ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

মেহেদী কবীর

স্বপ্ন যখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৬ নভেম্বর ২০১৬

স্বপ্ন যখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে চলছে স্নাতকে ভর্তি পরীক্ষা। উচ্চশিক্ষার এই ভর্তি পরীক্ষায় অনেকেই হয়ত কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে, আবার অনেকে ব্যর্থ হয়। নিজেকে সেরা প্রমাণ করে সবাই চাই নিজের পছন্দমতো বিশ^বিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে। এক্ষেত্রে নিজের পছন্দ মতো বিষয়ে ভর্তি হতে আবেদন করতে পারেন দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুরু হয়ে গেছে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার আবেদন প্রক্রিয়া চলবে আগামী ১০ নবেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৬ নবেম্বর। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা মুঠোফোনের টেলিটক সংযোগ থেকে আবেদন করতে পারবে। ইতিহাসের পাতা থেকে : ১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২০ একর জমির ওপর তিনটি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সময়ের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২টি ইনস্টিটিউট, ৭টি অনুষদের অধীনে ২৭ বিভাগে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধার জন্য ছাত্রদের ৩টি এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ২টি আবাসিক হল। এছাড়া ৫টি একাডেমিক ভবন, ২টি প্রশাসনিক ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, দেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বৃহত্তর মিলনায়তনসহ রয়েছে অনেকগুলো ভবন। বয়সের তুলনায় বিশ^বিদ্যালয়টি এরই মাঝে অর্জন করেছে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের আস্থা। যা কিছু প্রথম, যা কিছু অনন্য : বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আমিনুল হক ভূঁইয়ার তথ্য মতে, দেশের বাইরে এখন সবচেয়ে বেশি পড়তে যায় এখানকার শিক্ষার্থীরা। এটি দেশের প্রথম বিজ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়। প্রযুক্তিভিত্তিক অনেক কিছুরই সূচনা সদ্য ২৫ পেরোনো এই বিশ^বিদ্যালয় থেকে। তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্বল্পসময়ের ব্যবধানে উচ্চশিক্ষাঙ্গনে তার দৃঢ় অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ভর্তির কার্যক্রম চালু, পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে তারবিহীন নেটওয়ার্ক ওয়াইফাই সুবিধা চালু করা, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলগুলো নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখা, নিজস্ব ডোমেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ই-মেইল সার্ভিস চালু, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যানবাহনের অবস্থান নির্ণয়ের ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, মানববিহীন ড্রোন, সেমিস্টার পদ্ধতি, অনলাইনে লেনদেনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ও কোর্স ফি জমা দেবার সুবিধা, সার্চ ইঞ্জিন প্রভৃতিসহ অনেক কিছুই প্রথমে শুরু হয় শাবি থেকে। এছাড়া দেশের প্রথম ও একমাত্র পুর ও পরিবেশ কৌশল, টি টেকনোলজি, পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শুরুটা হয় শাবিপ্রবির হাত ধরেই। এখানকার বিবিএ তে আইবিএ -এর আদলে পড়ানো হয়। দেশের বিশ^বিদ্যালয়গুলোর প্রথম ও একমাত্র সেকেন্ড মেজর কোর্স পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এখানেই। যোগ্যতা সম্পূর্ণ যে কেউবি ইউনিটের যে কোন বিভাগে পড়ার পাশাপাশি কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স করতে পারবে। এ পদ্ধতি বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেমন উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু থাকলেও বাংলাদেশে শুধু শাবি অনুসরণ করে। এছাড়া বিভিন্ন অলিম্পিয়াডের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কৃত শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা ব্যতীত এখানে যে কোন বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। প্রতিবছর গুগলসহ অন্যান্য নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ দিচ্ছে একাধিক শিক্ষার্থী। এছাড়া এই বিশ^বিদ্যালয়ের সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। র‌্যাগিং নামক ব্যাধি এখানে নেই বললেই চলে। নেই সেশন জট : গত কয়েক বছর দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সে সময় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা কিছুটা সেশনজটে পড়লেও এখন তা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছে শাবিপ্রবি। বিশেষ করে বেশিরভাগ বিভাগে গত বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা