ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তালিকায় বর্তমানদের সঙ্গে সাবেকরাও আছেন

৭০ কারাকর্মকর্তা ও কর্মচারীর অর্থের খোঁজে দুদক

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

৭০ কারাকর্মকর্তা ও কর্মচারীর অর্থের খোঁজে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সাবেক ও বর্তমান কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থবিত্ত বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিশেষ করে যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সহযোগিতা করছে দুদকের কর্মকর্তাদের। দুর্নীতির লাগাম টানতে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিতে এগিয়ে চলছে এই অনুসন্ধান। এর প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক জেলার সোহেল রানা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার পর। কারাগারে সিট বাণিজ্য, বন্দী বাণিজ্য, খাবারের অনিয়ম, মাদক কারবারে অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে আছে তাদের সম্পদের তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। ২০১৯ সালে সোহেল রানা অবৈধ টাকাসহ গ্রেফতার হওয়ার পর ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপালসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা দুদকের জালে আটকানোর পর স্ব^রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে হার্ডলাইনে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় চলছে কারা কর্মকর্তাদের ওপর নজরদারি। এই অনুসন্ধান ও নজরদারিতে রয়েছেন সাবেক ও বর্তমান প্রায় ৭০ কর্মকর্তা কর্মচারী। দুদকের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করে বলেছেন, এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে কারাগার নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ। এরই অংশ হিসেবে কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে প্রায় তিন বছর যাবত। তবে কমবেশি সকল কারাগারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। এরমধ্যে তিনটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাহাড়সম। যার কারণে তারা নজরদারিতে রয়েছেন। যেসব কর্মকর্তা সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন তাও অসঙ্গতিপূর্ণ। তথ্য গোপন করেছেন বেশিরভাগ। তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে এ্যাকশন নেয়া শুরু হয়েছে। দুর্নীতিবাজ যেই হোক কাউকে যেন ছাড় দেয়া না হয়, এ বিষয়ে কড়া নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। নজরদারিতে রয়েছে পরিবারের সদস্যরা ॥ সিলেটের তৎকালীন ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপাল বণিককে চট্টগ্রামের সবাই চিনে টাকার কুমির হিসেবে। চট্টগ্রামে থাকতেই অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছিলেন পার্থ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটিও পার্থের দুর্নীতির বিষয়ে সত্যতা পায়। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে এবং যারা সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করেছেন তাদের স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যদের সম্পদের অনুসন্ধান করা হচ্ছে। কেননা যত কারা কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছিল কিংবা অভিযোগ ছিল তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ব্যাপক। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ এই স্লোগান কারাগারের ভিশন হলেও নানা অপকর্ম দুর্নীতির কারণে অপরাধে আখড়া কারাগারগুলো। এখনও সংশোধনাগার হয়ে উঠতে না পারায় অভিযোগের অন্ত নেই কারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। বন্দীদের নিরাপদ আটক নিশ্চিত করা, কারাগারের কঠোর নিরাপত্তা এবং তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করার বিধান থাকলেও তা বাস্তবতা ভিন্ন বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি বন্দীদের খাদ্য, চিকিৎসা এবং আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাত নিশ্চিত করা নিয়ম থাকলে তা টাকার বিনিময়ে করা হয় যা ওপেন সিক্রেট বিষয়। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনতে গ্রিন সিগন্যাল ॥ দুদকের সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত একাধিক উপ-পরিচালক জানিয়েছেন, কারাগারকে সংশোধনাগার না করে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন কতিপয় কারা কর্মকর্তা। আমাদের লক্ষ্য তাদের আইনের আওতায় আনা। মন্ত্রণালয় থেকেও গ্রিন সিগন্যাল। কেননা এসব কর্মকর্তাদের কারণে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। তাদের দুর্নীতির দায় কারা কর্তৃপক্ষ নেবে না। এজন্য অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে বিত্তবৈভবে ঠাসা যে কারা কর্মকর্তারা রয়েছেন, তাদের বিষয়ে কঠোর রয়েছে সরকার। তবে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের অর্থবিত্ত তাদের শ্যালক, শ্যালিকা এমনকি শ্বশুর শাশুড়ির নামেও সঞ্চয়পত্র, জমি, এফডিআর করে রেখেছেন। রাজধানীসহ মফস্বল শহরে নামে বেনামে জমি কিনে অবৈধ অর্জনের টাকা খাটানোর জন্য অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এমনকি ঢাকা চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালে যারা উর্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন এবং আছেন তাদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আদালতসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে জমা হয়েছে প্রতিটি অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই চলছে। সূত্র নিশ্চিত করেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালে দায়িত্বে থাকা যে সকল কারা কর্মকর্তার সঙ্গে তৎকালীন ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপাল এবং জেলার সোহেল রানার সখ্যতা ছিল তাদের সম্পদের অনুসন্ধান এবং এর বাইরে প্রায় ৩০ জনের বেশি অধস্তন কর্মচারীর নামে-বেনামে কী পরিমাণ সম্পদ আছে, কোন হিসাবে কত আছে জানার চেষ্টা করছে দুদক। পাশাপাশি বর্তমানে বেশ কয়েকজন সিনিয়র জেল সুপার, জেলার, ডেপুটি জেলার, সহকারী সার্জন, হিসাবরক্ষক, ক্যান্টিনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এবং কারারক্ষীর বিষয়ে জোর তদন্ত করছে দুদক। উল্লেখ্য, গত ২৯ নবেম্বর সাবেক জেলার মোঃ সোহেল রানা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদক আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারা মতে এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪ (৩) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক মোঃ আবু সাঈদ।
×