ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পলি-প্লাস্টিক দূষণ পেঁচিয়ে ধরেছে অক্টোপাসের মতো

সমুদ্র হক

প্রকাশিত: ০০:২৮, ৫ জুন ২০২৩

পলি-প্লাস্টিক দূষণ পেঁচিয়ে ধরেছে অক্টোপাসের মতো

বগুড়ায় প্লাস্টিকের শিশি বোতল ডাম্পিংয়ে জড়ো করা হয়েছে

মিনারেল ওয়াটার পান করছেন! আপ্যায়নে এবং নিজে পান করছেন সফ্্ট ড্রিংকস। সয়াবিন তেল সরিষার তেল জ্যাম জেলি আচার কনজুমার পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সবই ভরানো হচ্ছে পলি প্লাস্টিকের মোড়কে (বোতলে) বাজারে সওদাপাতি করছেন, দোকান থেকে নানা পণ্য কিনছেন তাও পলিব্যাগে। খালি পলি প্লাটিকের বোতল পথে ফেলে দিচ্ছেন। কখনো হকারদের কাছে বেচে দিচ্ছেন। যারা কক্সবাজার কুয়াকাটা দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে যান তারা প্লাস্টিকের বোতলে ভরা পণ্য ব্যবহারের পর ফেলে দেন সাগর তীরে, যেখানে সেখানে। এগুলোই পরে দূষণের দৈত্য হয়ে মানুষকে পেঁচিয়ে ধরছে অক্টোপাসের মতো। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ জুন পালিত হচ্ছে বিশ^ পরিবেশ দিবস। বছরের প্রতিপাদ্য- স্যলুশন টু প্লাস্টিক পলুশন (প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে শামিল হই) বছরের স্লোগান- বিট প্লাস্টিক পলুশন (সবাই মিলে করি পণ বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ)    

নিকট অতীতে লোকজন হাটবাজারে সদাইপাতি করত পাটের তৈরি চটের থলিতে (ব্যাগে) শহরে গ্রামে হাট বাজারে যাওয়ার সময় হাতে থাকত এই ব্যাগ। মাছ গোশত শাক সবজি সহ নানা পণ্য কিনে আনত এই ব্যাগে। প্রত্যেক বাড়িতে নির্দিষ্ট স্থানে ঝোলানো থাকত। যার পরিচিতি ছিল বাজারের ব্যাগ। পণ্য আনা নেওয়ার ব্যাগ তেল চিটচেটে হয়ে যেত। ধুয়ে রোদে শুকিয়ে পরিষ্কার করা হতো। গ্রামের লোক হাটে যেত ধামা কাঁধে। সরিষার তেল নারিকেল তেল কনজুমার পণ্য বিক্রি হতো কাচের বোতলে। এই চিত্র হারিয়ে গেছে সময়ের পথ পরিক্রমায়।

আধুনিকতায় কাচের বোতলের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে পলি প্লাস্টিকের বোতল। পলি প্লাস্টিক তৈরি হয় সাবুদানার চেয়ে একটু বড় এক রাসায়নিক যৌগ দিয়ে। মনে হবে মোম গলিয়ে ফোঁটা ফেলে তৈরি হয়েছে। ভুল ভেঙে যাবে হাতে চাপ দিলে। খুবই শক্ত। চ্যাপ্টা হচ্ছে না। এটা এক ধরনের গ্রানিউল। সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে আসে আমাদের দেশে। এই গ্রানিউল তাপে গলিয়ে তৈরি হয় পলি প্লাস্টিকের বোতল মোড়ক থলে। ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে ফের তৈরি হয়। হাজারো পণ্য ভরানো হয় প্লাস্টিকের বাহনে। এই বাহন চারধারে ঘিরে ফেলেছে। বিশুদ্ধ পানির বোতল সফট ড্রিংকস থেকে শুরু করে থালা বাটি এমন কি জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মোড়ক পর্যন্ত। যাপিত জীবনে ব্যবহার্য সব কিছুকেই গ্রাস করে ফেলেছে। পলি মলিকিউল (অণু) বিনাশ হয় না। পুড়ে ভস্ম হয় না। ডোবে না। মাটিতে মেশে না। মাটি অক্সিজেন শোধনের ক্ষমতা হারিয়ে জৈব পদার্থের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। শহর নগরীর ড্রেন বদ্ধ করে দেয়। জলাশয় দূষিত করে। এই অণু অজয় অমর অক্ষয়।

পলি প্লাস্টিক আনস্যাচুরেটেডে কম্পাউন্ড। বৈশিষ্ট্য হলো অণুগুলোরে কিছু বাহু শেষ পর্যন্ত মুক্ত অবস্থায় থাকে। অন্য কোনো পদার্থের সংস্পর্শে এলে যোগ হয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে। আপাত দৃষ্টিতে বিক্রিয়া নিরাপদ মনে হলেও তা নয়। পলি প্লাস্টিকের পাত্রে দীর্ঘ সময় তরল শুকনো যে কোনো খাদ্যদ্রব্য কোনো পণ্য রাখা হলে ট্রেস অ্যামাউন্টে ঢুকে পড়ে। ট্রেস অ্যামাউন্ট এমন রাসায়নিক যৌগ যা খালি চোখে দেখা যায় না। ট্রেস অ্যামাউন্টের যৌগ নিত্যদিন খাদ্যের সঙ্গে জমা হতে থাকে পাকস্থলিতে। ব্যবহৃত এ্যামাইন এ্যানিলিন কিডনি আলসার পেপটিক আলসারসহ আন্ত্রিক নানা জটিল ব্যাধির জন্য দায়ী। এক সময় রক্তে মিশে ক্যান্সারের ঝুঁকি বয়ে আনে। আক্রমন করে হার্ট ফুসফুস কিডনি মূত্রথলিতে। পলি প্লাস্টিকের কারখানায় যারা কাজ করেন আক্রান্ত হন জটিল রোগ ব্যাধিতে।

উন্নত দেশগুলো বলেছে যথেষ্ট হয়েছে। আর নয়। এই জঞ্জাল দূর করতে হবে। তারা পলি প্লাস্টিকের বদলে বিকল্প নানা পথ বেছে নিয়েছে। দেশে যাত্রা পথে সামাজিক অনুষ্ঠানসহ সরকারি বেসরকারি নানা অনুষ্ঠানে সভা সেমিনারে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে পলি প্লাস্টিকের বোতল ঘিরে ফেলেনি। এর অগ্রযাত্রা রোধ করা যাচ্ছে না। কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তার কোনো নির্দেশনা নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো দায় নেই। এই বিষয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ওসমান গনি বললেন, দেশে কাগজের ব্যাগ ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তা থমকে গেছে। পাটজাত পণ্য ব্যবহারে কোনো প্রচার উদ্বুদ্ধকরণ নেই।

×