ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবেশী যখন কাছের

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

প্রতিবেশী যখন কাছের

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সামাজিক রীতি, নীতি, শৃঙ্খলার মধ্যে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকাটাই এক প্রকার বন্ধন। সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকেই সমাজ নাম বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানটি চার পাশের মানুষদের তৈরি করা এক চমৎকার বলয়। যে আঙিনায় যুগ যুগ ধরে জনগোষ্ঠীর জীবন আবর্তিত ও বিবর্তিত হয়েছে। সেই আদিম বন্যদশায়ও মানুষ একসঙ্গে সমন্বিতভাবে নিজেদের পারিপার্শ্বিক পরিধি সহনীয় করে তুলত। সভ্যতা সূর্যের উদয় মানুষের সম্মিলিত যোগসাজশে এক অবধারিত ব্যবচ্ছেদে সমাজ-সংস্কারের যে ভিন্নতা নিয়ে আসে তাও যুগ ও কালের অপরিহার্য গতিপ্রবাহ। বর্তমানে যে সামাজিক প্রতিবেশে আমরা জীবনযাপন করি তা আধুনিক শিল্পোন্নত নতুন সমাজ ব্যবস্থা। পুরনো ব্যবস্থার নতুন সমীকরণে সম্পর্কের প্রকার ভেদও অন্য চিত্র ফুটে ওঠা সময়ের চাহিদা। নতুন সময়ের সামাজিক সম্পর্কগুলো কেমন যেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক। একক পরিবারের নবতর কাঠমোয় স্বামী-স্ত্রী-সন্তান মিলে যে ক্ষুদ্র আলয়টি সকলকে এক করে রাখে সেটা বৃহত্তর সমাজের তুলনায় ছোট একটি আঙিনা। আধুনিক সভ্যতায় নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে জীবনমান উন্নত হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু সামাজিক বন্ধন কিংবা সম্পর্কগুলো কেমন যেন আগলা হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন বহুতল ভবনে কোন এক ছোট ফ্ল্যাটে নিজের একান্ত আপনজনদের নিয়ে বসবাস করি। সময়টা এমন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই হয়ত কোন না কোন পেশায় নিয়োজিত। ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় তাদের। গৃহপরিচারিকার ওপর নির্ভর করতে হয় বিভিন্ন কাজে। সন্তান পালন থেকে আরম্ভ করে গৃহসজ্জা, রান্নাবান্না ছাড়াও খাওয়ার টেবিলে পরিবেশন করার দায়িত্বও নিতে হয় গৃহকর্মীকে। কর্তা এবং কর্ত্রীর মূল্যবান সময় কাটে কর্ম জগতে। বাকি স্বল্প সময় ব্যয় করতে হয় নিজের সন্তানদের যত্নআত্তিরে। প্রতিবেশীর খোঁজখবর নেয়ার সময়ও থাকে না। আবার পাশের বাড়ির গৃহকর্তা, কর্ত্রীরও একই অবস্থা। সন্তানদের দেখভাল করে সংসার সামলানোর পর তাদেরই বা অবসর কোথায় অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা। এটাই এখন প্রচলিত নিয়মশৃঙ্খলা। এরই মধ্যে ব্যতিক্রমি কিংবা ব্যত্যয় কিছু যে ঘটে না তা কিন্তু নয়। অভিভাবকদের অতিক্রম করে প্রতিবেশী শিশু-কিশোররা যে মাত্রায় আনন্দ আর উপভোগে মেতে ওঠে তাও দেখার বিষয়। দেখা যাচ্ছে ১৬ বছরের এক উদীয়মান তরুণ সখ্য তৈরি করছে ২, ৩ কিংবা দেড় বছরের কোমলমতি শিশুর সঙ্গে। সম্পর্কটা মনোমুগ্ধকর এবং দৃষ্টিনন্দন। রক্তের বাধন কিংবা আপন-পরের ভেদাভেদ ভুলে তারা নিমেষে একজন অন্যের গভীর মমতায় বাধা পড়ে। এটা মনে হয় অবোধ শিশু-কিশোরদের বেলায় যতখানি সম্ভব ব্যস্ততম বয়স্ক মানুষদের জন্য ততখানি সহজসাধ্য হয় না। সম্পর্ক তৈরি করতেও মনে হয় কোমল-নরম মানসিকতা জরুরী। যেখানে কোন ধরনের আঁচ কিংবা আঁচড় বসেনি। উন্মুক্ত সাদা মনের অকৃত্রিম বাধন তৈরি করার এক অভাবনীয় দক্ষতা ও সক্ষমতা। হাল্কা বয়সের উড়ন্ত মনে সম্পর্কের যে মধুরিমা তা যেন অতুলনীয় এক উপহার। যেমন শিশু-কিশোরদের জন্য একইভাবে অভিভাবকদের জন্যও। এভাবে কোন এক সময় বাবা-মায়েরাও সন্তানদের অকৃত্রিম বাধনের অনুষঙ্গ হতে হাত বাড়িয়েই দেন। শিশু-কিশোরের অবোধ ছেলে মানুষী হৃদয়ের সম্পর্কে কতখানি ভরিয়ে তোলে সেটাও মুগ্ধতার বিস্ময়। সমাজ-সভ্যতা থেকে প্রাচীনতম ঐতিহ্যের অনেক কিছু হারিয়ে গেছে শিল্প বিকাশের অবধারিত সমৃদ্ধ যুগে। আবার নিত্যনতুন সম্পর্ক তৈরিও যাপিত জীবনের পরম চাহিদা বললে খুব বেশি বলা হয় না। মানুষ মানুষের জন্য এমন অমৃতবাণী চিরায়ত এবং ঐশ্বর্যময়। জাগতিক বন্ধনের নিগূঢ়তায় তেমন অকৃত্রিম সৌহার্দ মায়ামমতায় পরিবেষ্টিত নির্মল পরিবেশ। এভাবেই ভিন্ন মাত্রার সম্পর্ক স্নেহাতিশর্যের এক পরিপূর্ণ আধার।
×