ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিটিআরসি’র অডিট আপত্তির মূল পাওনা সম্পূর্ণ পরিশোধ করেছে শুধু বাংলালিংক

রহিম শেখ

প্রকাশিত: ০১:৪৩, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

বিটিআরসি’র অডিট আপত্তির মূল পাওনা সম্পূর্ণ পরিশোধ করেছে শুধু বাংলালিংক

দেশের শীর্ষ তিন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিক

দেশের শীর্ষ তিন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিকের সঙ্গে অডিট আপত্তি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছে টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। কিছু কিছু অপারেটরের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি জলঘোলা করে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত গড়িয়েছে। শুধু রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত গিয়ে ব্যাপারটি থেমে থাকেনি বরং গ্রামীণফোন ও রবির ক্ষেত্রে বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্তও। অপারেটর তিনটির মধ্যে কেবল বাংলালিংকই অডিট আপত্তির মূল অর্থ ১৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধ করেছে।  
বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে ১৯৯৭-২০১৯ পর্যন্ত বাংলালিংকের কার্যক্রম অডিট করা হয়। সব মিলিয়ে বাংলালিংকের অডিট আপত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮২৩ কোটি ৫ লাখ ৬ হাজার ১৫৫ টাকা। যার মধ্যে অর্ধেক হচ্ছে অডিটের বিলম্বিত ফি ৪৩০ কোটি টাকা। বাংলালিংকের কাছে টু-জির ভ্যাটসংক্রান্ত ২২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা পাবে বিটিআরসি। যার অর্ধেক পরিমাণ টাকা কিস্তিতে শোধ করেছে বাংলালিংক। গত ১৯ নভেম্বর বিটিআরসিতে গিয়ে অডিট আপত্তির মূল টাকা ১৬৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার পুরোটা জমা দেয় অপারেটরটি। ওইদিন টুজির ক্লেইমের একটি কিস্তি দেয় তারা। এর একদিন পরই বিটিআরসি বাংলালিংককে ৩ দিনের সময় দিয়ে মূল টাকা হিসেবে টুজি রিনিউয়াল ক্লেইমের বাকি ১১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা একসঙ্গে দিতে চিঠি দেয়। এরপর বাংলালিংক এই টাকা কিস্তিতে নেওয়ার অনুরোধ জানায়।
তবে বাংলালিংক বাদে অন্য দুই অপারেটর অডিট আপত্তির মূল টাকা এখনো পরিশোধ করেনি। অডিট আপত্তির বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশে অডিট আপত্তির মোট ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা থেকে গ্রামীণফোন ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। অন্যদিকে মোট ৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা থেকে ১৩৮ কোটি পরিশোধ করেছে রবি। কিন্তু এতে অডিট আপত্তির মূল টাকা এখনো পরিশোধ হয়নি।  

তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসির টু-জি’র ভ্যাটসংক্রান্ত পাওনার ক্ষেত্রে বাংলালিংকের ওপর বিলম্ব ফি যোগ করা হলেও অন্য দুইটি অপারেটরের ক্ষেত্রে এটি যোগ করা হয়নি। বিটিআরসির কমিশনার (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) মুশফিক মান্নান চৌধুরী জনকণ্ঠকে, বলেন, বাংলালিংক অডিট ক্লেইমের মূল টাকা পরিশোধ করেছে। এই টাকা রাষ্ট্রের উন্নয়নে কাজে লাগবে। আমরা বলেছিলাম মূল টাকা দেওয়ার পর লেট ফি নিয়ে আলোচনার দরজা খোলা রাখব। তিনি বলেন, বিলম্বিত ফির বিষয়ে তারা আবেদন করেছে। এখন সে আলোচনার সুযোগ তৈরি হলো। অন্য দুইটি অপারেটরের ক্ষেত্রে বিলম্ব ফি যোগ করা হয়নি এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে সব অপারেটই সমান। নিয়মানুযায়ী কোনো পরিবর্তন হবে না।  
তবে অডিট আপত্তির মূল পাওনা সম্পূর্ণ আদায়ের ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হবে বলে মনে করেন বিটিআরসি-এর চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, কিস্তিতে টাকা দেওয়ার জন্য লেট ফি দিতে হচ্ছে। তবে এই কিস্তি বিটিআরসি নির্ধারণ করেনি বাংলালিংক নিজেরাই দিচ্ছে, নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী। মূল টাকা জমা দেওয়ার জন্য সর্বশেষ যে চিঠিটা দেওয়া হয়েছে সে চিঠিতে যখন থেকে টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে ওই তারিখের পর  থেকে এই লেট ফি যোগ হবে। বিটিআরসির সর্বশেষ হিসাবে অক্টোবরে দেশে মোট মোবাইল সংযোগ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার। অক্টোবর এই সংযোগ বেড়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার।

সেপ্টেম্বরে মোট সংযোগ ছিল ১৮ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার। তবে বাড়তি এই সংযোগ শুধু বেসরকারি ৩ মোবাইল অপারেটরের। এই সময়ে টেলিটকের গ্রাহক উল্টো কমেছে। অক্টোবরে গ্রামীণফোনের সংযোগ ৮ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার, সেপ্টেম্বরে এটি ছিল ৮ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার, আগস্টে ৮ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার। রবির অক্টোবরে ৫ কোটি ৭৯ লাখ ৬০ হাজার, সেপ্টেম্বরে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ২০ হাজার, আগস্টে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার।

×