ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকি নিয়েই পারাপার

শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুর আরও বেহাল দশা

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২১ জানুয়ারি ২০২২

শতবর্ষী কালুরঘাট সেতুর আরও বেহাল দশা

সংবাদদাতা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম ॥ প্রায় শত বছর আগে নির্মিত কালুরঘাট সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল দুই দশক আগে। এর স্থলে নতুন সেতু নির্মিত না হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে যানবাহন। জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে কোন রকমে সেতুটিকে ব্যবহারে রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে এখন এ সেতুর দুপাশের কাঠের নিরাপত্তা পাটাতন পচে গেছে, পিচ উঠে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর কয়েকটি স্থানে নেই কাঠের পাটাতন ও লোহার বেষ্টনী। জরাজীর্ণ এ সেতুর এমন অবস্থায় শঙ্কিত যাত্রী সাধারণ। উভয় পাশের ডেক এবং লোহার বেড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেতু পারাপার অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। সার্বিকভাবে আরও বেহাল দশা। সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর দুপাশের কাঠের নিরাপত্তা বেষ্টনী পচে গেছে। লোহার পাতে ধরেছে মরিচা। এর মধ্যেই চলাচল করছে যানবাহন। যেসব স্থানে কাঠের পাটাতন নেই সেখানে কিছু কাঠের বিট লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, কালুরঘাট সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ১০ টনের বেশি ভারি যানবাহন চলাচলের ওপর। এরপরও জোড়াতালি দিয়ে ঠিকিয়ে রাখা হয়েছে এ সেতু। অবশ্য প্রকৌশলীরা বলছেন, সংস্কারের পর সেতুটি ১৫ টন পর্যন্ত ভার নিতে পারবে। সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটে যাত্রীবাহী ও ফার্নেস তেলবাহী ওয়াগণ ট্রেন চলাচল করে। একমুখী এই সেতু পার হওয়া নিয়ে বিড়ম্বনা পোহাতে হয় যাত্রী সাধারণকে। সরকারী চাকরিজীবী মোঃ সাঈদ জানান, সেতুটি বর্তমানে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। বিশাল অংশজুড়ে কাঠের নিরাপত্তা পাটাতন না থাকায় পায়ে হেঁটে সেতু পারাপারকারীরা দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। তিনি অবিলম্বে সেতুটি সংস্কার করা দরকার বলে মন্তব্য করেন। বৃহস্পতিবার সেতু পারাপারের সময় পথচারীরা নতুন সেতু নির্মাণ বিলম্ব হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত এই দুর্ভোগ শেষ হবে না। নতুন সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতিতেই যুগের পর যুগ চলে যাচ্ছে। এদিকে নতুন করে সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ায় কালুরঘাট বিদ্যমান (পুরনো) সেতু মেরামতের জন্য বুয়েট প্রকৌশলীদের দ্বারস্থ হয় রেলওয়ে। তাতে সাড়া দিয়ে বুয়েটের ৩ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ টিম কালুরঘাট সেতু পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল তাদের প্রস্তাব (প্রতিবেদন) রেলওয়ের কাছে দিয়েছে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আহসান জাবির। তিনি জানান, বুয়েটের প্রস্তাবনা পেয়েছি। এতে দ্রুত সময়ে সেতু সংস্কারের জন্য ১৯টি প্রস্তাবনা রয়েছে। এখন বুয়েটের এই প্রস্তাব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। কর্তৃপক্ষ (রেল মন্ত্রণালয়) অনুমোদন দিলে বুয়েটের প্রস্তাব অনুযায়ী কাজ করা হবে। ব্রিটিশ আমলে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামকে সংযুক্ত করতে ১৯৩০ সালে সেতুটি নির্মিত হয়। কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত প্রথম রেলসেতু এটি। ১৯৬২ সালে এই রেল সেতুটিকে একইসঙ্গে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়। সেতু চালু হওয়ার ৭১ বছর পর ২০০১ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেটি ঝুঁঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে।
×