ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিনন্দন শেখ রাসেল পার্কের নির্মাণ কাজ ৯৫ ভাগ সম্পন

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ৭ অক্টোবর ২০২২

দৃষ্টিনন্দন শেখ রাসেল পার্কের নির্মাণ কাজ ৯৫ ভাগ সম্পন

নাসিক ১৬ নং ওয়ার্ডে গড়ে উঠছে শেখ রাসেল পার্ক

 নারায়ণগঞ্জে সিটি এলাকায় ‘শেখ রাসেল পার্ক’ নামে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক একটি পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পার্কটির নির্মাণ কাজ পঁচানব্বই ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এ পার্কটি নির্মিত হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগের জিমখানা এলাকায় অত্যন্ত মনোরোম পরিবেশে এ পার্কটির অবস্থান। এটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা ৬৭ লাখ টাকা। পার্কটি উদ্বোধন হওয়ার আগেই দর্শনার্থীদের মন কেড়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও নগরবাসীর জন্য এ পার্কটি নির্মিত হওয়ায় নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন খুবই আনন্দিত হয়েছেন।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব ঘনসবুজ ঘেরা ছায়া ঢাকা, নির্মল পানি সমৃদ্ধ লেক বেষ্টিত জিমখানায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্রের নামে শেখ রাসেল পার্ক এখন নগরীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এ পার্কের আয়তন প্রায় ১৮ একর। বর্তমান লেকটি একদা পরিত্যক্ত জলাশয় অথবা ডোবা ছিল। প্রতিনিয়ত মানুষের বর্জ্য ফেলার কারণে লেকটি ডাম্পিং স্থান ও মশা-মাছির প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। এ ছাড়াও অবৈধ দখলের ফলে জিমখানা লেক এলাকার পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো মাদক ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। ফলে লেক এলাকাটির আশপাশে দূষণ ও অসামাজিক কর্মকা-ের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক ২০১০ সালে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) লেকটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জনগণের দীর্ঘ দিনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০১১ সালে জিমখানা লেক খনন, সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং স্বনামধন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেডের মাধ্যমে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এ নয়নাভিরাম কাজটি শেখ রাসেল পার্ক হিসেবে নামকরণের জন্য গত ২০১৭ সালের ১৪ নবেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বরাবর আবেদন করা হয় এবং সে প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট দফতর হতে অনুমোদন পাওয়া যায়।
পার্কটি নারায়ণগঞ্জ নগরবাসীর একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিপুলসংখ্যক লোক এখানে প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ উপভোগ করার জন্য আগমন করেন। লেকটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৭০ মিটার, প্রস্থ ৭৫ মিটার। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে শেখ রাসেল পার্কটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৫৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লেকের চারপাশে ওয়াকওয়ে, স্ট্রিট লাইট, সিটিং প্যাভিলিয়ন ও পরিবেশবান্ধব সবুজ গাছপালা রোপণ করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের অবসর সময় কাটানোর জন্য ৪টি ভিউইং ডেক ও ৬টি ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে। উন্মুক্ত পরিবেশে যে কোন ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে।
লেকটির সৌন্দর্যবর্ধন করে দাঁড়িয়ে আছে শেখ রাসেলের ম্যুরাল।
লেকের দুই পাশে লোকজনের পারাপারের জন্য রয়েছে একটি নয়নাভিরাম ব্রিজ। খেলাধুলার জন্য ১টি খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা পাবলিক টয়লেট। এ ছাড়াও রয়েছে বোট ক্লাব, সুইমিং পুল, ওয়াটার গার্ডেন, জিমন্যাস্টিক ক্লাব, ড্রাই ফাউন্টেন, স্কেটিং জোন, সাইকেল লেনসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ। এ ছাড়াও পার্কের অভ্যন্তরে শিল্প সংস্কৃতি চর্চ্চা ও বিকাশের লক্ষ্যে বিদ্যমান চারুকলা ভবনটির স্থলে নতুনভাবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি পরিবেশবান্ধব চারুকলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি নগরীর পরিবেশ উন্নয়নসহ নগরবাসীর দীর্ঘদিনের বিনোদন কেন্দ্রের চাহিদা পূরণ হবে বলে সিটি কর্পোরেশন জানায়। এ ছাড়া লেকটি অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি ধারণের জন্য সংরক্ষিত জলাধার (রিটেনশন পুকুর) হিসেবে কাজ করবে। অপরদিকে অগ্নিনির্বাপনের জন্য পানি সরবরাহের একমাত্র প্রধান উৎস হিসেবে এ লেকটি মুখ্য ভূমিকা পালন করবে বলে সিটি কর্পোরেশন জানায়।
আমলাপাড়ার বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, শেখ রাসেল পার্কটি বিনোদনের একটি স্পট হিসেবে পরিণত হয়েছে। এতদিন পার্কের অভাবে লোকজন নারাণয়ণগঞ্জ শহর ছেড়ে রাজধানী ঢাকা অথবা একই জেলার সোনারগাঁয়ে অথবা রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে যেতে হতো। এখন শেখ রাসেল পার্কটি নির্মিত হওয়ায় এখন বিনোদনের জন্য শহর ছেড়ে যেতে হচ্ছে না।
দেওভোগের বাসিন্দা বিপ্লব কুমার দাস বলেন, সকালে কিংবা বিকেলে হাঁটতে বের হলে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে হতো। এখন শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ হওয়ায় এখন শহরবাসীর একটি বিনোদনের চাহিদা পূরণ হয়েছে।
মিশনপাড়ার বাসিন্দা সরকারী তোলারাম কলেজের ছাত্রী শান্তা ইসলাম বলেন, নারীরা অনেক সময় একা একা বের হতে ভয় পায়। এখন আর নারীরা নির্বিঘ্নে শহরেই বিনোদনের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন।
এ জন্য সিটি কর্পোরেশনকে ধন্যবাদ জানাই। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের শিক্ষার্থী শায়লা পারভীন বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের আধুনিক একটি বিনোদন পার্ক হয়েছে। এ পার্ক আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের আরও বিকশিত করবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আজগর হোসেন বলেন, শেখ রাসেল পার্কটির নির্মাণ কাজ পঁচানব্বই ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি চলতি মাসের মধেই্য এ পার্কের শতভাগ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।

 

×