ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি

মূল্যস্ফীতি কমানোর চ্যালেঞ্জ

অলোক আচার্য

প্রকাশিত: ০১:৩৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মূল্যস্ফীতি কমানোর চ্যালেঞ্জ

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি

মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে প্রথম হলো খাদ্য। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই বাজারের ব্যাগ হাতে ছুটতে হয় সারাদিনের খাদ্য জোগানের জন্য। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ক্রমশই বিশ^কে একটি অনিবার্য পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। বিশ^জুড়েই খাদ্য সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। ইউক্রেন থেকে খাদ্যপণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশ্বজুড়েই হু হু করে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। মানুষের নাভিশ্বাস উঠে। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর অর্থনীতির ওপর আঘাত আসতে পারে সে আঁচ আগেই পাওয়া গিয়েছিল। যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে যোগ হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ভারতসহ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় চাল রপ্তানিকারক দেশগুলোতে চলতি বছর উৎপাদন কম হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরপরও বিশ্বের প্রধান খাদ্যপণ্যগুলোর দাম গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকাশিত আগস্ট মাসের সূচক থেকে এ তথ্য জানা যায়। চাল ও চিনির দাম বাড়লেও এর আগের মাসে বেশিরভাগ খাদ্যপণ্যের দাম তুলনামূলক বেশ কমে যাওয়ায় সার্বিক মূল্যসূচক নি¤œমুুখী রয়েছে। সংস্থাটির মূল্যসূচক আগস্টে ১২১ দশমিক ৪ এ নেমে এসেছে যা গত জুলাইতে ছিল ১২৪ পয়েন্ট। 
চীনের মূল্যস্ফীতির হার কমতে কমতে তা ঋণাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। গত বছর মূল্যস্ফীতি বাড়ায় উন্নত দেশগুলোতেও খাদ্যপণ্যের মূল্য রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক দেশ এখন মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষত শ্রীলঙ্কার কথা উল্লেখযোগ্য। টানা চার দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর গত বছর সেটি ৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে  নেমে ৩ শতাংশে আসে। এদিকে বিশ্ববাজারে দাম কমতির দিকে থাকলেও দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থির। আজ ডিম তো কাল কাঁচামরিচ। তারপর আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। ভোজ্য তেলের দাম কমানো হয়েছে।

তবে কাঁচাবাজারে স্বস্তি মিলছে না। মাছ, মাংসের দাম ক্রমেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। সুতরাং মানুষের জীবনে স্বস্তি দিতে এসবের দামে লাগাম টেনে ধরতেই হবে। যদিও বাজারে কর্তৃপক্ষ অভিযান চালিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করছে। কিন্তু লাভ হচ্ছে কমই। কারণ একটির দাম কমতে না কমতেই আরেকটি পণ্যের দাম বাড়ছে। বাংলাদেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমলেও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি কমার সুফল ভোগ করতে পারছে না মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।

কনজুমার প্রাইস ইনডেক্সের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,  গেল আগস্ট মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে। যা মে মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে এটা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। তবে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশে। প্রায় সব খাদ্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল মানুষের জীবন। প্রায় সবার কথায় উঠে এসেছে এর পেছনের দুষ্টচক্রের কথা। এই দুষ্টচক্র ভেঙেই খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। 
দেশের সাফল্য এভাবে ম্লান হতে দেওয়া যায় না কেবল অসাধু ব্যবসায়ীদের লোভের কারণে। এছাড়া এর সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। মাছ, ডিম বা মাংস অথবা সবজি যদি পরিমাণমতো না পাওয়া যায় তাহলে ভিটামিনের ঘাটতির অভাবে নানা অসুখের জন্ম নিতে পারে। তাছাড়া পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য দরকার সুষম খাদ্য। অথচ তিনবেলা খাবার জোগাড় করতেই অনেককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পণ্যমূল্যে কারসাজি বন্ধ করতেই হবে। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে হবে। বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে দেশের খাদ্যপণ্যের মূল্যে সঙ্গতি আনতে হবে।

আর একেক সময় হঠাৎ দাম বৃদ্ধি করে মানুষকে জিম্মি করে তোলা বন্ধ করতে হবে। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। শুধু উন্নত দেশ নয়। এসবের ধাক্কায় দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির অবস্থা হচ্ছে শোচনীয়। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ঠেকানোই এখন আগামীর চ্যালেঞ্জ। যেখানে জনগণের স্বস্তি নির্ভর করছে।

×