ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কটে তালেবান

প্রশাসন চালানোর লোক নেই

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রশাসন চালানোর লোক নেই

উগ্রবাদী সংগঠন তালেবান গত মাসে কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর বিভিন্ন নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে একটি তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠন করে সংগঠনটি। ওই সরকারে কোন নারীকে রাখা হয়নি। তালেবান মন্ত্রিসভা গঠনের আগে কয়েকটি মন্ত্রণালয় বিলুপ্ত করে নতুন নামকরণ করে। বিলুপ্ত করে দেয়া মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এখন ওই মন্ত্রণালয়ের নাম রাখা হয়েছে ‘নৈতিকতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়’। অর্থাৎ আফগানিস্তানে এখন থেকে তালেবানের বলে দেয়া নির্দেশনা অনুসারেই নির্ধারিত হবে নীতি- নৈতিকতা। তালেবানরা এমন বহু পরিবর্তন আনলেও, এখন পর্যন্ত এসব পরিবর্তন শুধু কাগজে-কলমে আর সাইনবোর্ড পাল্টানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। -খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন অনলাইনের। কারণ সরকার চালাতে যে দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী দরকার তা নেই তালেবানের। তাদের কাছে দক্ষ যোদ্ধা থাকলেও, সরকার চালানোর মতো লোক নেই। তালেবান সরকার গঠনের নীতির ক্ষেত্রে শরিয়াহভিত্তিক কাঠামোর চর্চা করলেও, গত বিশ বছরে আফগানিস্তানে গড়ে উঠেছে পশ্চিমা কায়দার সরকার। আফগানিস্তানে এখন আর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা নেই, কিন্তু তাদের কাঠামো রয়ে গেছে। এই কাঠামো চালাতে দরকার ওই কাঠামোতে প্রশিক্ষিত জনবল। যেমন কাবুলের তিনশ’ শয্যার পুলিশ হাসপাতালে যারা আগে কর্মরত ছিলেন তাদের সবাইকেই বহিষ্কার করেছে তালেবান। কিন্তু হাসপাতালের মতো জরুরী সেবা চালানোর মতো লোক নেই তাদের হাতে। ইতোমধ্যে সমালোচনার শিকার হয়েছেন আফগান হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পীকার মীর রহমান রাহমানি। সোমবার তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আফগানিস্তানে বেকারের সংখ্যা অনেক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া বা বিলুপ্ত করার মধ্য দিয়ে এই সঙ্কট আরও কঠিন হয়ে উঠছে। সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। সরকারের অবহেলায় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হতে থাকলে বেকারত্ব সমস্যা আরও প্রকট হবে।’ শুধু অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো পরিচালনা ছাড়াও দেশের বাইরে ক‚টনৈতিক মিশনগুলোও চালাতে পারছে না তালেবানরা। ইতোমধ্যে একাধিক মিশন তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। অধিকাংশ মিশনই এখন তাদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিচ্ছে না। দেশটির শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে এখন বিশ শতাংশের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। যারাও আছেন তারা গত কয়েক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। ফলে নিকট ভবিষ্যতে তাদের পক্ষেও আর পকেটের টাকা খরচ করে প্রশাসন চালানো সহজ হবে না। এর মধ্যেই মঙ্গলবার সরকারের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেছে তালেবান। এদিনে ডেপুটি মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এবারও কোনও নারীকে মন্ত্রিসভায় যুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সতর্ক করে দিয়ে বলে আসছে, তালেবানকে বিচার করা হবে তাদের কাজ দিয়ে। আর তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বীকৃতির বিষয়টি নির্ভর করবে নারী ও সংখ্যালঘুদের সঙ্গে তাদের আচরণের ওপর। ১৯৯০ এর দশকে তালেবানের পুরনো শাসনামলে নারী ও মেয়ে শিশুদের স্কুল, কলেজ, কাজে যোগ দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়। মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের পর তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদেরও যুক্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, হাজারা জনগোষ্ঠীর সদস্যও মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। ভবিষ্যতে হয়তো নারীরাও যুক্ত হবেন। তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার আহŸান জানিয়ে মুজাহিদ বলেন, ‘আমাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার দায়িত্ব জাতিসংঘ এবং অন্য দেশগুলোর। ইউরোপিয়ান, এশিয়ান এবং ইসলামিক দেশগুলোর উচিত আমাদের সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা। মেয়েদের স্কুলে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তালেবান নেতৃত্ব বিষয়টি ভাবছে। আফগান মেয়েরা ফের স্কুলে যেতে পারবে।
×