ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

কেন ও কিভাবে সঞ্চয়

জলি রহমান

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ২৪ আগস্ট ২০২৪

কেন ও কিভাবে সঞ্চয়

অর্থনীতিতে একটা কথা আছে আয় বুঝে ব্যয় কর

অর্থনীতিতে একটা কথা আছে আয় বুঝে ব্যয় কর। অর্থাৎ আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হলেই ভোক্তার আর্থিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। ভোক্তা আয় থেকে সঞ্চয় বাদ দিয়ে ভোগ করবে। এখানে বিচ্যুতি ঘটলে ঘটতে পারে নানা রকম বিপত্তি। কেননা জীবনের নানা প্রয়োজন মেটাতে বা আকস্মিক দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমাদের সঞ্চয় থাকাটা খুব জরুরি।

আবার প্রয়োজনীয় বিলাসদ্রব্য ক্রয় বা সন্তানের উচ্চশিক্ষার্থেও সঞ্চয়ের অর্থ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য আমাদের ঋণ করতে হয় বা অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয়। অর্থ সঞ্চয় আপনাকে আর্থিক সহায়তার জন্য অন্যের ওপর নির্ভর না হয়ে বেঁচে থাকার ক্ষমতা দেয়। 
আমরা বিভিন্ন উপায়ে সঞ্চয়ের টাকা সংরক্ষণ করি।  গ্রামীণ এলাকায় ঘরের আলমারিতে বা মাটির ব্যাংকেই টাকা জমিয়ে রাখা হয় জরুরি প্রয়োজনে খরচ করার জন্য। এভাবে বহুদিন টাকা রাখলে তা বিভিন্ন উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন: বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে, আগুনে পুড়ে যেতে পারে কিংবা বেহাত হয়ে যেতে পারে।

হাতের কাছে থাকায় ভোগ-বিলাসে বা অপ্রয়োজনে যেকোনো সময় খরচও হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া ঘরে টাকা রাখার ফলে তা বৃদ্ধি পাবে না বরং কারণে-অকারণে টাকা ব্যয় হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টাকা সঞ্চয়ের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

সাধারণত ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব খুলে টাকা রাখা নিরাপদ। কেননা ব্যাংকে আমানত রাখলে তা একদিকে যেমন সুরক্ষিত থাকবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিমাণেও বাড়বে মুনাফা সহকারে এবং প্রয়োজনে যে কোনো সময় তা উত্তোলনও করা যাবে। 
বর্তমানে অর্থ সঞ্চয়ের নানা উপায় থাকলেও সরকারের বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র বা বন্ডে বিনিয়োগ করা নিরাপদ ও লাভজনক। সাধারণত দেশের স্বল্প আয়ের জনগণের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ জনগোষ্ঠী যেমন- মহিলা, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও সমাজের অনগ্রসর জনগাষ্ঠেীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনয়ন, বৈদেশিক নির্ভরতা হ্রাস এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সঞ্চয়পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়াগ ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অনেকের মধ্যে প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে সঞ্চয়পত্র কিনবেন। বর্তমানে দেশের যে কোনো ব্যাংক হতে আপনি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। ডাকঘর হতে সঞ্চয়পত্র কিনলেও ১ লাখ টাকার মূল্যের বেশি দিয়ে যদি আপনি সঞ্চয়পত্র কিনতে চান তবে অবশিষ্ট অর্থ ব্যাংকে জমা দিয়ে চেকে সঞ্চয়পত্র মূল্য পরিশোধ করতে হবে। মুনাফার হার যেহেতু নিম্নগামী তাই ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ না করাই ভালো। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আপনি বিভিন্ন মেয়াদে করতে পারবেন। তিন বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে  বর্তমানে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। সেটি এখন ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কমিয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। আর এই সঞ্চয়পত্রে যাদের বিনিয়োগ ৩০ লাখ টাকার বেশি তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ৯ শতাংশ হারে। টিআইএন সার্টিফিকেট পূর্বে ২ লাখ টাকার ওপরে ক্রয় করলেই দিতে হতো এখন ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত টিআইএন সার্টিফিকেট লাগে না।

পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা নেওয়া যায় মাসিক ভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে মুনাফার পরিমাণও নির্ধারণ করা আছে। যেমন ১০ হাজার টাকায় ৯৬ টাকা, ২০ হাজার টাকায় ১৯২ টাকা, ৫০ হাজার টাকায় ৪৮০ টাকা, ১ লাখ টাকায় ৯৬০ টাকা, ২ লাখ টাকায় ১ হাজার ৯২০ টাকা। পরিবার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ৫ লাখ টাকার নিচে হলে মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ হবে।

বিনিয়োগ এর চেয়ে বেশি হলে উৎসে কর হবে ১০ শতাংশ। মাসিক মুনাফা নেওয়ার পরও নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে মূল টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন বা অর্থ তুলে নিলে মুনাফা হিসেবে নেওয়া টাকা কেটে রেখে বাকি অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। পরিবার সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ পর্যন্ত প্রতি লাখে ৯১২ টাকা এবং ৫ লাখ অতিক্রম করলে ১৫ লাখ পর্যন্ত প্রতি লাখে ৮৬৪ টাকা মুনাফা দেওয়া হয়।
যারা ক্রয় করতে পারবেন-
* আঠার ও তদূর্ধ্ব বয়সের যে কোনো বাংলাদেশী মহিলা
* যে কোনো বাংলাদেশী শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ ও মহিলা) এবং
* পঁয়ষট্টি ও তদূর্ধ্ব বয়সের যে কোনো বাংলাদেশী পুরুষ বা মহিলা।
ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমা
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। যুগ্মনামে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা। উল্লেখ্য যে, পরিবার সঞ্চয়পত্র যৌথ নামে ক্রয় করা যায় না।
মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব খুলেও নিরাপদে টাকা সঞ্চয় করা যায়। যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মেয়াদি আমানত করেও টাকা সঞ্চয় করা যায়। বর্তমানে সঞ্চয়ের জন্য বহুল জনপ্রিয় আরেকটি মাধ্যম হলো বীমা। বীমা হলো আর্থিক ক্ষতি থেকে সুরক্ষার একটি উপায় যেখানে, একটি ফি এর বিনিময়ে, একটি পক্ষ নির্দিষ্ট ক্ষতি বা আঘাতের ক্ষেত্রে অন্য পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়।

তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই জেনে-বুঝে ও নির্ভরশীল মাধ্যমে বীমা করতে হবে। পুরনো হলেও অনেকে এখনো পোস্ট অফিসে অর্থ সঞ্চয় করতে পছন্দ করেন। সেখানে এফডিআর করলে তিন বছর পরে প্রতি লাখে পাওয়া যায় ৩০ হাজার ৪৫৬ টাকা। এফডিআরে ব্যাংকভেদে মুনাফা হয় ৫ থেকে ৭ শতাংশ।

×