের বেতন স্কেলে তা ১৬ হাজার টাকা হয়) তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই দফায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল মোট ১ হাজার ১৫ জনকে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমাদের দেশের শিক্ষকদের মর্যাদা ও সম্মানের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের দেশের শিক্ষকের বেতন এমনিই কম। এরপর যদি কেউ ৩৯ মাস বেতন না পায় তবে শিক্ষকতা পেশায় মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আমাদের মনে রাখতে হবে শিক্ষকরা একটি দেশের ভবিষ্যত গড়ে তোলে। পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী এটা বুঝেই মুক্তিযুদ্ধের সময় শিক্ষক হত্যা করেছিল। এ বিষয়ে নীতি-নির্ধারকদের আরও গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানান তিনি।
এমএম