একবছরের কোর্স আটমাসেই শেষ করে দিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সেশন জটটাকে এক হিসেবে তারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। সেশনজট একেবারে শূন্যের কোঠায় আনতে সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য : টিলাবেষ্টিত অরন্যঘেরা বিশ^বিদ্যালয়টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য অত্যন্ত পরিচিত। প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে সারি সারি মেহগনি, কড়ই, জারুল, নারিকেল গাছের সারির দুপাশে লেক বাড়িয়ে দিয়েছে এর আবেগ। রাস্তার মাঝ বরাবর নাগেশ্বর গাছ লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে ডিভাইডার। এছাড়া নবনির্মিত ড. ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবন, বঙ্গবন্ধু চত্বর, চেতনা একাত্তর ও দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ শহীদ মিনার শেষ প্রলাপ দিয়েছে এর সৌন্দর্যে। সহ-কার্যক্রম : একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি শাবিপ্রবিতে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি চলে তা হলো এর সহকার্যক্রম। বিশ^বিদ্যালয়ে প্রক্টর অফিস অনুমোদিত বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও ক্রীড়া সংগঠন রয়েছে ৫৭টি। দেখা যায়, সপ্তাহের প্রায় প্রতিটি দিনই কোন না কোন অনুষ্ঠান লেগেই আছে। তাই নিজেকে বিকশনের অন্যতম সুযোগ হতে পারে এই ক্যাম্পাস। এছাড়া সাংবাদিকতা বিভাগ না থাকলেও এখানে সাংবাদিকদের সংগঠন শাবি প্রেসক্লাব রয়েছে যা দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত আস্থার সঙ্গে কাজ করছে। মোট আসন ও অনুষদ : ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ‘এ’ ও ‘বি’ এই দুই ইউনিটে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগের জন্য ‘এ’ এবং বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগের জন্য ‘বি’। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগে মোট আসন সংখ্যা ১৬৫৫টি। এর মধ্যে সাধারণ আসন ১৫৬৩টি এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বিকেএসপি এবং পৌষ্যদের জন্য মোট ৯২টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে। আবেদনের যোগ্যতা : বিজ্ঞান শাখা থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীরা ‘এ’ ও ‘বি’ উভয় ইউনিটে এবং মানবিক ও ব্যবসায় শাখা থেকে পাসকৃত শিক্ষার্থীরা শুধু ‘এ’ ইউনিটে আবেদন করতে পারবে। আবেদন করার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে এ ইউনিটে এইচএসসি/সমমান ও এসএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩,০সহ মোট ৬.৫ এবং বি ইউনিটে ৭ থাকতে হবে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়া যাবে। জি সি ই ‘ও’ লেভেলে কমপক্ষে ৩টি বিষয়ে বি গ্রেডসহ ৫টি বিষয়ে পাস এবং জি সি ই ‘এ’ লেভেলে কমপক্ষে ২টি বিষয়ে বি গ্রেডসহ ৩টি বিষয়ে পাস থাকতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াড, আন্তর্জাতিক ইনফরমেটিক্স অলিম্পয়াড, আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পয়াড, অন্যান্য স্বীকৃত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পয়াডে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ মেডেলপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই পছন্দের বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় ও পরীক্ষা পদ্ধতি : ৭০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষার জন্য সময় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। ভর্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বহু নির্বাচনী পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা ২৬ নবেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় এবং ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষা বিকেল ২টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি ও দুই কপি প্রবেশপত্র প্রিন্ট করে আনতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া : ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করার জন্য টেলিটক সংযোগ থেকে ঝটঝঞ, শিক্ষা বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর, এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার রোল নম্বর, এসএসসি/সমমান পরীক্ষার রোল নম্বর, পাসের সাল এবং সাব-ইউনিটের কী ওয়ার্ড (অ, ই১, ই২) লিখে এসএমএস করতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। (উদাহরণ- ঝটঝঞ <স্পেস> ঝণখ <স্পেস> ১২৩৪৫৬ <স্পেস> ২০১৬ <স্পেস> ঝণখ <স্পেস> ৬৫৪৩২১<স্পেস> ২০১৪ <স্পেস> ই১)। ভর্তি সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে জানতে চাইলে [email protected] তে যোগাযোগ করে অথবা ww w.sust.edu/admission ভিজিট করে জানা যাবে।
×