ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ডিসেম্বর শুরু হলো। বিজয়ের মাস। বরাবরই এ সময়টাতে নানা আয়োজনে মুখর হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকা। তবে এবারের ডিসেম্বর আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। বাঙালী এবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছে। সেই যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, অস্ত্র হাতে প্রাণপণ লড়াই, এক সাগর রক্ত, স্বাধীনতা পাওয়া, এই পাওয়ার, মহান অর্জনের ৫০ বছর। অর্ধ শতাব্দী ধরে বাঙালী নিজেই নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। এ সময়ের মধ্যে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মিলমিশ যেমন ঘটেছে, তেমনি আছে পার্থক্য। কিন্তু স্বাধীন পথচলার যে আনন্দ, প্রতিটি মানুষ তা ঠিকই উপভোগ করছে। সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে এসে তীব্র হয়েছে আবেগ। ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়ে গেছে উদ্যাপন। বুধবার ঢাকার হাতিরিঝিলে ১৬ দিনব্যাপী বিজয় উৎসবের উদ্বোধন করা হলো। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আয়োজন। ভার্চুয়ালি এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পর থেকে প্রতিদিনই এখানে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। খ্যাতিমান শিল্পীরা তাদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরছেন। অতীত ইতিহাসের আলোকে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হচ্ছে উন্মুক্ত মঞ্চ থেকে। ক্রমে মঞ্চের সংখ্যা বাড়বে। প্রায় প্রতিটি মঞ্চ থেকে গাওয়া হবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান। দেশাত্মবোধক ও জাগরণী গানগুলো বার বার শোনা হবে। লাল সবুজের পতাকা উড়বে সবখানে। ঢাকার উঁচু ভবন, সড়কদ্বীপ আলোকসজ্জা করা হবে। আর ১৬ ডিসেম্বর প্যারেড স্কোয়ার ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় থাকবে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী। এসব অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যোগ দেবেন। এখন চলছে জোর প্রস্তুতি। তবে দুঃখ এই যে, এসব আনুষ্ঠানিকতায় যতটা মন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ চর্চার বেলায় ততটা দেখা যায় না। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ ইতিহাস থেকে বিচ্যুত। দূরে সরে যাচ্ছে। পরাধীনতার গ্লানি, একাত্তরের বেদনা বা যুদ্ধ জয়ের গৌরব অনুভব করতে পারে না। তাই প্রায়শই ভুল করে চলেছে। সর্বশেষ, ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তানী পতাকা উড়াল রাজাকার আলবদরদের প্রজন্ম। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা মাটির ওপর দাঁড়িয়ে এমন অন্যায়! অথচ ইতিহাস অজ্ঞ তরুণদের একাংশ এদেরই সমর্থন দিয়েছে। এ অবস্থায় সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসব নয় শুধু, উপলব্ধির জায়গাটুকু পরিষ্কার করা জরুরী। সে তাগিদেই উদ্যাপিত হোক বিজয়ের ৫০ বছর। নাট্যোৎসব শুরু হচ্ছে শিল্পকলায় ॥ আজ শুক্রবার থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হচ্ছে ১১ দিনব্যাপী নাট্যোৎসব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় এ উৎসবের আয়োজন করছে। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তন ও পরীক্ষণ থিয়েটার হলে উৎসবের নাটকগুলো মঞ্চায়ন করা হবে। তার আগে আজ বিকেলে নন্দনমঞ্চে উৎসব উদ্বোধন করবেন স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রায় অসামান্য ভূমিকা রাখা ৫০ বীর মুক্তিযোদ্ধা সংস্কৃতিজন। এছাড়া উৎসবের বিভিন্ন দিনে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ১৪টি নাট্যদল বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নাটক মঞ্চায়ন করবে। একই সময় জাতীয় নাট্যশালার লবিতে চলবে পাভেল রহমানের ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। থাকবে গত ৫০ বছরের নাটকের পোস্টার ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনী। সব মিলিয়ে সরগরম থাকবে শিল্পকলা একাডেমি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কোন পথে ॥ গত ক’দিন ধরেই রাস্তায় শিক্ষার্থীরা। স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় নেমে গাড়ির কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এর মধ্য দিয়ে মূলত প্রতিবাদটাই করছে তারা। সহপাঠীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। এমন নির্মম মৃত্যু মেনে নেয়া যে কারও পক্ষে কঠিন। শিক্ষার্থীরা তাই প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে। কিন্তু যখন তারা মাঠে তখন রাজনীতির লোকেরা বড় একটি ইস্যু খোঁজায় ব্যস্ত। মরিয়া। বিশেষ করে ওই যে নুরু গং, যারা মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে ফেলেছিল, সেই কুচক্রীরা রাতভর ফেসবুকে তৎপর। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এরা যথারীতি ঢুকে গেছে। আন্দোলনটাকে ভুল পথে পরিচালিত করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীরা যেভাবে রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে তাতে আর বড় কোন ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যেখানে সেখানে যখন তখন সমাবেশের কারণে গোটা শহরে যানজট বেঁধে যাচ্ছে। মানুষ এখনও হয়ত প্রতিবাদটাকেই সম্মান করছে। কিন্তু দিনের পর দিন তো এই দুর্ভোগ কেউ মেনে নেবে না। তখনই বাধতে পারে বিপত্তি। শিক্ষার্থীদের এ বিষয়গুলোও ভাবতে হবে। রাজনীতির শিকারে পরিণত হওয়ার আগে, সাধারণের ভালবাসা হারানোর আগেই ভাবতে হবে।
×