
প্রতিকেজি ২০-৩০ টাকা বেড়েছে ফলের দাম
রাজধানীতে আরও এক দফা বেড়েছে ফলের দাম। এক সপ্তাহ আগের দামের চেয়ে বেশিরভাগ ফল এখন ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে প্রতিকেজি ২০-৩০ টাকা বেশিতে। মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর ফলপট্টি বাজার, কাজীপাড়া, ফার্মগেট ও পল্টনের দোকানগুলোতে সরেজমিনে এ চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কমলা লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা দরে। ভারতীয় সবুজ কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। মাল্টার প্রতি কেজি ২৮০ টাকা, বড় আকারের আপেল ৩৪০ টাকা, ছোট আকারের আপেল ২৪০ টাকা, চীন থেকে আসা আপেল বাজারভেদে ২৪০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আঙ্গুরের কেজি ৪০০ টাকা, নাশপাতি ২৮০ টাকা, আনার বাজার ও ধরনভেদে ৫৫০-৬০০ টাকা, ড্রাগন ফল বাজার ও ধরনভেদে ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রায় সব ধরনের কাঁচাফলের বাজার প্রতিবেশী ভারতনির্ভর। দুর্গাপূজার কারণে সীমান্ত বন্ধ থাকায় আমদানি কমেছে। সেজন্য পুরান ঢাকার আড়তে ফল কম এসেছে, বেড়ে গেছে দাম। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
মিরপুর ১০ নম্বর সেক্টরের ফল বিক্রেতা বাবর আলী বলেন, গত বৃহস্পতিবার এসব ফল ১০-২০ টাকা কম দামে বিক্রি করেছি। কোনো কোনোটি ৩০ টাকা কম দামেও বিক্রি করেছি। এখন আর সেটা পারছি না। ফলের আড়তে দাম বেড়েছে, আগের দামে আর বিক্রি করতে পারছি না। আনার ও আঙ্গুর নতুন করে মার্কেট থেকে আনা হয়নি। আঙ্গুর নেই, পুরাতন আনারই বিক্রি করছি। এখন যেমন ক্রেতা কম, আবার দামও বেড়েছে।
পুরানা পল্টনের ফল বিক্রেতা আমির আলীর বক্তব্যও একই। তিনি বলেন, এসব ফলের দাম স্বাভাবিক হতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে। তারপর আবার আগের দামে বিক্রি করতে পারবো। এর মধ্যে আড়তে বেশি বেশি ফল পাওয়া যাবে। আড়তে এখন যেসব ফল পাওয়া যাচ্ছে দুদিন আগেকার। অবশ্য সম্প্রতি ডলারের দাম বৃদ্ধি ও ফল আমদানিতে মার্জিন বৃদ্ধির কারণে যে দাম বেড়েছে তা কমার আশা নেই বলেও মনে করেন এই বিক্রেতা।এদিকে বাজারে বড় ডাব ১২০ থেকে বাজারভেদে ১৩০ টাকা, মাঝারি ডাব ১০০ টাকা এবং ছোট্ট ডাবের পিস ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়ারার কেজি ৬০ টাকা থেকে বাজার ও ধরনভেদে ৮০ টাকা রাখা হচ্ছে। এক কেজি ওজনের দেশি পেঁপে বাজারভেদে ৯০-১০০ টাকা, আমদানি করা পেঁপের কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় জাম্বুরার প্রতিটির দাম ৮০ টাকা, ছোট আকারের জাম্বুরা বাজারভেদে ৪০-৫০ টাকা রাখা হচ্ছে। বড় আমড়ার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। বড় আনারস ৫০-৭০ টাকা পিস এবং ছোট আনারস ৩০-৪০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।
খেজুর প্রধানত রোজার মাসে বেশি বিক্রি হলেও অন্যান্য সময়েও মেলে এই ফল। ভালো মানের সৌদি খেজুরের কেজি (মরিয়ম) বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। একই নামের অন্য দেশের বলে তা কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। আকারে ছোট খেজুর ৪০০ টাকা কেজি, খুরমা খেজুর ৪৫০ টাকা, তিউনিশিয়ার খেজুর ৫০০ টাকা, মিসরের বিশেষ ধরনের খেজুর প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকায়। মূল্যবৃদ্ধির দৌড়ে দেশী কলাও থেমে নেই। প্রতি ডজন সাগরকলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, নরসিংদীর সাগরকলা বাজারভেদে ১৪০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবরি কলার প্রতি ডজনের দাম রাখা হচ্ছে ১২০ টাকা। একই কলা রাজধানীর বিভিন্ন গলিতে ফেরি করে ১০-১৫ টাকা কম দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ফলের দাম বৃদ্ধিতে নিরুপায় ক্রেতারা। তুলনামূলক সচ্ছল মানুষ এক্ষেত্রে বেশি চাপে না পড়লেও কম আয়ের মানুষকে একটু দরদাম করে কিনতে দেখা গেছে।
রাজধানীর পল্টনে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের নিচে ফল বাজার থেকে দুই কেজি আপেল কিনেই টাকা দিয়ে চলে গেলেন আলী আজিমুস্সান। কেজি কত দরে ফল কিনলেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘৩৫০ টাকা কেজি দাম নিয়েছে।’ আগের দামই আছে, নাকি বেড়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘কম বেশি কাকে জিজ্ঞেস করব?’ মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের পাশে ফলপট্টিতে ফল কিনতে গিয়ে দাম শুনে চমকে ওঠেন পঞ্চাশোর্ধ্ব নন্দিতা দত্ত। দোকানদার এক কেজি আপেলের দাম চায় ৩৬০ টাকা। এত দাম কেন, নন্দিতার কথার জবাবে দোকানদার বলেন, কয় কেজি নেবেন, কিছু কম রাখব, আসেন। শেষে ৩৫০ টাকায় কমলা লেবু কেনেন নন্দিতা। তিনি এসময় বলেন, বাজেটে মিলছে না, আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছি, কিনতে হবে, নিরুপায়।