.
আমার প্রথম ঈদের স্মৃতি ৩-৪ বছর বয়সের। আমরা থাকতাম টিকাটুলী পাড়ায়, আমার জন্ম-পাড়া। ৩ বছর পর্যন্ত বোধহয় আমাকে মসজিদের ঈদের নামাজে নেওয়া হয়নি। যা-ই হোক এর কিছুদিন পর ঈদ আসে আর আমি নতুন কাপড়-চোপড় পরে ঈদের নামাজে যাই বাবা ও বড় ভাইদের সঙ্গে। মধ্য পঞ্চাশ দশকের কথা।
ঈদের আগের রাতে ও ঈদের দিন সমান মজার হয় বাচ্চা হলে। মনে হচ্ছিল এই দিনটার উদ্দেশ্য হচ্ছে ভালো খাওয়া আর ভালো কাপড়-চোপড় পরে ঘুরে বেড়ানো। মা গল্প বলেছিলেন এমন দিনে ফেরেশতারা নাকি নিচে নেমে আসে মানুষের কাছে, অনেকে নাকি নামাজ পড়ে মসজিদে। তাই মসজিদে আমিও চারদিকে তাকাচ্ছিলাম, দুই একজনকে বেশ ফেরেশতা ফেরেশতা লাগছিল যদিও, ঠিক জানা নেই তারা কেমন দেখতে হয়। তবে সেই রাতে আমার কয়েক বছরের বড়, মেজো ভাই জানালেন আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে তারা দেখিয়ে, ওগুলো ফেরেশতা, রাতে আলো ফেলে যাতে মানুষ দেখতে পায় অন্ধকারে।
সেই সময় বাড়িতে ঈদের কাপড় বানানো হতো- মা যে সব সেলাই করতেন তা নয়, অন্যরাও ছিল। তা ছাড়া ছিল বাড়ির দর্জি। সবার জন্য পাঞ্জাবি বানানো হয় কিন্তু আমারটা গায়ে একটু টাইট লাগছিল তাই আমার পছন্দ হয়নি। বলা যায় তখন থেকে আমি একটু মোটা হওয়া শুরু করেছি। দিনটা মন খারাপ করেই পার হলো। কিন্তু রাতের দিকে যখন বাবা বাড়ি ফিরলেন কাজ থেকে আর সবার কাপড়-চোপড় দেখতে চাইলেন, আমি নিজেরটা পড়লাম। কিন্তু প্রায় কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে। ৮-৯টার দিকে সেটা ফুঁপিয়ে কান্নায় পরিণত হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটা বেশ জোরে চিৎকার করে কান্নায় প্রমোশন পেল।
শেষে কী আর করা, বাবা গাড়ি বার করলেন এবং আমরা সবাই রওনা হলাম পুরান ঢাকার দিকে। তখন নতুন ঢাকা তেমন হয়নি, দোকানপাট অনেক আগেই ঘুমাতে যেত। আমাদের গাড়িটা ছিল উইলিস জিপ। নাম্বারটা এখনো মনে আছে, কইগ ৪৬২। রাতের রাস্তা কোনো ট্রাফিক নেই, আমরা বেশ জলদি পৌঁছে গেলাম চকবাজার, সব কিছুর আড্ডাখানায়। আমার বাবা ন্যাশনাল ব্যাংক/সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন, সদরঘাট ব্রাঞ্চের ম্যানেজার তাই পুরান ঢাকা তার চেনা। আমি ওই প্রথম দেখলাম চাঁদ রাতের জাগ্রত ঢাকা, পুরান ঢাকায় কত মানুষ এসেছে কেনাকাটা করতে। আমরা এক কাপড়ের দোকানে গেলাম, একটা সাদা বাচ্চাদের গায়ে পাঞ্জাবি পরানো হলো, আমার পছন্দ, সবার পছন্দ, খেলা শেষ।