ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

দুর্নীতি নির্মূলে আইনের শাসন

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২২ জানুয়ারি ২০২২

দুর্নীতি নির্মূলে আইনের শাসন

বিশ্বের সকল সচেতন মহল সম্যক অবগত আছেন, জ্ঞান সভ্যতার প্রথম ও প্রধান শিক্ষক সক্রেটিসের শিষ্যবৃন্দের অন্যতম ছিলেন দার্শনিক প্লেটো। প্রায় চল্লিশ বছর বয়সে প্লেটো প্রণীত ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থের সূচনা করেছিলেন নৈতিক প্রশ্নবোধক ‘ন্যায়বিচার কাকে বলে’ বাক্য দিয়ে। প্রশ্নের উত্তরে প্লেটো নিজেই বলেন, ‘সামাজিক ন্যায়বিচারের অর্থই হলো প্রত্যেক নাগরিক সুচারুরূপে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন এবং প্রাপ্য অধিকার ভোগ করবেন।’ ক্রমবিকাশের ধারায় সমাজে বিরাজিত বিচার ব্যবস্থায় গণমানুষের অধিকার কিভাবে কতটুকু প্রতিষ্ঠিত বা নির্দয়-নিষ্ঠুর-অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপে বৈষম্যের দৃশ্যাদৃশ্য সূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণের দাবি রাখে। মূলত চলমান লুম্পেন পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের সামগ্রিক অর্থ ব্যবস্থায় দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন-জালিয়াতি-প্রতারণা এত গভীরে প্রোথিত তার প্রকৃষ্ট আবিষ্কার নিতান্তই দুরূহ বটে। প্রাসঙ্গিকতায় মান্যবর নতুন প্রধান বিচারপতির অতিসাম্প্রতিক কিছু আশাজাগানিয়া বক্তব্য দেশবাসীকে দারুণভাবে প্রোৎসাহিত করেছে। দেশবাসীর পক্ষ থেকে একজন নগণ্য নাগরিক হিসেবে তাঁকে শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন জানানো নৈতিক দায়িত্ব মনে করি। ২ জানুয়ারি ২০২২ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আপীল বিভাগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি বিচার কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সকলকে দুর্নীতি নির্মূলের অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বলেন, ‘বিচার বিভাগে কোন দুষ্টক্ষতকে আমরা ন্যূনতম প্রশ্রয় দেব না। দুর্নীতি একটি ক্যান্সার। কোন আঙ্গুলে যদি ক্যান্সার হয় সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে আঙ্গুলটি কেটে ফেলা। দুর্নীতির ব্যাপারে আমি কোন কম্প্রোমাইজ করব না। চিহ্নিত হলে সঙ্গে সঙ্গে স্টাফ বা অফিসার যে-ই হোক না কেন, সাসপেন্ড করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সব শাখার অস্বচ্ছতা অনিয়ম ও অযোগ্যতাকে নির্মূল করতে সবাইকে পাশে পাব- এই আশা ব্যক্ত করছি।’ মামলাজট থেকে মুক্তির যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে মামলাজট নিরসনে নিজের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের সব অধস্তন আদালতে মামলাজট নিরসন ও বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা-গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে আটটি বিভাগের জন্য সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতিকে প্রধান করে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। প্রতি মাসে তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করা হবে। পুরনো মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিষ্পত্তির বিষয়ে সুপারভাইজ ও মনিটরিং করা হবে।’ উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘বার ও বেঞ্চ হলো একটি পাখির দুটি ডানা। আর জুডিশিয়ারি হলো সমস্ত দেহ। পাখা দুটি সমানভাবে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এই দেশের সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যেতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি। বারের সহযোগিতা ছাড়া কোনভাবেই কোর্ট পরিচালনা করা সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে যে, ন্যায়বিচার জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া জনগণের প্রতি দয়া নয়, বরং এটি তাদের সহজাত অধিকার। দেশের সব বিচারককে নিরপেক্ষতার সঙ্গে নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সহজাত অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করতে হবে।’ তিনি মনে করেন বিচার বিভাগে অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আন্তরিকভাবে কাজ করলে সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি অঙ্গ দুর্বল বা সমস্যাগ্রস্ত হলে রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না। তাঁর বিশ্বাস রাষ্ট্রের অপর দুটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। তিনি বিচারকদের সীমিত সম্পদ-সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে বিচারিক সময় ও দক্ষতার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিতে প্রত্যেককে মামলা নিষ্পত্তিতে অভূতপূর্ব অভিযাত্রায় অগ্রসেনানী হওয়ার ইতিবাচক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আহ্বানও জানান। উনার বক্তব্যের যথাযথ প্রতিফলন ঘটেছে ৬ জানুয়ারি ২০২২ হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (সার্বিক) ও ডেপুটি রেজিস্ট্রারের (অর্থ ও উন্নয়ন) সমন্বয়ে সুপ্রীমকোর্টের আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগের অনিয়ম এবং দুর্নীতি বিষয়ক অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানের জন্য কমিটি গঠনের মাধ্যমে। বিশিষ্ট সমাজ-অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক গুন্নার মিরডলের মতে ‘সংস্কার, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ইত্যাদি কোন কিছুতেই আমার কোন আস্থা নেই যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি দূরীকরণের কোন চেষ্টা না হচ্ছে।’ দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে অবৈধ সামরিক শক্তি সমর্থিত কথিত গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে বিশ্বে বাংলাদেশ দুর্নীতির শীর্ষ দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল প্রায় পাঁচবার। কিন্তু অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক চিত্র হচ্ছে ২০০৯ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দক্ষ সরকার পরিচালনায় দুর্নীতিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং সকল ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অবস্থান সুদৃঢ় করতে পেরেছিলেন বলেই ২০১৭ সালে নবেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের ১৭৩টি দেশের সরকারপ্রধানদের মধ্যে সততার জন্য বিশ্বে শীর্ষ পাঁচটি আসনের মধ্যে নিজেকে তৃতীয় স্থানে অধিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। এটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা, ‘শর্ষের মধ্যে ভূত’ থাকলে দুর্নীতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুবই কঠিন। অর্থলোভী, বিত্ত ও ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির মাধ্যমে ইতোমধ্যেই যেভাবে দেশের অর্থনীতি ও সামগ্রিক উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ করছে তাদের কঠোরহস্তে আইনের আওতায় এনে দমন করা না গেলে এই অবস্থা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। প্রধানমন্ত্রী যথাসময়ে এর যথার্থতা উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই তাঁর ওপর আস্থার জায়গা অনেকটুকু সুদৃঢ়। বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে নষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতি, ক্ষমতা ও অর্থের দুর্বৃত্তায়ন এবং সুশাসন পরিচর্যায় দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধকতা জাতিরাষ্ট্রের নৈর্ব্যক্তিক উন্নয়ন সমৃদ্ধিকে প্রচ- চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ চমকপ্রদভাবে সর্বত্রই প্রশংসিত ও সমাদৃত। বাংলাদেশের সমগ্র নাগরিক বস্তুনিষ্ঠ প্রক্রিয়ায় এসব কঠিন পদক্ষেপের যথার্থ বাস্তবায়নে প্রযুক্ত প্রতিষ্ঠাসমূহ বা আদালতসহ অন্যান্য সকল সংস্থার প্রতি গভীরভাবে আস্থাশীল। এখনও দেশের মানুষ নিবিড়ভাবে বিশ্বাস করতে চায় যে, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান যেন নিপীড়ন-নির্যাতন-হয়রানি-চরিত্র হনন নয়, অনৈতিক প্রভাব-প্ররোচনা বা অর্থলিপ্সায় নিরীহ-নির্দোষ-মার্জিত-অসহায় ব্যক্তিদের ফাঁসিয়ে দেয়া বা মিডিয়া ট্রাইয়ালের উদ্দেশ্যেই যেন পরিচালিত না হয়। ব্যক্তিগত আক্রোশ-রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতা-প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পদ-পদায়নে দুর্বলতার শিকার যে কোনভাবেই আদালত-দুদক-বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনৈতিক প্রলোভনে প্রভাবিত করতে না পারে; আইন প্রয়োগে সততা-স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার কার্যকর দৃশ্যমানতা দেশের সুষ্ঠু ও সুস্থ জনগণ নিরন্তর প্রত্যাশা করে থাকে। গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে ২০২০ সালে পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে রিট মমলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক, বিচার বিভাগের দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক করে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছে, ‘মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে বিচার বিভাগ। যখন এই আশ্রয়স্থলের বিচারকরা দুর্নীতির মাধ্যমে রায় বিক্রি করেন তখন সাধারণ মানুষের আর যাওয়ার জায়গা থাকে না। তারা হতাশ-ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ-বিক্ষুব্ধ হয়ে বিকল্প খুঁজতে থাকেন। তখন জনগণ বিচার চাওয়ার জন্য মাস্তান-সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন মাফিয়া নেতাদের আশ্রয় গ্রহণ করেন। দুর্নীতিমুক্ত বিচার বিভাগ আইনের শাসনের অন্যতম শর্ত এবং এটি ছাড়া আইনের শাসন কল্পনাও করা যায় না। বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে জনগণ বিকল্প খুঁজতে বাধ্য হবে, যেটি কল্পনাও করা যায় না। সুতরাং এখন সময় এসেছে জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের আমূল সংস্কার করে দুর্নীতির মূল উৎপাটন করা, নির্ভরযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের দুর্নীতি একসঙ্গে চলতে পারে না। বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন তাহলে আইনের শাসন বই-পুস্তকেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এটা কখনই বাস্তবরূপ লাভ করবে না।’ আমাদের সকলেরই জানা, ২০১৯ সালে ৯ ডিসেম্বর দুদক কর্তৃক সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা-জালিয়াতির মাধ্যমে একটি বেসরকারী ব্যাংকের চার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারের মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের প্রেক্ষিতে আদালত ১৩ আগস্ট ২০২০ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। দীর্ঘ ট্রায়াল শেষে ৯ নবেম্বর ২০২১ আদালত সাবেক প্রধান বিচারপতিকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ৭ বছর এবং দুর্নীতি দমন আইনে ৪ বছরের কারাদ- দেয়ার পাশাপাশি ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সাবেক প্রধান বিচারপতি বিদেশে যাওয়ার পর সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি অভিযোগ জানানো হয়েছিল, যার ভিত্তিতে অন্যান্য বিচারক তার সঙ্গে বিচারে বসতে অস্বীকার করেছিলেন। দেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে দুর্নীতির দায়ে সাজা পেলেন। সমসাময়িক বিশ্বে এ ধরনের ঘটনার আর কোন নজির দৃশ্যমান নয়। স্মরণযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের কার্যক্রম উদ্বোধনের দিন সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি, আইনজীবী ও সুধীবৃন্দের উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আইনের শাসনের প্রতি সুদৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘আইনের শাসনে আমরা বিশ্বাস করি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই অনেকে আমরা সংগ্রাম করেছি এবং এই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেক মানুষের রক্ত দিতে হয়েছে। বাংলাদেশে আইনের শাসনই প্রতিষ্ঠিত হবে। সেজন্যই শাসনতন্ত্র এত তাড়াতাড়ি দিয়েছিলাম। যদি ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা, যদি রাজনীতি করতাম আপনারা নিশ্চয়ই আমার পাশে যারা বসে আছেন তারা জানেন যে, তালে তাল মিলিয়ে, গালে গাল মিলিয়ে বহুকাল ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। কিন্তু ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি নাই, রাজনীতি করেছিলাম মানুষের মুক্তির জন্য। সে মানুষের মুক্তি মিথ্যা হয়ে যাবে যদি মানুষ তার শাসনতন্ত্র না পায়। আইনের শাসন না পায়। এত বিপদ-আপদ, এত অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্টের মধ্যে শাসনতন্ত্র দিয়েছি। আজ আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আমাদের শাসনতন্ত্র হয়েছে, যার জন্য বহু রক্ত গেছে। এদেশে আজ আমাদের সুপ্রীমকোর্ট হয়েছে, যার কাছে মানুষ বিচার আশা করে।’ সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তথ্যপ্রযুক্তির সকল সুবিধা ব্যবহার করে মামলা ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘দেশের সব আদালতের কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করলে বিচার কার্যক্রমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সব কার্যক্রমকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করাও জরুরী।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগের আধুনিকতায় সরকার অত্যন্ত আন্তরিক এবং এ লক্ষ্য অর্জনে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে মামলার রায় হওয়ার পর রায়ের কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে না হয়।’ প্রভাবিত আদালত বা অন্যান্য সংস্থা কোনভাবেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে না নিঃসন্দেহে তা বলা যায়। জাতিকে যার জন্য কালপরিক্রমায় কঠিন মূল্য দিতে হয়। জজ মিয়া নাটকসহ কারণে-অকারণে বহু নিরীহ-নির্দোষ মানুষকে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপ্রবণতায় উম্মাদ নষ্ট ব্যক্তিদের জিঘাংসার শিকারে অপরিসীম যন্ত্রণাকাতর, কারাবরণ বা আত্মনিগ্রহে প্ররোচিত হওয়ার দৃষ্টান্তও কম নয়। অতএব, আদালত বা অন্যান্য বিচারিক কার্যক্রম যাতে কোনভাবেই উল্লেখ্য ঘটনার উদাহরণ না হয় সেদিকে রাষ্ট্রের মনোযোগ আকর্ষিত হওয়া খুবই জরুরী। রবিঠাকুরের ‘প্রশ্ন’ কবিতার পঙক্তি উদ্ধৃত করে সমস্বরে যেন আমাদের উচ্চারণ করতে না হয়- ‘ভগবান, তুমি যুগে-যুগে দূত পাঠিয়েছ বারে-বারে দয়াহীন সংসারে,/তারা বলে গেল ‘ক্ষমা করো সবে’, বলে গেল ‘ভালোবাসো-অন্তর হতে বিদ্বেষ-বিষ নাশো।’/বরণীয় তারা, স্মরণীয় তারা, তবুও বাহির-দ্বারে/আজি দুর্দিনে ফিরানু তাদের ব্যর্থ নমস্কারে।/আমি যে দেখেছি গোপন হিংসা কপট রাত্রিছায়ে/ হেনেছে নিঃসহায়ে,/আমি যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’ প্রচলিত ধারণা, শুধু স্বল্পসংখ্যক দুর্বৃত্তই শাস্তিপ্রাপ্ত হয় অথবা নিরীহ-নির্দোষ ব্যক্তিরা অযথা হয়রানির পর্যুদস্ততায় নিঃস্ব হয়ে পড়লেও বড় মাপের অপরাধীরা কেন জানি বরাবরই অধরা থেকে যায়। সকল অন্যায়-অবিচার সংহারে সর্বক্ষেত্রে আইনের শাসন-ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নতুন প্রধান বিচারপতির সুযোগ্য নেতৃত্বে সামষ্টিক বিচারিক কার্যক্রমে দেশপ্রেম-মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনার অবিচল প্রতিফলন উদ্ভাসিত হোক- এ প্রত্যাশাটুকু নিবেদন করছি। লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×