ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ২২ অক্টোবর ২০২১

সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন ॥ প্রধানমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের ধারাবাহিকতা থাকার কারণে বাংলাদেশের আজকের এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আগামীতেও দেশের উন্নয়ন এবং অর্জন অব্যাহত থাকবে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলেও বাংলাদেশ বাণিজ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না, বরং আরও অনেক বেশি সুবিধা অর্জন করা সম্ভব হবে। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ আয়োজনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত হন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এবং ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যাান এ এইচ এম আহসান প্রমুখ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের উন্নয়ন দর্শন তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। ‘২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে এই ২০২১ সাল পর্যন্ত সরকারে আছি বলেই প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নটা আমরা পরিকল্পিতভাবে করতে পেরেছি। যার জন্য আজকে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের মর্যাদাটা পেয়েছে। এটাই আমাদের বড় একটা অর্জন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্য আমি বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই, কৃতজ্ঞতা জানাই। যারা আমাদের প্রতি নির্বাচনে সহযোগিতা করেছেন, সমর্থন দিয়েছেন, ভোট দিয়েছেন তাদেরও আমি ধন্যবাদ জানাই। দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিøউটিও) নিয়মনীতির আওতায় যেসব বিকল্প সহায়তা পাওয়া যাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সেগুলো আমরা নেব, নিতে পারব। কাজেই আমার মনে হয় এখানে কোন অসুবিধা হবে না। সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার থেকেও সুবিধা অর্জন করতে পারব আরও অনেক অনেক বেশি। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে আমাদের সেই রকম প্রস্তুতি থাকতে হবে। তিনি বলেন, করোনার এই দেড় বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়লেও বাংলাদেশের অর্থনীতি ভাল অবস্থানে রয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়ার ফলে করোনা পরিস্থিতি বেশ ভালভাবে সামাল দেয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকের হয়তো একটু সন্দেহ থাকতে পারে, উন্নয়নশীল দেশ হলে বোধ হয় অনেক সুবিধা বঞ্চিত হব। সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার থেকেও সুবিধা অর্জন করতে পারব আরও অনেক অনেক বেশি। সুবিধা অর্জন করার সুযোগটা বড় বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেখানে আমরা আরও সুযোগ পাব রফতানি স¤প্রসারণ করতে দেশের বিনিয়োগ স¤প্রসারণ করতে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাইরে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও সরকার তৈরি করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনেক দেশে আমরাও বিনিয়োগ করতে পারি। আমাদের ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন। বেসরকারী খাতও বিনিয়োগ করতে পারবে। আমি ভবিষ্যতে সেই সুযোগটাও সৃষ্টি করব। তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বিদেশে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমান আইনে বাংলাদেশের কোন কোম্পানি চাইলেই বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে শর্ত সাপেক্ষে বিনিয়োগ করতে হয়। ২০১৫ সালে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন-সংশোধন করে এই সুযোগ তৈরি করা হলেও সেখানে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত রাখা হয়নি। এ পর্যন্ত ১৭টি কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করছে। এসব কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৫১১ কোটি টাকা। বিদেশে বিনিয়োগ সহজ করতে এরই মধ্যে একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে সরকার। সব পক্ষের মতামত নিয়ে তা চ‚ড়ান্ত করার কথা। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দেশে যেমন বিনিয়োগ হবে, আমরাও অন্য দেশে যেন বিনিয়োগ করতে পারি। কারণ আমরা তো উন্নয়নশীল দেশ হয়ে গেছি। কাজেই আমাদের শিল্প উদ্যোক্তারা নিজের দেশে না, বিদেশে বিনিয়োগ করেও সেই পণ্য সেখানে বাজারজাত করা বা আমাদের চাহিদা মতো নিয়ে আসা- সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করতে চাই এবং সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিতে চাই। এক্ষেত্রে বাণিজ মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ভ‚মিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়েই কিন্তু উন্নতি হয়। কাজেই সেই ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগটা সৃষ্টি করা, যার জন্য এই সেন্টারটা (বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার) আমরা তৈরি করেছি। ঢাকার অদূরে পূর্বাচল উপশহরের কাঞ্চন ব্রিজের কাছে ২০ একর জমির ওপর এই এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায়। সেজন্য চীন সরকার এবং সেদেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৬তম আসর আয়োজনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত পূর্বাচলে নির্মিত এক্সিবিশন সেন্টারটি। পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোশাক তো আছেই। এর পাশাপাশি রফতানি বাজারে টিকে থাকতে ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের বলব, যখনই আপনারা কোন পণ্য উৎপাদন করবেন, সময়ের চাহিদার সাথে মিলিয়ে, বা যে দেশে করছেন, সেখানকার চাহিদার সাথে মিলিয়ে উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন করতে হবে। সেখানে কিন্তু কিপটামো করলে চলবে না। সেটা যদি করতে পারেন, তাহলে বাজারে টিকে থাকতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শিল্প খাতের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের নিজস্ব উদ্যোগও থাকতে হবে। তিনি বলেন, আপনারাও এটাই চেষ্টা করবেন যেন আমাদের পণ্যের আরও বহুমুখীকরণ করা যায়। রফতানির বাস্কেটটা আরও বৃদ্ধি করা এবং কোন ধরনের পণ্য কোন দেশে আমরা রফতানি করতে পারি সেই বিষয়টার ওপর আরও গুরুত্ব দেয়া এবং সেইভাবে পণ্য উৎপাদনে ব্যবস্থা নেয়া।তিনি বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস বিশেষ করে আইসিটি পণ্য রফতানিতে আরও নজর দেয়া প্রয়োজন। সারাবিশ্বে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। শেখ হাসিনা বলেন, নতুন বাজার অনুসন্ধান করে তাদের চাহিদা মতো পণ্য তৈরি রফতানির উদ্যোগ বাড়াতে হবে। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি ব্যাপক কর্মকাÐ শুরু করে দিয়েছিলেন। তিনি ১৯৫২ সালে গণচীন সফর করেন এবং সেই দেশ কিভাবে অর্থনীতি গড়ছে সেটি তিনি দেখে এসেছিলেন। শুধু তাই নয় মা যেমন সন্তান লালন পালন করে থাকেন ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু রুগ্ণ শিল্পকারখানা বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেয়া হচ্ছে। এখানে দেশী উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারবেন। এবার বাণিজ্যমেলা পূর্বাচলে \ আগামী ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা ঢাকার পূর্বাচলের এক্সিবিশন সেন্টারে হতে যাচ্ছে। বাণিজ্যমেলার ২৬তম আসর পূর্বাচলে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজন করা হবে। বিগত বছরগুলোতে শেরেবাংলানগরে অস্থায়ী মাঠে মেলার আয়োজন করার ফলে স্টল-প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করতে গিয়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করতে হতো। এছাড়া শেরেবাংলা নগর, আগারগাঁও, শ্যামলীসহ আশপাশের সড়কগুলোতে মাসজুড়ে যানজটসহ অন্যান্য সমস্যায় আগামীতে আর কষ্ট পেতে হবে না নগরবাসীকে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, ২০০৭ সালে এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণের জন্য চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম ডিজাইন চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
×