ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাদুসনুদুস পার্শিয়ান, মিকি, টুইঙ্কেল টমক্যাট

দুই হাজারেরও বেশি বাঘের মাসির আগমন বগুড়ায়

সমুদ্র হক

প্রকাশিত: ২২:২৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

দুই হাজারেরও বেশি বাঘের মাসির আগমন বগুড়ায়

বগুড়া নগরীতে বিড়াল পালন

বাঘের মাসি হিসেবে পরিচিত এক হাজারেরও বেশি বিড়ালের আগমন ঘটেছে বগুড়া নগরীতে। অনেক দিন থেকেই ওরা আসছে। হালে ওদের আগমন বেড়েছে। সবগুলো বিড়াল নাদুসনুদুস। ছাই রং, ধূসর রং, বাদামি রং, হালকা কালো ও মিশ্র রঙেরও আছে। সাদা বিড়ালের সঙ্গে কালো বিড়াল আছে। কদর বেশি সাদা বিড়ালের। তবে কালো বিড়াল (ব্ল্যাক ক্যাট) কিছুটা হিংস্র। এই ব্ল্যাক ক্যাট কৌশলে শিকারিকে ধরে। রাতেও বিড়ালের তুখোর দৃষ্টি, তীব্র ঘ্রাণশক্তি ও তীক্ষ দাঁত আক্রমণকারী প্রতিপক্ষকে দ্রুত কাবু করতে পারে। তবে সব রঙের বিড়াল মায়াবি।

এরা ভালোবাসা ও ভালো খাবার পেলে প্রভুর অতি নিকটে থাকে। শীতে উষ্ণতা পেতে এরা কখনও সখনও প্রভুর বিছানায় লেপের মধ্যে ঢুকে পড়ে। বগুড়া নগরীতে বিড়াল পালিত হচ্ছে বাসাবাড়িতে। অনেক সময় বিড়াল পালনকারী নারী বিড়াল কোলে নিয়ে নগরীর পথে হাঁটাহাঁটি করে। বাজার সদাই করে। লোকজন দেখে অবাক হয়। পালিত বিড়াল এতটাই সুবোধ হয়ে কোলে থাকে দেখে মনে হবে কতটা প্রভুভক্ত। বিড়াল পালনকারী সাদিয়া আফরিন বললেন, তার তিনটি বিড়াল আছে। সবগুলো বিড়াল বাড়ির সদস্যদের মায়ার বাঁধনে ফেলেছে। একদিন এদের কেউ না থাকলে বাড়িটা ফাঁকা মনে হয়। বিড়ালও ওদের সঙ্গী খোঁজে। এরা পথ ভুল করে না। কোন এক সময় ঠিকই ফিরে আসে। এদের জন্য আলাদা রান্না করতে হয়। নির্দিষ্ট সময় ফ্রিজ খুললেই এরা বুঝতে পারে ওদের খাবার আসছে।
বিড়ালগুলোর নানা নাম। যেমন মিকি, এ্যাঞ্জেল, জেসপার, পার্শিয়ান, ট্যান, টম, আইনা, ডোরি, টুইঙ্কেল, ক্লাউডি ইত্যাদি। এই প্রজাতির বিড়াল গার্হস্থ্য। যা ফ্যালিস ক্যাটস বংশোদ্ভূত। ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন বছর আগে বিড়ালের পূর্বসূরি ছিল মিসরে। তাদের বলা হতো টম ক্যাট। বিড়ালের ইংরেজি নাম ক্যাট। যা টম ক্যাট থেকে এসেছে। বিড়ালের অন্তত ৭০টি জাত আছে। সকল প্রজাতির বিড়াল শিকারে দক্ষতা দেখাতে পারে। বিড়ালের বড় শিকার হলো ইঁদুর। আর বিড়ালের খাদ্য তালিকায় সবচেয়ে আগে আসে ভাজা মাছ। তবে শুকনো মাছ তাজা মাছ আধা সিদ্ধ মাছ বিড়ালের পছন্দ। যারা বিড়াল লালন পালন করেন বিড়ালের জন্য তাদের আলাদা রান্না করতে হয়।

ছোট মাংসাশী ও স্তন্যপায়ী প্রাণী বিড়াল ফেলিডা পরিবারের একমাত্র গৃহপালিত প্রজাতি। ঘরের বিড়াল, খামারের বিড়াল ও বন বিড়াল তিন জাতের বিড়ালের অনেক উপজাত আছে। বনবিড়াল মানুষের আড়ালে থাকে।
পোষা বিড়াল নিয়ে ঘুরছিলেন সাদিয়া আফরিন। বললেন বিড়াল এতটাই পোষ মানে যে দুয়েকদিন বেড়াতে গেলে বিড়াল সারাক্ষণ খুঁজে বেড়ায়। বগুড়া হাজী জয়নাল কলেজের অধ্যক্ষ শ্রাবণী সুলতানা জানালেন তিনি তার বিড়াল ও কুকুরকে এতটাই পোষ মানিয়েছেন যে তার কথার নড়চড় হয় না। এগুলো শান্ত স্বভাবের। বাড়িতে মায়া ভুবন গড়ে গিয়েছে। লামিয়া বললেন প্রথমে কালো বিড়াল দেখে ভয় পেয়েছিলেন। একটি কালো বিড়াল। জ¦ল জ¦লে চোখে ড্যাব ড্যাব করে তাকাল। পরে বুঝতে পারেন কালো বিড়াল অতি ক্ষিপ্র গতির। নেট সার্চ করে জানতে পারেন- কালো বিড়াল গোয়েন্দাগিরি করতে পারে। ১৮৮০ সালে ‘অ্যালার্ট ফাইটিং ক্যাট’ নামকরণ হয়। সদা সতর্ক থেকে ক্ষিপ্র গতিতে প্রতিপক্ষকে আক্রমণে কাহিল করে। পাশর্^বর্তী একটি দেশে নিরাপত্তা রক্ষার একটি বাহিনীর নাম ‘ব্ল্যাক ক্যাট’। তাদের পোশাকও কালো।
বিড়াল মিউ মিউ ডাকে মন ভুলিয়ে দেয়। তবে আদর না পেলে থাকে না। পোষ মানিয়ে রাগ করে তাড়িয়ে দিলে, অনেক দূরে রেখে এলেও ফিরে আসে। সহজে পথ ভোলে না। প্রবল ঘ্রাণশক্তির কারণে ঘরে ফিরে আসে। কালো বিড়াল অন্য বর্ণের বিড়ালের মতো গার্হস্থ্য বিড়াল। বিড়াল সামাজিক প্রাণী। পারস্পরিক যোগাযোগে কণ্ঠস্বরের নানামুখি ব্যবহার করে। মিউ মিউ শব্দটি কম্পনজাত (ইংরেজিতে ট্রিল)। এ ছাড়াও গোঁগোঁ হিসহিস শব্দের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু শরীরী ভাষা আছে। রাতে উচ্চস্বরে ঝগড়া করলে মানুষের রাগান্বিত ভাষার মতো মনে হবে। বাসাবাড়িতে গভীর রাতে বিড়ালের স্বরে অনেকে আঁৎকেও ওঠে। তখন বিড়ালের কাছে গেলে মনে হবে কত সাধু। মিষ্টি মিউ মিউ ডাকে দৌড়ে পালায়। এদের প্রজনন হার বেশি। এরা নিয়ন্ত্রিত প্রজননে বংশ বিস্তার করে। বিড়াল ছানার সংখ্যা বেশি দেখলে প্রকৃতিগত ভাবে কম মেলামেশা করে বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনে।

 

×