ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে নালায় তলিয়ে এবার প্রাণ গেল ভার্সিটি ছাত্রীর

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

চট্টগ্রামে নালায় তলিয়ে এবার প্রাণ গেল ভার্সিটি ছাত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মহানগরীর নালা নর্দমা ও খালগুলো যেন মৃত্যুক‚পে পরিণত হয়েছে। স্রোতে ভেসে এক সবজি বিক্রেতা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার একমাস না যেতেই আবার বলি হয়েছেন এক ভার্সিটি শিক্ষার্থী। শেহরীন মাহমুদ সাদিয়া নামের এ মেয়েটি সোমবার রাতে চশমা কিনে মামা ও নানার সঙ্গে বাসায় ফেরার পথে নিখোঁজ হন নালায় পড়ে। প্রায় পাঁচঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় তার মৃতদেহ। মহানগরীর আগ্রাবাদ মাজারগেট এলাকায় ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। একের পর এক খালে ও নালায় পড়ে নিখোঁজ ও মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন নগরবাসী। মঙ্গলবার বিকেলে তারা ওই এলাকায় সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে। সোমবার রাত সোয়া দশটার দিকে চোখের পরীক্ষা শেষে আগ্রাবাদ এলাকার শাহজালাল চশমা মার্কেট থেকে চশমা কিনে বাসায় ফিরছিলেন সাদিয়া (১৯)। তার সঙ্গে ছিলেন মামা ও নানা। বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। ফুটপাথ ছিল পিচ্ছিল। ড্রেনের মুখ অনাবৃত। এছাড়া ওই এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলায় সড়কের অবস্থাও খারাপ। তাছাড়া ছিল না সড়কবাতি। অপর্যাপ্ত আলোতে অসতর্কতায় সাদিয়া পড়ে যান ড্রেনে। বৃষ্টি হওয়ায় সেখানে ছিল পানির স্রোত। মেয়েটিকে উদ্ধারে তাৎক্ষণিকভাবে লাফিয়ে নামেন তার মামা ও নানা। কিন্তু প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টার পরও হদিস মেলেনি। কিছুক্ষণ পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। প্রায় পাঁচঘণ্টার চেষ্টায় রাত তিনটার দিকে সাদিয়াকে উদ্ধার করা হয় দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত ৫০ ফুট দূর থেকে। হতভাগ্য মেয়েটি সীতাকুণ্ডের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার মামা জাকির হোসেন বলেন, আমার ভাগনি সাদিয়া কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল। সোমবার রাতে চোখের ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফেরার পথে আগ্রাবাদ মাজার গেট এলাকার সড়কে পাশেই নালায় পড়ে যায়। আমি ও আমার বাবা (হাজী জামাল) দুজন লাফিয়েও নালায় নেমেছি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাকির হোসেন বলেন, তার খোঁজ পাইনি। পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে ভাগনি। সেখানে রেলিং কিংবা বড় স্লাব বসালে এমন ঘটনা ঘটত না। সাদিয়া হালিশহর থানার বড়পোল এলাকার মইন্যাপাড়ার মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। মোহাম্মদ আলী ও শেলী আক্তারের চার ছেলেমেয়ের মধ্যে সাদিয়া সবার বড়। ঘটনাস্থলে যাওয়া চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাশ বলেন, আমাদের ডুবুরি দল সাড়ে ৪ ঘণ্টা তল্লাশির পর তার নিথর দেহ উদ্ধার করে। ওই নালা থেকে আবর্জনা অপসারণের পর তার খোঁজ মেলে রাত ৩টার দিকে। প্রচুর স্রোত ছিল। তাই ডুবুরিরা উদ্ধার কাজ করতে পারছিল না। পরে আবর্জনা অপসারণ করে নিখোঁজ হওয়ার ওই স্থান থেকে ৩০ গজ দূরে ওই নালা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে নালায় তলিয়েছে ৭ ॥ নগরীতে ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নালায় পড়ে তলিয়েছে সাতজন। এরমধ্যে গত ২৫ আগস্ট মুরাদপুর এলাকায় নালায় পড়ে প্রবল স্রোতে তলিয়ে যান সালেহ আহমেদ। একমাস পার হলেও তার সন্ধান মেলেনি। সালেহ আহমেদের মৃত্যুর পর চসিক জানিয়েছিল, জলজটে নাকাল হওয়া নগরীর নালায় ম্লাব বসানো হবে। এর আগে চলতি বছরের ৩০ জুন নগরীর চশমা হিল এলাকায় খালের পাশের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় খালে পড়ে যায় একটি সিএনজি অটোরিক্সা। সেখানে মারা যান চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগম (৬৫)। এর আগে ২০২০ সালের ২২ জুলাই মহেশখালে পড়ে মারা যায় ঝুমা ও মুন্নী আকতার নামে দুই স্কুলছাত্রী। বৃষ্টির সময় একজন পা পিছলে খালে পড়ে গেলে তাকে বাঁচাতে গিয়ে দ্বিতীয়জনও খালে পড়ে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যান। ২০১৭ সালের ২ জুলাই এম এম আলী সড়কে রয়েল গার্ডেন কমিউনিটি সেন্টারের পাশে নালায় পড়ে তলিয়ে যান সাবেক সরকারী কর্মকর্তা ৬২ বছর বয়সী শীলব্রত (৬২)। পরদিন অনেক দূরে মিয়াখান নগরীর চাক্তাই খালে তার লাশ পাওয়া যায়।
×