ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

ছয় মাসে বন্ধ হয়েছে ১০ হাজার খামার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ৭ জুলাই ২০২৫

ছয় মাসে বন্ধ হয়েছে ১০ হাজার খামার

ছয় মাসে দেশে প্রায় ১০ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে

গত ছয় মাসে দেশে প্রায় ১০ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) নেতারা। তাদের দাবি, বাজারে ডিম ও মুরগির দাম কম থাকায় এ সময়ে দেশের প্রান্তিক খামারিদের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সংকট মোকাবিলায় ডিম মুরগির ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের উৎপাদনে ধরে রাখতে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করার দাবি করেন তারা।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তারা। একই সঙ্গে করপোরেট কোম্পানির নিজস্ব উৎপাদন ও কন্টাক্ট ফার্মিং সুষ্ঠু নীতিমালা এবং পোল্ট্রি ডেভেলপমেন্ট উন্নয়ন বোর্ড গঠনে দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। 
সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বাংলাদেশের পোল্ট্রি বাজার নিয়ন্ত্রণ হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। তারা (সিন্ডিকেট) চাইলে দাম বাড়াতে-কমাতে পারে। মুরগি বা ডিমের দাম বাড়লে সরকারও হইচই করে, নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু দাম কমলে, প্রান্তিক খামারিরা লোকসানে সরকার ঘুমিয়ে থাকে। তিনি বলেন, এখন মুরগি ও ডিমের দাম হঠাৎ করে কমে গেছে, তখন সাধারণ ভোক্তা হয়ত খুশি হন। কিন্তু আমরা প্রশ্ন করব, এই স্বস্তি কি আসলেই স্বস্তি না কি একটা সময় অস্বস্তির মূল কারণ হবে। প্রান্তিক খামারিদের পুঁজি, শ্রম ও স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ গড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা হচ্ছে, অথচ খামার পর্যায় বিক্রি করতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।
তিনি বলেন, এ দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ার মুরগির উৎপাদন ৫ হাজার ২০০ টন, প্রতিদিন ডিমের উৎপাদন ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি পিস। এর ভেতর যদি প্রান্তিক খামারিরা ৩ হাজার টন মুরগি এবং প্রতিদিন ৩ কোটি পিস ডিম উৎপাদন করে থাকেন। প্রতিকেজি মুরগিতে গড়ে ৩০ টাকা লোকসান ধরলে প্রতি টনে ৩০ হাজার টাকা, ৩ হাজার টন মুরগিতে প্রতিদিন লোকসান দাঁড়ায় ৯ কোটি টাকা এবং তিন কোটি পিস ডিমে প্রতিদিন ২ টাকা গড়ে লোকসান ধরলে প্রতিদিন ৬ কোটি টাকা দাঁড়ায়।

ডিম এবং মুরগিতে প্রতিদিন লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি টাকা। যা গত ৫ থেকে ৬ মাসে ডিম এবং মুরগিতে প্রান্তিক খামারিদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। তার দাবি, প্রতি কেজি সোনালি মুরগি উৎপাদন খরচ ২৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, যা খামার পর্যায় বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকার ভেতর। একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা, যা খামার পর্যায় বিক্রয় করতে হচ্ছে ৬ টাকা থেকে ৮ টাকার ভেতরে।
সংগঠনের সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মেজবাউল হক মারুফি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাউসার আহমেদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় পোল্ট্রি শুমারি ও ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি, সব ডিলার ও খামারি ব্যবসায়ীকে উদ্যোক্তা আইডি কার্ড দেওয়া, নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ ও নীতি নির্ধারণী সরকারি মিটিং প্রান্তিক খামারিদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ, প্রান্তিকদের জন্য সরকারি সব ধরনের নীতিগত সহায়তা ও জামানতবিহীন স্বল্প-সুদের ঋণ ব্যবস্থা করা,  ফিড, ভ্যাকসিন ও ওষুধের দামে স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারিভাবে ফিডমিল ও হ্যাচারি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ, আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও ল্যাব সুবিধা সম্প্রসারণ এবং জেলা উপজেলায় কোল্ড স্টোরের ব্যবস্থা করাসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

প্যানেল হু

×