ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমলেই ব্যাংক খাতের ঝুঁকি কমবে ॥ গভর্নর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ৭ জুলাই ২০২৫

রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমলেই ব্যাংক খাতের ঝুঁকি কমবে ॥ গভর্নর

ড. আহসান এইচ মনসুর

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে সবচেয়ে বেশি আর্থিক অনিয়ম হয়েছে ব্যাংক খাতে। যার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল শতভাগ। আর্থিকভাবে রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলায় রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ হতে হবে। রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তন না হলে প্রাতিষ্ঠানিক ঝুঁকি এড়াতে নজরদারি দিয়ে সম্ভব নয়। যে কারণে আগামীতে এ ধরনের লুটপাট বন্ধ করতে হলে রাজনীতিকদের শুদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে ব্যাংক খাতে রিস্ক বেইজ সুপারভিশন পদ্ধতি চালুর অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা  বলেন।  এ সময় গভর্নর বলেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজন। এ জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে সব ব্যাংকে রিস্ক বেইজ সুপারভিশন (আরবিএস) পদ্ধতি শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পূর্ব-প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে ২০টি ব্যাংকের সঙ্গে পাইলটিং শেষ হয়েছে, বাকি ব্যাংকগুলোতে পাইলটিং আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে। 
গভর্নর বলেন, ২০টি ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে সব ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। ২০২৬ এর জানুয়ারি থেকে ব্যাংক রিস্ক বেইসড সুপারভিশন শুরু হবে। ছয়টি ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয়ে গভর্নর বলেন, এসব ব্যাংকের সম্পদের মান নিরূপণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। একীভূত করার কাজও এগিয়ে চলেছে। যদি কোনো ব্যাংক একীভূত হতে না চায় তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে। যদি তারা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে পারে তা হলে তাদের বক্তব্য-প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই নতুন তদারকি কাঠামোর আওতায় প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক, বাজার, পরিচালনাগত, আইনগত এবং কৌশলগত ঝুঁকি আরও সঠিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। সেই ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও দ্রুত নেওয়া যাবে। এতে প্রতিটি ব্যাংকের কার্যক্রম আলাদাভাবে মূল্যায়ন এবং ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোয় দ্রুত হস্তক্ষেপ করা সহজ হবে। 
নতুন কাঠামো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব সংগঠনেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। নতুনভাবে গঠন করা হবে একাধিক তদারকি বিভাগ, যেমন তদারকি নীতিমালা ও সমন্বয় বিভাগ, তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং তদারকি বিভাগ, এবং অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধবিষয়ক ঝুঁকি তদারকি বিভাগ। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাংকের জন্য থাকবে পৃথক তদারকি দল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই পরিবর্তন সফল করতে তদারকির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি তফসিলী ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের জন্যও বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলো কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।
তদারকিকে তথ্যনির্ভর করতে তৈরি করা হচ্ছে নতুন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ব্যবস্থা। একটি কেন্দ্রীয় তদারকি তথ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হচ্ছে, যার মাধ্যমে দেশের যে কোনো ব্যাংকের ঝুঁকির চিত্র সহজে বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের আশা, এই রূপান্তরের ফলে ব্যাংক খাতে জবাবদিহিতা আরও শক্ত হবে। একই সঙ্গে তদারকি কার্যক্রম হবে ফলপ্রসূ এবং প্রযুক্তিনির্ভর উদ্ভাবনে ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসবে। এর মাধ্যমে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভিত্তিও আরও মজবুত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনে সব অংশীজনের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ কামনা করেছে। যাতে সম্মিলিতভাবে একটি আধুনিক, ঝুঁকি সচেতন এবং টেকসই ব্যাংকিং পরিবেশ গড়ে তোলা যায়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান, নুরুন নাহারসহ  অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্যানেল হু

×