ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপিএল টি২০

তামিমের টর্নেডো শতকে জয় ঢাকার

প্রকাশিত: ০১:১৫, ২৯ জানুয়ারি ২০২২

তামিমের টর্নেডো শতকে জয় ঢাকার

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে ৬ মাসের জন্য বিরতি নেয়ার ঘোষণায় সবাইকে চমকে দেন বাঁহাতি ওপেনিং ব্যাটার তামিম ইকবাল। দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক টি২০ না খেলা, গত কয়েক বছর ধরে স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনার মধ্যে থাকা এ অভিজ্ঞ বাঁহাতি শুক্রবার যেন ভারমুক্ত হয়ে খেললেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাকে নিয়ে চলা সমালোচনার ঝড় থামিয়ে দিলেন বিদ্যুত গতির সেঞ্চুরিতে। নিজের ঘরের মাঠ সাগরিকার ২২ গজে ঝড় তুললেন ব্যাট হাতে যা আছড়ে পড়ল নিকটবর্তী বঙ্গোপসাগরে! টি২০ ক্যারিয়ারে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ঘোষণা করলেন ফুরিয়ে যাননি, অপরিহার্যতা আছে এখনও। তার ৬৪ বলে ১৭ চার, ৪ ছক্কায় ১১১ রানের টর্নেডো শতকে চলমান বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) জয়ের ধারায় ফিরেছে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা। তারা ৯ উইকেটে বিধ্বস্ত করেছে সিলেট সানরাইজার্সকে। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে লেন্ডল সিমন্সের সেঞ্চুরিতে (১১৬) ৫ উইকেটে ১৭৫ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় সিলেট। জবাবে সিমন্সকে ছাপিয়ে যাওয়া এক অপরাজেয় শতকে দলকে জয় পাইয়ে দেন তামিম। ফ্লাড লাইটের আলোকেও ম্লান করে দেন দ্যুতিময় এ বাঁহাতি। ৫ ম্যাচে এটি দ্বিতীয় জয় ঢাকার। আর সিলেট তৃতীয় ম্যাচে হারল দ্বিতীয়বার। টস হেরে সিলেট ব্যাটিংয়ে নামতেই সবুজ ঘাসে ছাওয়া সাগরিকার আউটফিল্ডে রানের ফোয়ারা ছোটে। সিমন্স ও এনামুল হক বিজয় পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে সিলেটকে তুলে দেন ৫০ রান। যদিও ষষ্ঠ ওভারের পঞ্চম বলেই বিজয় ১৬ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ১৮ রানে ফিরে যান। এরপর পুরোটা সময় সিমন্স একা লড়েছেন। তিনি ৩৪ বলেই ফিফটি তুলে নেন। চলতি বিপিএলে এর আগে একটি ম্যাচ খেলে ১৬ রানে আউট হয়েছিলেন। সেটিকে এবার শতকে পরিণত করে শেষ পর্যন্ত ১১৬ রানে সাজঘরে ফিরেছেন। ৫৯ বলে চলতি আসরের প্রথম সেঞ্চুরিটি স্পর্শ করেন সিমন্স। ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনারকে সাজঘরে ফেরান তারই স্বদেশী আন্দ্রে রাসেল। ৬৫ বলে ১৪ চার, ৫ ছক্কায় ১১৬ রান করেন তিনি। তার এই শতকেই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৫ রান তোলে সিলেট। সবচেয়ে বড় ঝড় গেছে রাসেলের ওপর দিয়েই, তিনি ৩ ওভারে ৪৫ রান খরচ করেছেন একটি উইকেট নিতে। আর সবচেয়ে মিতব্যয়ী ছিলেন আফগান লেগস্পিনার কাইস আহমেদ। ৪ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন তিনি। জবাব দিতে নেমে প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই তামিম বেঁচে যান নিশ্চিত আউট হওয়া থেকে। তাসকিন আহমেদের বলে স্লিপে ওঠা ক্যাচ ছেড়ে দেন মোহাম্মদ মিঠুন। শূন্যতে বেঁচে যাওয়া তামিম আরও দুই বার বেঁচে গেছেন দশম ওভারে মুক্তার আলীর বলে। ওই ওভারের পঞ্চম বলে ব্যক্তিগত ৭১ রানে