রাশিয়ার তেল বাংলাদেশে
পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রাশিয়ার ৫০ লিটার অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। বর্তমানে এ তেল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া ডলার সাশ্রয়ে শিপিং কর্পোরেশনের তিনটি অয়েল ট্যাংকারের মাধ্যমেও তেল আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি আরও জানান, ‘বিশ্বের যে দেশে তেলের দাম কম পাওয়া যাবে সেখান থেকেই আমদানি করা হবে।’ জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দুইভাবে লাভবান হবে বাংলাদেশ। কম মূল্যে জ্বালানি তেল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ কমবে ডলারের ওপর। কাটবে দেশের চলমান সঙ্কটও। তবে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে যেন কোন প্রভাব না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।
বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় রাশিয়া থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়টি। শুরুতে অপরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব দিলেও দেশটি এখন পরিশোধিত তেল সরবরাহেও আগ্রহী। এরই মধ্যে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে তেলের নমুনা। তবে পুরো বিষয়টিই এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। আর দেশটি থেকে জ্বালানি তেল আমদানি নিয়ে মূল্য পরিশোধসহ নানা বিষয়ে রয়েছে বিভিন্ন জটিলতা। আর এসব নিয়ে শিগগিরই রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন-বিপিসি সূত্র।
এ ব্যাপারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির আগে বিবেচনায় রাখতে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও। সরাসরি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করতে হলে পরিশোধিত তেল আনার পক্ষেই মতামত দিচ্ছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তবে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে আরেক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্য পরিশোধ। আর এক্ষেত্রে ভাল বিকল্প হতে পারে দ্বিপাক্ষিক মুদ্রা বিনিময়, এমনটাই মনে করেন অর্থনীতিবিদ মুস্তাফিজুর রহমান।
ঝুটের প্রথম জাহাজ যাচ্ছে ভারতে
গার্মেন্টের ফেলে দেয়া ১১২ মেট্রিকটন ঝুট নিয়ে বাংলাদেশী পাতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি রাজ্জাকু’ যাচ্ছে ভারতে। শনিবার (২৭ আগস্ট) মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর থেকে ঝুটের প্রথম চালান ভারতের অসম রাজ্যের উদ্দেশে রওয়ানা হবে। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ওই জাহাজটিতে ঝুট ভর্তি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক রুটে চলার উপযোগী সুমনা কর্পোরেশনের ওই জাহাজের সব স্টাফদের কাগজপত্রও প্রস্তুত। ভারতের সঙ্গে নৌ-প্রটোকল চুক্তির অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জ থেকে প্রথমবারের মতো পণ্য নিয়ে জাহাজটি রওনা দিতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গার্মেন্টসের অপ্রয়োজনীয় অংশ- ঝুট রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বৃদ্ধি পাবে। কারণ প্রতিদিন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলো থেকে শত শত টন ঝুট বের হচ্ছে। রিভারপোর্টটির দায়িত্বশীল সিন্টু কুমার রুদ্র জানান, চলতি মাসে ২২ আগস্ট থেকে জাহাজটিতে ঝুট উঠানো শুরু হয়। ধলেশ্বরীর তীরের চরমুক্তারপুরেই সামিট গ্রুপের রিভারপোর্ট থেকেই প্রথম নৌপথে ভারতে এ ঝুট রফতানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ভারতে সফরের আগ মুহূর্তে নৌপথের এই রফতানি বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। এ দিকে এই ঝুট রফতানিকে ঘিরে চরমুক্তারপুরে বিশেষ পরিবেশ বিরাজ করছে।
সোনালি আঁশের রুপালি কাঠি
কুষ্টিয়াতে সোনালি আঁশ পাট এবার কৃষকের কাছে ভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। এবার শুধু আঁশ নয়, পাটকাঠিও দেখাচ্ছে আশার আলো। আগে পাটের দুর্দিন গেলেও এবার পাটের সুদিন ফিরেছে। কারণ পাটের আর কোন কিছুই মূল্যহীন নয়। এক সময় পাটকাঠি ফেলে দেয়া হতো। কখনও বা রান্নার জ্বালানি, আবার ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহৃত হতো পাটকাঠি। কিন্তু এখন বিশ্ববাজারে পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে। তাইতো এ অঞ্চলের কৃষক সোনালি আঁশের রুপালি কাঠিতে আশার আলো দেখছেন।
কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ এলাকার পাট চাষীরা জানান, গত কয়েক বছর আগেও পাটকাঠির তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন বেশ চাহিদা। দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা এসে পাটের রুপালি কাঠি কিনছেন। তারা ভাল দামও দিচ্ছেন। ১০০ মোটা পাটকাঠি বিক্রয় হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। শুধু পাট বিক্রয় করেই নয়, এবার পাটের এ কাঠিও আমাদের আশা জাগিয়েছে বলে জানান চাষীরা। রুপালি কাঠি দেশের পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাটকাঠির ছাই বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তাই ভাল দাম পাওয়া যাচ্ছে।
পাটকাঠিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু কারখানা গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন দেশে পাটকাঠির ছাই থেকে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণেই প্রতিনিয়ত পাটকাঠির চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ জেলার ৬টি উপজেলায় ১ লাখ ১ হাজার ২৮৪ একর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের থেকে ৩০ ভাগ বেশি।