ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অপারেশন সিঁদুর

সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের মুখোশ উন্মোচন করতে ভারতের বৈশ্বিক প্রচার শুরু

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১৭ মে ২০২৫

সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানের মুখোশ উন্মোচন করতে ভারতের বৈশ্বিক প্রচার শুরু

ছবিঃ সংগৃহীত

অপারেশন সিঁদুর-এর পর, যা পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলোকেই টার্গেট করেছিল, ভারত এখন বৃহৎ আকারে একটি বৈশ্বিক প্রচারাভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পশ্চিম প্রতিবেশী পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পৃক্ততা এবং ভারতের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে তাদের ভুয়া বর্ণনাকে বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করা হবে।

এই প্রচারাভিযানে অন্তত আটটি সংসদীয় প্রতিনিধিদল গঠিত হবে, প্রত্যেকটিতে সাত থেকে আটজন সংসদ সদস্য ও জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক থাকবেন। এরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেখানকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মিডিয়ার সঙ্গে ভারতের অবস্থান তুলে ধরবেন—বিশেষ করে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে।

এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বিরোধী দলের বহু প্রভাবশালী নেতার নাম উঠে এসেছে, যেমন—সাবেক মন্ত্রী গুলাম নবী আজাদ, সালমান খুরশিদ, মানীশ তেওয়ারি ও শশী থারুর। অন্যান্য অংশগ্রহণকারী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন—AIMIM-এর আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, এনসিপি এসপি’র সুপ্রিয়া সুওল, শিবসেনা (UBT)-এর প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী, বিজু জনতা দলের সসমিত পাত্র, সিপিএম-এর জন ব্রিট্টাস, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএমকে’র কানিমোঝি, কংগ্রেসের অমর সিং ও পাঞ্জাবের রাজ্যসভার সাংসদ বিক্রমজিত সাহনি।

সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এবং অনুরাগ ঠাকুর, বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সরঙ্গি (ওড়িশা) এবং এনডিএ-র জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে জেডিইউ-এর সঞ্জয় ঝা ও শিবসেনা’র শ্রীকান্ত শিন্ডেও রয়েছেন তালিকায়।

১৯৯৪ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনে ভারতের পক্ষে একটি প্রতিনিধিদল পাঠান, যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলনেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী। উদ্দেশ্য ছিল—কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান-সমর্থিত প্রস্তাবকে রুখে দেওয়া, যা সফলভাবে পরাজিত হয়।

২০০৮ সালে মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার পরে, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও বহু দেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠান পাকিস্তানের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা তুলে ধরতে। ফলস্বরূপ, পাকিস্তান প্রথমবারের মতো ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)-এর ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

আজ সকালে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। সরকার এই উদ্যোগের জন্য কংগ্রেসের চারজন এমপির নাম চূড়ান্ত করেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন—সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মানীশ তেওয়ারি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শশী থারুর এবং পাঞ্জাবের সাংসদ অমর সিং।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, থারুর সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন, আর তেওয়ারি যাবেন ইউরোপে।

সুপ্রিয়া সুওল নেতৃত্ব দেবেন ওমান, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মিসরে; সালমান খুরশিদ নেতৃত্ব দেবেন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর সফরকারী দলের।

আরেকটি দল যাবে কুয়েত, বাহরাইন এবং আলজেরিয়া।

বিজেপি সূত্র জানিয়েছে, এই প্রচারাভিযান একাধিক লক্ষ্য পূরণ করবে। এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে "জাতীয় ঐক্য"র বার্তা পৌঁছে যাবে, বিশেষ করে পাকিস্তানের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের পটভূমিতে।

সরকারি নেতারা জানিয়েছেন, এটি এনডিএ সরকারের নীতিরই অংশ—অপারেশন সিনদুর নিয়ে দুই দফা সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধীদের পুরোপুরি সঙ্গে রাখা হয়েছে।

কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বদলীয় বৈঠকগুলিতে সভাপতিত্ব না করলেও বা সংসদের বিশেষ অধিবেশন না ডাকলেও, কংগ্রেস এই বহুদলীয় বিদেশ সফরে অংশ নেবে।

তিনি বলেন, “জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চে স্থান দিয়েই কংগ্রেস সবসময় অবস্থান নেয়। আমরা বিজেপির মতো জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে রাজনীতি করি না। তাই কংগ্রেস অবশ্যই এই সফরের অংশ হবে।”

এই সফরের সম্ভাব্য ফলাফল প্রসঙ্গে সূত্র জানিয়েছে, “এটি একটি বিস্তৃত সফর হবে যেখানে ভারত উপস্থাপন করবে পাকিস্তানের জাতিসংঘ-নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ এবং দেখাবে কীভাবে ভারত দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো সন্ত্রাসের শিকার হয়ে আসছে। ভারতীয় অবস্থান হবে—পরবর্তী যেকোনো সন্ত্রাসী হামলাকে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য ধরা হবে।”

“আমাদের দীর্ঘদিনের কাশ্মীর নীতিও ব্যাখ্যা করা হবে, যেখানে পরিষ্কার করে জানানো হবে—ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনার একমাত্র বিষয় দুটি—পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফেরত আনা এবং সন্ত্রাসবাদ। আলোচনার কাঠামোও হবে দ্বিপাক্ষিক।”

এই প্রচারাভিযান ২২ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত হওয়ার কথা। এ সময় ভারতীয় রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং বোঝাবেন যে অপারেশন সিনদুর কোনো উসকানি ছিল না, বরং এটি পাকিস্তানের ২২ এপ্রিল পাহেলগাম হামলার জবাবে ভারতীয় প্রতিক্রিয়া, যেখানে ২৬ নিরস্ত্র তীর্থযাত্রীকে শুধুমাত্র তাদের ধর্ম জেনে হত্যা করা হয়।

প্রতিনিধিদল বিশ্বকে জানাবে—অপারেশন সিনদুর ছিল একটি পরিকল্পিত, নিখুঁত ও কৌশলগত সামরিক প্রতিক্রিয়া। এতে সীমান্ত রেখা বা আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম না করেই সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে এবং একাধিক হুমকি নির্মূল হয়েছে।

সূত্র বলেছে, “পাকিস্তানের কোনো বেসামরিক এলাকা বা সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি।”

এই উদ্যোগ এমন সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, তিনিই ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করেছেন। তবে ভারত জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক।

এই সময় ভারত জাতিসংঘ ১২৬৭ নিষেধাজ্ঞা কমিটির মাধ্যমে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)-কে নিষিদ্ধ ঘোষণার প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। আজ নিউ ইয়র্কে এই কমিটির সঙ্গে দেখা করেছে ভারতের একটি কারিগরি দল।

মুমু

×