ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

বাঙালি সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘কাচারি ঘর’

নিজস্ব সংবাদদাতা, মুকসুদপুর

প্রকাশিত: ২১:০১, ৩ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২৩:৪১, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

বাঙালি সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘কাচারি ঘর’

ছবি:গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের খান্দারপাড়

এক সময়ে কাচারি ঘর ছিলো গ্রাম বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য,কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একটি অংশ। গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ গৃহস্থের বাড়িতে এক সময়ে কাচারি ঘর দেখা যেত। কালের বিবর্তনে বাঙালির সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কাচারি ঘর।

গেস্টরুম কিংবা ড্রয়িং রুমের আদি ভার্সন কাচারি ঘর। এখন আর গ্রামীণ জনপদে কাচারি ঘর দেখা যায় না। প্রাচীনকালে মূল বাড়ি থেকে একটু দূরে আলাদা খোলামেলা  জায়গায় কাচারি ঘরের অবস্থান ছিল।অতিথি, পথচারী কিংবা সাক্ষাৎপ্রার্থীরা এই ঘরে এসেই বসতেন। প্রয়োজনে এক-দুই রাত যাপনেরও ব্যবস্থা থাকতো কাচারি ঘরে। 

কাচারি ঘর ছিল বাংলার অবস্থাসম্পন্ন ও মধ্যবিত্তের গৃহস্থের আভিজাত্যের প্রতীক চারিদিকে ঢেউ টিনের বেড়া সঙ্গে কাঠের কারুকাজ করে উপরে টিন অথবা ছনের ছাউনি থাকতো কাচারি ঘরে। যা অতি প্রাকৃতিকবান্ধব পরিবেশ দিয়ে আবেষ্টিত ছিল।

তখনকার যুগে বৈদ্যুতিক পাখা না থাকলে কাচারি ঘর ছিল আরামদায়ক শীতল পরিবেশ। তীব্র গরমেও কাচারি ঘরের খোলা জানালা দিয়ে হিমেল বাতাস বইতো আলোচনা, শালিস-দরবার, গল্প-আড্ডার আসর বসতো কাচারি ঘরে। 

আগের দিনে নিজেদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে মানুষজন বেশি হলে ছেলেরা কাচারি ঘরে থাকতেন আর মেয়েরা থাকতেন ভিতর বাড়িতে।

বর্ষা মৌসুমে গ্রামের লোকজনদের উপস্থিতিতে কাচারি ঘরে বসতো পুঁথি পাঠ ও জারি গান, লোকগীতি । পথচারীরা এই কাচারি ঘরে ক্ষণিকের জন্য বিশ্রাম নিতেন। বিপদে পড়লে রাত যাপনের ব্যবস্থা থাকতো কাচারি ঘরে।

গৃহস্থের বাড়ির ভিতর থেকে খাবার পাঠানো হতো কাচারি ঘরের অতিথিদের জন্য। আবাসিক গৃহশিক্ষকের (লজিং মাস্টার) ও আররি শিক্ষার ব্যবস্থার জন্য কাচারি ঘরের অবদান অনস্বীকার্য। মাস্টার ও আররি শিক্ষার হুজুরের জন্য কাচারি ঘরে থাকার ব্যবস্থা ছিল। কোন কোন বাড়ির কাচারি ঘর সকাল বেলা মক্তব হিসেবেও ব্যবহৃত হত।

জানা যায়, ঈশা খাঁর আমলে কর্মচারীদের খাজনা আদায়ের জন্য কাচারি ঘর ব্যবহার করা হতো। জমিদারি প্রথার সময়ও খাজনা আদায় করা হতো গ্রামের প্রভাবশালী গ্রাম্য মোড়লের বাড়ির সামনের কাচারি ঘরে বসে। এখন আর কাচারি ঘর তেমন চোখে পরে না। 

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের খান্দারপাড়, গোবিন্দপুর, পশারগাতী, ননীক্ষির, বাটিকামারী এলাকার কিছু গ্রামে জীর্ণ শীর্ণ অবস্থায় কাচারি ঘর দেখতে পাওয়া যায়।
 

মহি

×