ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

চলছে প্রস্তুতি

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই একুশে বইমেলা

প্রকাশিত: ২২:১৯, ৩০ নভেম্বর ২০২১

ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই একুশে বইমেলা

মনোয়ার হোসেন ॥ বৈরী পরিস্থিতির কারণে ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল অমর একুশে বইমেলা। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবার চিরাচরিত নিয়মে ফেব্রুয়ারি মাসেই শুরু হবে ২০২২ সালের বইমেলা। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই যাত্রা শুরু করবে প্রাণের মেলা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে প্রতিপাদ্য করে অনুষ্ঠিত হবে ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে নিবেদিত এই বই উৎসব। সেই সুবাদে মেলার অঙ্গসজ্জায় ফুটে উঠবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের প্রতিচ্ছবি। মাসব্যাপী একটি সফল মেলা আয়োজনে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। বরাবরের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি আঙ্গিনায় অনুষ্ঠিত হবে মেলা। এবার সরাসরি মেলা আয়োজনের পাশাপাশি অনলাইনে মেলা আয়োজনের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ হলেও সেটি নাকচ করে দিয়েছে একাডেমি। তাই ভার্চুয়াল কোন মেলা নয় লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের সরাসরি অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে বইমেলা। গত বছরের মেলায় প্যাভিলিয়ন ও স্টল বিন্যাস নিয়ে প্রকাশকদের মধ্যে তৈরি হয়েছিল অসন্তোষ। বিশেষ করে সবগুলো প্যাভিলিয়নগুলো সব এক সারিতে থাকায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল মেলার কাঠামো বিন্যাস। ফলে পাঠকরাও ঘুরেফিরে প্যাভিলিয়নের দিকেই আনাগোনা করেছে। ফলে পাঠকবঞ্চিত হওয়ায় বিভিন্ন স্টল মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। তাই এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন ও স্টল বিন্যাসে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলা একাডেমি। স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিন্যাসে সামঞ্জস্য বজায় রাখা হবে। এছাড়া মেলার মধ্যে অযাচিতভাবে অতিরিক্ত ফুড স্টল না রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও মেলার নক্সা করবেন স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। মহামারীর উর্ধমুখী পরিস্থিতির মাঝে ২০২১ সালের মার্চ মাসে মেলা হওয়ায় প্রকাশকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরবর্তীতে মেলার সময় সূচী কমিয়ে আনায় ক্ষতি আরও দীর্ঘ হয়। এছাড়া ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া মেলা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময় ১৪ এপ্রিলের দুদিন আগে ১২ এপ্রিল সমাপ্তি টানা হয়। সার্বিক অবস্থার বিবেচনায় গত বছর প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে প্রকৃত মূল্যের অর্ধেক মূল্যে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। এবারও সেই হ্রাসকৃত মূল্যে স্টল বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন প্রকাশকরা । তবে স্টল ভাড়া কমিয়ে ভর্তুকি দিতে রাজি নয় বাংলা একাডেমি। এ বিষয়ে একাডেমির ভাষ্য, গত বছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে স্টলের ভাড়া কমানোর জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। এবার তেমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি মন্ত্রণালয়। তাই আগে ভাড়াতেই স্টল বরাদ্দ নিতে হবে প্রকাশকদের। মেট্রোলের প্রকল্পের কারণে গতবার মেলার দুই প্রবেশ আঙ্গিনা শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত প্রবেশপথ অনেক বেশি সঙ্কুচিত ছিল। এই প্রকল্পের অগ্রগতির সঙ্গে এবার মেলার প্রবেশের পথও প্রশস্ত হবে। শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত আগের চেয়ে চওড়া সড়ক পাবেন দর্শনার্থীরা। অন্যদিকে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত মেট্রোরেলের নিচের অংশ পরিষ্কার থাকবে। ফলে এই অংশে চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে পাবেন মেলায় আগন্তুকরা। গ্রন্থমেলার সার্বিক বিষয়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক বইমেলার সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, একুশে বইমেলাকে সফল করার লক্ষ্যে আমরা সেপ্টেম্বর থেকে কাজ করেছি। এবারের প্রতিপাদ্য বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। গত বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে এবার স্টল বিন্যাসে বিশেষ নজর দেয়া হবে। প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্যাভিলিয়ন ও স্টল বিন্যাসের রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে। মেলায় দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যে প্রবেশ ও বহির্গমনের সুবিধার্থে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়েছে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বল অংশটুকু তারা যতটা সম্ভব পরিষ্কার করে দেয়ার কথা জানিয়েছি। এই রাস্তাটি দুই দিক থেকে উন্মুক্ত থাকবে। অন্যদিকে শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত পর্যন্ত সড়কটিও পূর্বের চেয়ে প্রশস্ত হবে। প্রকাশকদের স্টল ভাড়া কমানোর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত বছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে স্টল ভাড়ার অর্ধেক প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার মন্ত্রণালয় থেকে তেমন কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। এই বাস্তবায় বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ভাড়াই নির্ধারিত করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আপাতত স্টলের ভাড়া কমাার সুযোগ নেই। এছাড়া এবার কোন প্রকাশনা সংস্থার স্টল বর্ধিত করা হবে না। বইয়ের মেলায় খাওয়ার দোকানের ছড়াছড়ি প্রসঙ্গে বলেন, এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দৃষ্টিকটুভাবে খাদ্যের দোকান বা ফুড স্টল রাখা হবে না মেলায়।
×