উইকেটরক্ষক বিজয় তার ক্যাচ নিতে পারেননি, পরের বলটি ওয়াইড হয় এবং মুক্তারের শেষ বলটিতে ৭১ রানেই আবার ক্যাচ দেন শর্ট ফাইন লেগে আলাউদ্দিন বাবু তা ছেড়েছেন। আর এসবই তামিমকে পৌঁছে দেয় বিপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় এবং তার টি২০ ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরিতে! মাত্র ২৮ বলেই ফিফটি ছুঁয়ে এবার বিপিএলের দ্রুততম অর্ধশতকটি করেন তামিম। তার সঙ্গে মোহাম্মদ শাহজাদের জুটি পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ঢাকাকে দেয় ৭৪ রান, নবম ওভারের পঞ্চম বলেই পৌঁছে দেয় ১০০-তে। অবিশ্বাস্য এই জুটি ভেঙ্গেছে ১৭তম ওভারে, পঞ্চম বলে আলাউদ্দিন ৩৯ বলে ৭ চার, ১ ছক্কায় ৫৩ রান করা শাহজাদকে সাজঘরে ফেরান। ফলে ১৭৩ রানের প্রথম উইকেট জুটির সমাপ্তি ঘটে। এটি বিপিএলে উদ্বোধনী জুটির দ্বিতীয় সেরা জুটির রেকর্ড। ২০১৩ সালে খুলনায় দুরন্ত রাজশাহীর বিপক্ষে খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের দুই ওপেনার লুই ভিনসেন্ট ও শাহরিয়ার নাফীস ১৯৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন। সেঞ্চুরির পথে ৩ বার জীবন পেলেও বাকি সময়টা বোলারদের ওপর ঝড় বইয়ে তামিম ৬১ বলে শতক পেয়ে যান আলাউদ্দিনকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। এটি তামিমের টি২০-তে চতুর্থ শতক। প্রথম সেঞ্চুরি তিনি করেন ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বিজয় দিবস টি২০ কাপে ইউসিবি-বিসিবি একাদশের হয়ে মোহামেডানের বিপক্ষে। সেদিন করেছিলেন ৬৪ বলে ১৬ চার, ৪ ছক্কায় ১৩০। এরপর ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে (একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০-তে) ওমানের বিপক্ষে ৬০ বলে অপরাজিত ১০৩, ২০১৯ সালের বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে করেন ৬১ বলে ১০ চার, ১১ ছক্কায় অপরাজিত ১৪১ রান। তামিমের এই শতকটি বিপিএল ইতিহাসে ১৭ ব্যাটারের ২৩তম শতক। আর বাংলাদেশী হিসেবে বিপিএলে ষষ্ঠ শতক, তামিমের দুটি। স্বীকৃত টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ১০ ক্রিকেটার এ নিয়ে ১৪টি সেঞ্চুরি পেলেন, তামিমেরই ৪টি এবং ২টি নাজমুল হোসেন শান্তর। সর্বশেষ গত বছর ডিপিএল টি২০-তে সেঞ্চুরি হাঁকান মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান। এছাড়া ২০১৩ সালে বিজয় দিবস টি২০ কাপে বিজয়, বিপিএলে নাফীস, মোহাম্মদ আশরাফুল, সাব্বির রহমান, নাইম শেখ ও পারভেজ হোসেন ইমন সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। তামিম শেষ পর্যন্ত ৬৪ বলে ১৭ চার, ৪ ছক্কায় ১১১ রানে অপরাজিত থাকেন। তামিমের এই বিধ্বংসী ইনিংসে ১৭ ওভারেই ১ উইকেটে ১৭৭ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় ঢাকা। স্কোর ॥ সিলেট সানরাইজার্স ইনিংস- ১৭৫/৫; ২০ ওভার (সিমন্স ১১৬, বিজয় ১৮; কাইস ১/২৬, মাশরাফি ১/২৯)। মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা- ১৭৭/১; ১৭ ওভার (তামিম ১১১*, শাহজাদ ৫৩; আলাউদ্দিন ১/৩২)। ফল ॥ মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা ৯ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ তামিম ইকবাল (মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা)।
×